চঁদপুরে ফরিদগঞ্জ উপজেলার হর্ণি দূর্গাপুর ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.খ.ম মানছুর আহম্মদ সহকারী মৌলভী পদে নিয়োগ প্রদান করবে এই মর্মে দুই লাখ সাতাশি হাজার টাকার বাণিজ্য করেছেন।
অভিযোগ এবং পঞ্চায়েত পরবর্তীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ৩০০ টাকার স্ট্যাম্পে অঙ্গীকার নামা থেকে জানা যায়- ২০১১ সালে স্থানীয় সন্তোষপুর গ্রামের মৃত শওকত আলীর পুত্র আবুল হোসাইনকে সহকারী মৌলভী পদে চাকরি পাইয়ে দিবেন বলে তার কাছ থেকে দুই লাখ সাতাশি হাজার টাকা নেন। আবুল হোসেন তার নিবন্ধন নেই বলে প্রথমে আপত্তি করলে আ.খ.ম মানছুর তাকে এই বলে আশাস্ত করেন, সে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। লোকও তিনি নিবেন। অতএব এটা ম্যানেজ করা তার দায়িত্ব।
কোনো রকম সমস্যা হবে না বলে তিনি আবুল হোসেনের কাছ থেকে প্রথম দপায় দুই লাখ এবং পরবর্তীতে একাধিক ধাপে আরও সাতাশি হাজার টাকা নেন। কিন্তু বেশ কয়েক মাস পার হওয়ার পরও যখন আ.খ.ম মানছুর আহম্মদ আবুল হোসেনকে চাকরি দিতে পারছেন না। তখন আবুল হোসেন তার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য অধ্যক্ষকে চাপ প্রয়োগ করেন।
কিন্তু অধ্যক্ষ দেই দিচ্ছি করে সময় ক্ষেপন করেন। আবুল হোছাইনের সহ্যের সীমা অতিক্রম করলে তিনি অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত বসান। সর্বশেষ পঞ্চায়েতর সিদ্ধান্তের আলোকে ২০১৫ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আ.খ.ম মানছুর আহমদ ৩০০ টাকার স্টাম্পে অঙ্গীকরনামায় স্বাক্ষর করে তার অপরাধ স্বীকার করেন। সেখানে তিনি বলেন- ২০১৫ সালের ১০ এপ্রিলের মধ্যে মো.আবুল হোছাইনকে দুই লাখ পয়ত্রিশ হাজার টাকা পরিশোধ করবো।’ কিন্তু আ.খ.ম মানছুর আহম্মদ আর্থিকভাবে দুর্বল আবুল হোছাইনের টাকা গুলো আজও পরিশোধ করেন নি।
সে সময় পঞ্চায়েতদের মধ্যে স্টাম্পে স্বাক্ষরকৃতদের মধ্যে ছিলেন- তৎকালিন কমিউনিটি পুলিশিং ফরিদগঞ্জ’র সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমান ১৫নং রূপসা উত্তর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.ওমর ফারুক, হাজি মো.মজিবুর রহমান মাস্টার, আব্দুস সাত্তার, ডা.আ.মতিন ও আমিন খান।
এলাকাবাসী এবং ভুক্তভোগী মো.আবুল হোছাইনের পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা যায়- আবুল হোছাইন চাকরী পাওয়ার আশায় পৌত্রিক সূত্রে পাওয়া ১২ শতাংশ ভূমি বিক্রি করে সেই টাকা অধ্যক্ষ আ.খ.ম মানছুর আহম্মদের হাতে তুলে দেন। অথচ আবুল হোসেনের সংসার চলে খেয়ে না খেয়ে। নিজের এবং শ্বশুরের সংসার দেখতে হয় আবুল হোসেনকে।
মসজিদের ইমামতি করে চলে তার সংসার। অভাব অনটনের কথা বলেও আ.খ.ম মানছুরের হৃদয় গলাতে পারেননি। আবুল হোছাইন তার কষ্টের টাকা গুলো পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অসহায় ভাবে।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মো. আবুল হোছাইন বলেন,ভাই আমি খুব কষ্টে আছি। এতো গুলো সন্তান, মা-বাব, শ্বশুরের কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় তার সংসারও আমাকে দেখতে হয়। এতে আমি খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি। আমি কারো কাছে ভিক্ষা চাই না। আমি আমার পাওনা টাকা গুলো ফেরত চাই’। কান্না জড়িত কণ্ঠে আবুল হোছাইন বলেন-‘যে ভাবেই হোক আপনারা আমার টাকাগুলো উদ্ধার করে দেন।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত আ.খ.ম মানছুর এ প্রতিনিধিকে মুঠফোনে বলেন- ‘ভাই এসব মিথ্যা। আপনি কিছু লেইখেন না। এসব আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র’।
স্টাম্পের স্বাক্ষীদের অন্যতম হাজি মো.মজিবুল হক মাস্টার বলেন-‘ঘটনা শতভাগ সত্য। উনার মাদ্রাসায় বসেই আমরা এর সামাধান করেছি। আমার কাছেও এক কপি অঙ্গীকার নামা আছে। উনি সবার সামনে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং ফেরতও দিবেন বলেছেন’।
এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার শাহ আলী রেজা আশরাফীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে দুই দিন গিয়ে এবং মুঠো ফোনে তাকে না পাওয়াতে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
প্রতিবেদক:শিমুল হাছান, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২১
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur