পর্দার আড়ালে থাকা একজন মানবতার ফেরিওয়ালা চাঁদপুরের ফিরোজ হাসান

সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয়ে এদেশে অসংখ্য তরুণ নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন। আত্মপ্রচার নয়, আত্মতৃপ্তিই যাঁদের মূল উদ্দেশ্য। মানবতার কল্যানে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া তেমনই একজন চাঁদপুরের ফিরোজ হাসান। অবশ্য এই নামে তাঁকে খুব বেশি কেউ চেনেন না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবাই তাকে চেনেন, ‘ফ্রি মোশান’ নামে। মূলত তিনি আপাদমস্তক একজন ভ্রমণপিয়াসু। বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ান দেশের নানা প্রান্তে- পাহাড়-পর্বত, বন-জঙ্গলে।

শুরুতে ভ্রমণকালে আশপাশের বিভিন্ন মনোরম দৃশ্য ভিডিও করে আপলোড দিতেন ফেসবুকে। ভ্রমণে আসা যাওয়ার মাঝে কোনো গরিব পথচারী, পথশিশু চোখে পড়লে তাদের সাহয্য করতেন।

একসময় চিন্তা করলেন, এসব সাহায্যে ঘটনা ভিডিও করে করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দিলে আরও অনেকে অনুপ্রাণিত হবেন। বর্তমান সময়ে মানুষ যেখানে প্রচুর অর্থ-সম্পত্তির মালিক হয়েও তৃপ্ত নন, তাদের কেবল আরো চাই, আরো চাই ক্ষুধা, সেখানে সমাজের ভাগ্যহত এইসব মানুষদের অল্পতেই খুশি করা যায়। যাদের চাহিদাও খুব বেশি নয়।

এমন চিন্তা থেকেই মানবিক সেবার দৃশ্যগুলো ক্যামরাবন্দি করে তা সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড শুরু করেন। আর এসব ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে এদেশের হতাশাগ্রস্থ তরুণ প্রজন্ম। তার প্রতিটি ভিডিও লক্ষ লক্ষ মানুষ দেখছেন, সেয়ার করছেন।

এ নিয়ে ফিরোজ হাসান বলেন, ‘আমি খুব ট্রাভেল করি, বাইক নিয়ে এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়াই; আর আসা-যাওয়ার মাঝে যতটুকু পারা যায় গরিব মানুষদের সাহাঘ্য করতাম। এক সময় মনে হলো আমার এ কাজ যদি ভিডিও করে সোশ্যাল মিডিয়ায় দেই, হয়ত আরও অনেকেই অনুপ্রাণিত হবে, তারাও তেমন কাজ করবে। সেই চিন্তা থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ভিডিও শুরু করি।’

ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, বাইক নিয়ে কোথাও যাওয়ার পথে ফুল বিক্রেতা ছোট্ট শিশুরা দৌড়ে এলে তাদের থেকে বিশ টাকা মূল্যের ফুল নিয়ে বিনিময়ে দিচ্ছেন এক হাজার টাকার নোট। আবার গরিব দুঃস্থদের সঙ্গে নিয়ে দোকান থেকে কিনে দিচ্ছেন চাল, ডাল, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য; বস্ত্রহীনদের কিনে দিচ্ছেন জামাকাপড়। তরুণদের অনুপ্রেরণা জোগাতে ফিরোজের এই ভিন্ন ধরনের মানবসেবা নেটিজনদের প্রশংসায় ভাসছে। লাখ লাখ তরুণ তার ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করছে।

যতটুকু জানা গেছে ফিরোজ হাসান নদীবিধৌত চাঁদপুর হাইমচর উপজেলা সন্তান। নদী পাড়ের সন্তান হিসেবে তাঁর হৃদয়, মন এবং চিন্তাও যেন নদীর মতোই বিশাল।

ফিরোজ হাসানের ফলোয়ার তরুণ লেখক ও গীতিকার কবির হোসেন মিজি বলেন, ‘আমি ‘ফ্রি মোশন’ নামে পরিচিত মানুষটির মানবিক কাজ দেখে মুগ্ধ হই। বর্তমান সময়ে যেখানে সবকিছুতেই সো-আপ আর লোক দেখানো মানবসেবার একটা রিতি চলছে, সেখানে একজন মানুষ নিজেকে আড়ালে রেখে মহৎ কাজ করে যাচ্ছে। এমনকি তার মুখটাও দেখান না। যার কারণে তার প্রতি মন থেকে ভালোবাসা জন্মেছে। আমি ফিরোজ হাসানের জন্যে মহান মাবুদের দরবারে দোয়া করছি।’

এইচ এম নিজাম, সুজন আহমেদ নামে দু’জন তরুণ গণমাধ্যমকর্মী বলেন, ‘ফিরোজ হাসান বর্তমান সময়ে সত্যিকারের একজন মানবতার ফেরিওয়ালা। আর সবচেয়ে আনন্দের বিষয় হলো এই ভাইটি আমাদের চাঁদপুরের সন্তান। তাঁকে অনেক ভালোবাসা এবং শুভ কামনা জানাই।’

প্রসঙ্গত, ফ্রি মোশনের ফেসবুকে জন্মদিনে উপলক্ষে একটি পোস্ট করেন, ‘দিন যতো যায় আমাদের হায়াত ও ততো কমতে থাকে। আজ আমার জন্মদিন, মানে আরো একটি বছর কমে গেলো।এদিকে আমার বাবা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। দোয়া করবেন আল্লাহ্‌ যেনো আমার বাবাকে সুস্থতা দান করেন।’

প্রতিবেদক: আশিক বিন রহিম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Share