এবারের বন্যা বিরাট আকারে আসবে—এ বিষয়ে আগেই সতর্ক করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনেক আগে থেকে সতর্ক করেছিলাম। আমাদের সরকারে যারা, তাদের সবাইকে আমি বলেছিলাম, এবারের বন্যা কিন্তু বিরাট আকারে আসবে। কাজেই আগে থেকে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমাদের প্রস্তুতি কিন্তু আছে। এই পানি যখন নামবে, শ্রাবণ থেকে ভাদ্র পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল প্লাবিত হবে। আমরা যদি বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ দীর্ঘদিন থেকে দেখি, তাহলে এটাই হচ্ছে নিয়ম। মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি।’
আজ রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের শাপলা হলে সাফ চ্যাম্পিয়ন ২০২১ বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী জাতীয় ফুটবল দলের সংবর্ধনা ও আর্থিক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
বন্যার পানি সুনামগঞ্জ থেকে নামতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘সুনামগঞ্জ থেকে পানি আজকে থেকে নামতে শুরু করেছে। কিন্তু পানি যখন নামবে, তখন আমাদের অন্যান্য অঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করবে—এটা আমাদের প্রাকৃতিক নিয়ম। কাজেই আমাদের ময়মনসিংহ, রংপুর বিভাগেও সম্ভাবনা আছে, সেটা আগে থেকেই সতর্কতা আমরা দিচ্ছি এবং সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য যা যা করণীয়, আমরা সেটাও করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, যদিও এখন একটা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি। একদিকে করোনার প্রাদুর্ভাব ধীরে ধীরে বাড়ছে, অন্যদিকে এটা বর্ষাকাল, আষাঢ় মাস। আমাদের বিশেষ করে সিলেট বিভাগের সিলেট ও সুনামগঞ্জে ব্যাপক বন্যা হচ্ছে। এবারের বন্যাটা একটু বেশি, ব্যাপক হারে এসেছে। প্রতিনিয়ত খবর রাখছি সারা দিনই ছবি এবং এখন আমরা ত্রাণ ও উদ্ধারকাজসহ সব কাজ করছি। আমাদের প্রশাসন, আমাদের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, আমাদের অন্যান্য সব প্রতিষ্ঠানকে মানুষকে উদ্ধার করা, তাদের ত্রাণ দেওয়া—সব ব্যবস্থা দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দলের আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ প্রত্যেক নেতা-কর্মী নিজ নিজ এলাকায় নেমে গেছে, তারাও সহযোগিতা করছে। খাবার বিতরণ থেকে শুরু করে উদ্ধারের ব্যবস্থা নিচ্ছে। তা ছাড়া স্যালাইনের ব্যবস্থা, বিশুদ্ধ পানি, সেই সঙ্গে অন্যান্য যা দরকার হতে পারে আর পানি নেমে গেলে যে অসুবিধাটা আসতে পারে, তার জন্য প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।’
বন্যার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রকৃতির এই খেলা—এটা নিয়ে আমাদের বাঁচতে হবে। সেই সঙ্গে এই সংবর্ধনা যেহেতু আয়োজন করা ছিল, এটা আমরা করতে পেরেছি। আমরা পারি, দুর্যোগ মোকাবিলার ব্যবস্থা নিতে পারি, সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবন তো চলতে হবে। খেলোয়াড়দের সংবর্ধিত করতে পারলাম, সবাই বিভিন্ন এলাকা থেকে এসেছে। আমরা পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়েছি, শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে যাতে পরীক্ষা না হয়। পরবর্তীতে আমরা করব। বন্যা তো আমাদের চিরাচরিত, বিশেষ করে ১০-১২ বছর পর পর একটা বড় বন্যা বাংলাদেশে আসে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আগামী ২৫ তারিখে আমরা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব। আমি মনে করি পদ্মা সেতু এমন একটা সময়ে উদ্বোধন করতে যাচ্ছি, যেখানে একটা বন্যা একদিকে যখন শুরু হয়ে গেছে, সেই সঙ্গে এই বন্যা দক্ষিণাঞ্চলেও যাবে। আমার মনে আছে, আমি সবাইকে স্মরণ করাতে চাই, ’৯৮ সালে বাংলাদেশে সব থেকে ভয়াবহ বন্যা এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যা হয়। ঠিক সেই বন্যা শুরু হওয়ার আগেই কিন্তু যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করেছিলাম। সেটা উদ্বোধন করেছিলাম বলেই তখন সুবিধাটা হয়েছিল এই যে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে সব কাজ করা যাচ্ছিল। বন্যায় যেহেতু আমাদের নদী অত্যন্ত ভয়ংকর হয়ে ওঠে, খড়স্রোতা হয়ে ওঠে, যোগাযোগের সুবিধা থাকে না। কিন্তু সেই সময় আমাদের এই দক্ষিণ অঞ্চল প্লাবিত ছিল, উত্তর অঞ্চল থেকে আমরা সব সময় সহযোগিতা পেয়েছিলাম। সেই সময় বন্যা আমরা খুব সফলভাবে মোকাবিলা করেছিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তখন বন্যার কারণে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ইউএনডিপি বলেছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বলেছিল, এই বন্যায় ২ কোটি মানুষ না খেয়ে মারা যাবে। আমি বলেছিলাম, একটা মানুষকেও আমি না খেয়ে মরতে দেব না, আমরা দিইনি। ওই সেতুটা যখন আমরা উদ্বোধন করেছিলাম, আমাদের বন্যা মোকাবিলা অনেক সহজ হয়েছিল। ঠিক আমি জানি না আমার আজকে এই কথাটা মনে উঠল যে আমরা ২৫ তারিখে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করব ইনশা আল্লাহ। আমি মনে করি এটা আল্লাহর আশীর্বাদ হবে। কারণ আমরা দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগটা অব্যাহত রাখতে পারব। পণ্য পরিবহন, বন্যা মোকাবিলা, বন্যার সময় মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সহযোগিতা করার একটা বিরাট সুযোগ আমাদের আসবে।’
বার্তা কক্ষ, ১৯ জুন ২০২২