রবাসে থেকে চাঁদপুরের যেসব মানুষ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা করছেন তাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় অন্যতম। চাঁদপুরে থাকা অবস্থায় তিনি সাহিত্য ও নাট্যচর্চার সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন।
লিখতেন কবিতা, গল্প ও প্রবন্ধ। পাশাপাশি আবৃত্তি, মঞ্চ, সঙ্গীতের সাথে সক্রিয় যুক্ত ছিলেন। জীবন ও জীবিকার টানে দূর প্রবাস সৌদি আরব গেলেও থেমে থাকে নি তার সাহিত্য ও সংস্কৃতি চর্চা।
বর্তমানে তিনি রিয়াদ বাংলাদেশ থিয়েটার, প্রবাসী চাঁদপুর শাহরাস্তি ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন। সৌদি আরবে প্রবাসী বাঙালিদের আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে মঞ্চ অভিনয় ও গান পরিবেশন করতে দেখা যায়। পেশাগত জীবন ও সংস্কৃতি চর্চার বাইরে হৃদয় জড়িত আছেন মোহনা টিভি, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ, পাক্ষিক প্রবাস মেলা, এমকে টেলিভিশনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাথে।
জাহাঙ্গীর আলম হৃদয়ের জন্ম চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার পৌর ১১নং ওয়ার্ডের কৃষ্ণপুর পাটোয়ারী বাড়িতে। কিন্তু তার সংস্কৃতি চর্চার হাতেখড়ি হয় চট্টগ্রামে।
এ সম্পর্কে জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় বলেন, আমার বাবার কর্মস্থল চট্টগ্রামের নাসিরাবাদে ছিলো। সেখানে থাকতেই আমি শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতি অন্যরকম টান অনুভব করি। ১৯৯৪ সাল থেকে আমি শিল্প চর্চায় নিজেকে নিয়োজিত করি। প্রথমে চট্টগ্রামের বিভিন্ন মঞ্চে অভিনয় করা শুরু করলাম। পরে চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত বিভাগের সাথে যুক্ত হই। আবৃত্তি খুব ভালো লাগতো। চট্টগ্রামে থাকতে দৈনিক আজাদিতে ছড়া, কবিতা লিখতাম। সেই ভালো লাগাটুকু এই প্রবাস জীবনেও এসে ধরে রেখেছি। এখনো দেশে ও সৌদি আরবের বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করি।
জাহাঙ্গীর আলম হৃদয় চট্টগ্রামের সমীকরণ থিয়েটার, ঢাকা রাজধানী থিয়েটারের সাথে যুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে শাহরাস্তি এসে তিনি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শাহরাস্তি অপরূপা নাট্যগোষ্ঠী ও অপরূপা শিশু থিয়েটার। এ সম্পর্কে তিনি বলেন, আমি শাহরাস্তি এসে হঠাৎ অনুভব করলাম এ উপজেলায় কোনো সাংস্কৃতিক সংগঠন নেই। শিশুদের নিয়ে কাজ করার মতো সংগঠনও ছিলো না। তখনই আমি একক প্রচেষ্টায় দুটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করি। তখন কেবল সরকারিভাবে শিশু একাডেমি ছিলো, তাদের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ছিলো না। আমরা বিভিন্ন সময়ে ইউনিসেফ, ব্রাক, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, পল্লী উন্নয়ন বোর্ড, গ্রামীণ প্রকল্প, স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করি। এর মধ্যে শাহরাস্তি উপজেলা জুড়ে নাটিকা প্রদর্শন, স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধিতে মঞ্চনাটক, শিক্ষার উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহ প্রদান ও সচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রমই ছিলো প্রধান। চাঁদপুরের মাসব্যাপী বিজয় মেলাতে আমরা নাট্য প্রদর্শন করতাম। এ জন্যে আমি নাটক লিখতাম ও নির্দেশনা দিতাম। এজন্যে চাঁদপুরের অন্যতম সাংস্কৃতিক সংগঠন চতুরঙ্গ ২০০৭ সালে শ্রেষ্ঠ নাট্য সংগঠক হিসেবে সম্মাননা প্রদান করে।
সংস্কৃতি চর্চা নিয়ে আক্ষেপও কম নয় এ সংগঠকের। তিনি বলেন, শাহরাস্তিতে দুটি সংগঠন পরিচালনা করতে গিয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি আমাকে হতে হয়েছে। সংগঠনের অর্থের জোগান দিতে হিমশিম খেয়েছি। কেউ তেমন একটা সহযোগিতা করে নি। নিজস্ব অর্থায়নে যা পেরেছি তাই করেছি। যতদিন চাঁদপুরে ছিলাম সংগঠনটির কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে চেষ্টা করেছি।
প্রবাস জীবন ও সংস্কৃতি চর্চা সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০০৮ সালে প্রবাসে মূলত জীবিকার টানে এসেছি। কিন্তু সংস্কৃতি চর্চা আমার হৃদয়ের খোরাক। এখানে বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। প্রবাসীদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গাই গাই। আমি উপভোগ করি।
এখন স্বপ্ন দেখি দেশে ফিরে এসে আবার সংগঠন করবো। সংস্কৃতিমনা প্রজন্ম সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবো। আমি জানি, মাদক-সন্ত্রাস-দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠনে সংস্কৃতি চর্চার বিকল্প নেই।
করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৯: ২০ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৭, রোববার
ডিএইচ