বয়স মোটে আট বছর। হোক যত দূর তবু স্কুল তাকে যেতেই হবে। বাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে চার মাইল হাঁটা পথ। অর্থ থাকলে হয়তো কোনো যানবাহনেই যেতে পারত সে। কিন্তু সেই অর্থ নেই। তাই বাধ্য হয়ে ঘণ্টাখানেক হেঁটেই যেতে হয়েছিল তাকে। কিন্তু বাইরে তখন মাইনাস ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। তীব্র শীত, জমে যাচ্ছে সবকিছু। শিশুটির মাথার চুল ও চোখের ভ্রুও বরফ জমে যায়। এভাবেই হন্তদন্ত হয়ে স্কুলে হাজির হয়েছিল সে। তার এই চেহারা দেখে অবাক সহপাঠী ও শিক্ষকেরা। তাঁরা শিশুটির ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে দেওয়ায় তা ভাইরাল হয়ে যায়। সংবাদপত্রে উঠে আসে ওয়াং নামের ওই শিশুর গল্প।
বৃহস্পতিবার প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সোমবার চীনে ইউনান প্রদেশের লুদিয়ান কাউন্টি এলাকার একটি গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ওয়াং সেখানকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ছবিতে দেখা গেছে ছোট্ট ওয়াংয়ের মাথার সব চুল ও ভ্রুতে সাদা বরফ জমে গেছে। গায়ে পাতলা জ্যাকেট। এই অবস্থায়ও ক্লাসে হাজির হয়ে সহপাঠীদের দেখে হাসিমুখে আছে সে। অন্য আরেকটি ছবিতে দেখা গেছে, তার ছোট্ট হাতে ময়লা লেগে আছে, তীব্র ঠান্ডায় ফুলে গেছে হাত। ওই হাতের আঙুল দিয়েই সে বুলিয়ে নিচ্ছে স্কুলের খাতায় নিজের লেখা। ওয়াংয়ের শিক্ষক তার এই ছবি দুটি তুলে প্রধান শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে দেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে পোস্ট করা হয়। সেদিনই ওই ছবি ১০ হাজারের বেশি মানুষ শেয়ার করেন। পরে স্থানীয় ও জাতীয় সংবাদমাধ্যমে এই নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওয়াংয়ের ওই ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট সিনা উইবোতে হাজার হাজার ব্যবহারকারী ওয়াংয়ের ওই ছবি #আইসবয় হ্যাশট্যাগ দিয়ে শেয়ার করেছেন। এর মধ্যে একটি পোস্টে ২ লাখ ৭৭ হাজার জন লাইক দিয়েছেন।
সিনা উইবোতে পোস্ট করা ওই ছবিতে অনেকে মন্তব্যও করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘শিশুটি জানে জ্ঞানার্জনই তার ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।’
কেউ কেউ বলেছেন, ওয়াংয়ের ছবি দেখে তাঁদের হৃদয় কেঁদে উঠছে, বিশেষ করে তীব্র ঠান্ডায় তার ফুলে ওঠা ছোট্ট ছোট্ট হাত ও পাতলা পোশাক দেখে।
কেউ কেউ আবার সরকারের উদ্দেশ্যে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনান সরকার কী করছে? কেউ আবার ওয়াংকে অর্থ ও পোশাক সহায়তা দেওয়ার জন্য যোগাযোগের ঠিকানা চেয়েছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াংয়ের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর জনপ্রিয় পিয়ার ভিডিও ওয়েবসাইটের একজন সাংবাদিক তার বাড়ি খুঁজে বের করেছেন। পিয়ার ভিডিও জানিয়েছে, ওয়াংয়ের বাড়ি মাটি ও ইট দিয়ে তৈরি। সে তার দাদি ও বোনের সঙ্গে থাকে। বাবা কাজের জন্য বাইরে থাকেন। চার-পাঁচ মাসে একবার বাড়িতে আসেন। আর মা তাঁদের অনেক আগেই ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওয়াংয়ের গল্প শুনে স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই তার মতো শিশুদের সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সিসিটিভি বলছে, প্রাদেশিক কমিউনিস্ট ইয়ুথ লিগ ওয়াংসহ এ ধরনের শিশুদের ভালো পোশাক ও তাদের স্কুল ভবনের তাপমাত্রা বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে ১৫ হাজার ৩০০ ডলার সহায়তা দিয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ব্যবহারকারীরা আশা করছেন, এক ওয়াংয়ের এই বেদনার গল্প হয়তো এবার গ্রামীণ অঞ্চলে চরম দারিদ্র্যের শিকার শিশুদের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে সাহায্য করবে। (বিবিসি)
নিউজ ডেস্ক:
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৫:০৫ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৮,শুক্রবার
এএস