ফরিদগঞ্জের মানুরী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষার বিতর্ক যেন থামছেই না। এবার আলোচিত এ নিয়োগ পরীক্ষার সকল অনিয়ম ফাঁস করে দিয়ে পরীক্ষা বাতিল অথবা পুনঃপরীক্ষার দাবীতে অভিযোগ দায়ের করেছে দুই পরীক্ষার্থী। গত ১১ ও ১২ জুন মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও হাবিবুর রহমান নামে দুই পরীক্ষার্থী আলাদা ভাবে
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
হাবিবুর রহমান নামের পরীক্ষার্থী তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, ‘গত ১০ জুন অনুষ্ঠিত মানুরী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষায় আমি একজন প্রার্থী ছিলাম। নিয়োগ পরীক্ষার আগেই বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, জনৈকা নারী প্রার্থীর কাছ থেকে কয়েক লক্ষ টাকা গ্রহণের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অসাধু অবলম্বনের চেষ্টা করা হচ্ছে। তবুও দীর্ঘদিনের আইসিটি বিষয়ক কাজের অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস থেকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় লিখিত পরীক্ষার সময় বহিরাগত কয়েকজন লোক পরীক্ষার হলে প্রবেশ করে জনৈকা নারীকে অসদুপায় অবলম্বনে সাহায্য করে। পরবর্তীতে ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় আমি সফলভাবে পরীক্ষা শেষ করি। এরপর আমার ব্যবহারিক পরীক্ষার উত্তরপত্রের প্রিন্ট কপিটি জনৈকা নারীর নামে করে নেওয়া হয়। এর জন্য আমি প্রতিবাদ করায় তারা আর সেটা করেনি। তারা আরেকজন পরীক্ষার্থীর ব্যবহারিক উত্তরপত্রের প্রিন্ট কপিটি জনৈকা নারীর নামে করে নেয়। আমি এ অনিয়মের কিছু ভিডিও চিত্র ধারণ করতে গিয়ে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, যদি জনৈকা নারীর লিখিত ও ব্যবহারিক পরীক্ষা পুনরায় নেওয়া হয় তাহলে তিনি অকৃতকার্য হবেন।’ এ অবস্থায় তিনি উক্ত নিয়োগ পরীক্ষাটি পুনরায় নেয়ার দাবী জানান।
এদিকে মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ নামের আরেক পরীক্ষার্থী তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, নিয়োগ পরীক্ষার দিন মাদ্রাসা মাঠে পঞ্চাশের
অধিক মোটরসাইকেলসহ হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখে প্রথমে আমরা বিস্মিত ও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। লিখিত পরীক্ষা চলাকালীন সময় জানতে পারি যে, একই পরিবার থেকে চারজন
পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন এবং চারজনই একই সাথে পাশাপাশি টেবিলে বসে পরীক্ষা দেন। তাদের মধ্যে খালেদা নামে একজন পরীক্ষার্থীকে ওউ পরিবারের বাকি তিন সদস্য ও বহিরাগত কয়েকজন লোক এসে সহযোগীতা করেন। এক পর্যায়ে পরীক্ষক পরীক্ষার্থী খালেদাকে আলাদা পিছনের একটি টেবিলে নিয়ে বসান। পরবর্তীতে
পরীক্ষকের চোখের আড়াল হলে পরিবারের অন্য সদস্যরা (পরীক্ষার্থী) তাদের নিজ প্রবেশপত্রে প্রশ্নের উত্তর লিখে পরীক্ষার্থী খালেদাকে দিয়ে লিখতেও সহযোগিতা করেন। যাহা পরীক্ষক পরীক্ষার সময় শেষে উত্তরপত্র জমা নেওয়ার সময় নিজ হাতে সেই লিখিত প্রবেশপত্রসহ ধরে ফেলেন। তখন পরীক্ষক খালেদাকে পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন করার কারনে তাকে বহিস্কার করবে
বলেও ধমক দেন।
তিনি আরো উল্লেখ করেন, ব্যবহারিক পরীক্ষায় প্রথমে আমিসহ মোট চারজন অংশগ্রহন করি। আমাদের ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর ব্যবহারিক কাগজে/ উত্তরপত্রে আমাদের স্বাক্ষর গ্রহণ করে পরীক্ষকের সহকারি পরীক্ষকের
নিকট জমা দেন। তারপর আমাদের এই চারজনের মধ্যে দুইজন (আমি ও হাবিবুর রহমান) কে ব্যবহারিক পরীক্ষায় কৃতকার্য হলে ভাইবাতে ডাকা হয়। আমরা দুজন ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে আসার পরেও দেখি খালেদাসহ বাকি তিনজনের ব্যবহারিক পরীক্ষা চলতে থাকে। তখন আমরা (আমি ও হাবিবুর রহমান) দুজনসহ উৎসুক এলাকাবাসী পরীক্ষা রুমের জানালা দিয়ে ভিতরে তাকিয়ে দেখতে পাই যে, পরীক্ষকের সহকারি ও অত্র মাদ্রাসার একজন শিক্ষকসহ হাবিবুর রহমানের ব্যবহারিক কাগজ/ উত্তরপত্রটি
কম্পিউটার থেকে পুণরায় প্রিন্ট করে খালেদার স্বাক্ষর গ্রহণ করেন। যা আমরা দেখে প্রতিবাদ করি।
উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় এসব অনিয়ম দেখে পরীক্ষার্থী হাবিবুর রহমান ভিডিও করার সিদ্ধান্ত নেন এবং কিছু খন্ডচিত্র ও কিছু সংক্ষিপ্ত ভিডিও ধারন করেন। তখন স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী
ব্যক্তি হাবিবের মোবাইল ফোনটি কেঁড়ে নিয়ে মোবাইলে থাকা তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও প্রয়োজনীয় পড়ালেখাসহ পুরো মোবাইল ফোনটির মেমোরি ফরমেট করে দেন। এছাড়াও তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে ও বিভিন্নভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদান করে। আমি নিশ্চিত যে, যদি পরীক্ষার্থী খালেদার পুণরায় লিখিত, ব্যবহারিক ও ভাইবা পরীক্ষা নেওয়া হয় তাহলে তিনি অকৃতকার্য হবেন। এ অবস্থায় উক্ত নিয়োগ পরীক্ষায় উল্লেখিত অনিয়ম সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাতিল অথবা পরীক্ষাটি পুনরায় নেয়ার দাবী জানান।
উল্লেখ : গত ২১ ফেব্রুয়ারী স্থারীয় পত্রিকার বিজ্ঞাপনের আলোকে একাধিক প্রার্থী আবেদন করেন। এরমই মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ একটি চক্র কয়েক লক্ষ টাকা নিয়োগ বানিজ্যের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগ ওঠে। ওই সময়ে চাকরিপ্রার্থী শরীফ উল্লাহ জেলা প্রশাসক ও ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আগামী ১০ জুন শনিবার লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার প্রবেশপত্র না পেয়ে অধ্যক্ষের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করি। প্রতিবারই তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রবেশপত্র পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। এভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। অবশেষে ৮ জুন তিনি স্বীকার করেন, প্রবেশপত্র পাঠাননি। তাই বাধ্য হয়ে আমি অভিযোগ করেন।
প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ১৪ জুন ২০২৩