Saturday, 23 May, 2015 01:48:51 AM
চাঁদপুর টাইমস ডট কম:
বহুতল ভবন নির্মাণের সময় নিচে পথচারীদের নিরাপত্তায় যথাযথ ব্যবস্থা না নিয়েই কাজ চালিয়ে যাওয়ার কারণে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে পথচারীদের। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় পথচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে যে পদক্ষেপটুকু নেয়া হয়েছে তা হলো- একটি সাইনবোর্ড, যেখানে লেখা থাকে- নির্মাণাধীন ভবন: পথচারী সাবধান! অর্থাৎ বিষয়টা অনেকটা এরকম দাঁড়িয়ে যায় যে, এরপরও যদি কোনো পথচারীর মাথায় ইট পড়ে তবে তার দায় যেন তার নিজেরই।
এভাবে পথচারীদের সাবধান করে দিয়েই নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। তবে অতীত ঘাঁটলে এমন ঘটনার সংখ্যা নেহায়েত কম পাওয়া যাবে না যেখানে এই সতর্কবার্তা থাকার পরও নির্মাণাধীন বহুতল ভবন থেকে ইট বা অন্যকিছু পড়ে প্রাণ গেছে সড়কে থাকা মানুষের।
এসব ঘটনায় উচ্চ আদালত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সতর্ক করে দিলেও অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। প্রতিটি ঘটনার পরই রাজউকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা স্বল্প লোকবলের দোহাই দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যান।
সর্বশেষ গত ১৫ মে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টে নির্মাণাধীন ভবন থেকে ইট পড়ে আহত হন জয়নাল আবেদীন (২৬) নামে এক যুবক। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২০ মে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান তিনি।
এরআগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর মগবাজার ওয়্যারলেস গেটে আসিয়া বেগম (৬৫), ৭ মে নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় শাহাদাত হোসেন (২০), ৩ সেপ্টেম্বর খিলগাঁওয়ে রিকশাচালক সেকেন্দার মিয়া (২৪) একইভাবে মারা যান।
তারও আগে ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর যমুনা ফিউচার পার্কে নির্মাণাধীন ভবন থেকে লোহার ১৫/২০টি এঙ্গেল পড়ে নিহত হন মোটরসাইকেল আরোহী শাহিন মিয়া (৩৫)।
২০১১ সালের ২৫ জানুয়ারি পূর্ব রামপুরায় শিশু তাওহীদ শরীফ (৫), ১৬ আগষ্ট বেইলি রোডে শাহাবুদ্দিন হাওলাদার (২৮), ১৯ আগস্ট আদাবরের ১ নং রোডে ভ্যানচালক মোশাররফ হোসেন (৫৫) মারা যান নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়া ইটের আঘাতে।
২০১১ সালের ১৬ জুলাই অসুস্থ মাকে হাসপাতালে দেখে ফেরার পথে পান্থপথে শমরিতা হাসপাতালের সামনে ডেভলপার কোম্পানি সাগুফতার নির্মাণাধীন ১৮তলা ভবন থেকে ইট পড়ে মারা যান তেজগাঁও কলেজের ছাত্র হাবিবুর রহমান (২১)।
এই ঘটনাটির পর বিভিন্ন মহল নড়েচড়ে বসে। ১৯ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে তা জানতে চেয়ে একটি রুল জারি করেন। আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন ডেভলপার কোম্পানির চেয়ারম্যান, রাজউকের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে।
পরবর্তীতে ডেভলপার কোম্পানিকে আদালত নির্দেশ দেন নিহতের পরিবারকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে।
বহুতল ভবন নির্মাণের সময় পথচারীদের নিরাপত্তায় কেন যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া হচ্ছে না বা তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে কি না এসব বিষয়ে জানতে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী, সদস্য (উন্নয়ন), পরিচালকের (টাউন প্ল্যানিং) মোবাইল ফোনে কয়েকবার কল করা হলেও রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। এছাড়া রাজউক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন দেশের বাইরে থাকায় এসব বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
তবে রাজউকের অথরাইজড অফিসার-৫, এ জেড শফিউল্লা বলেন, ‘রাজউকের ১০ জন অথরাউজড অফিসারসহ ৪০ জন পরিদর্শক রয়েছেন। রাজধানীর লক্ষাধিক ভবন তদারকির দায়িত্ব এই ৪০ জনের উপর। নির্মাণাধীন কোনো ভবন পরিদর্শনের সময় যথাযথ নিরাপত্তা বেষ্টনি না থাকলে নির্মাণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নোটিশ করা হয়। আবার কখনো দেখা যায় ২/৩ তলা পর্যন্ত হয়তো ঠিকই নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে কাজ করছে। কিন্তু আরো উপরের দিকে নির্মাণ করার সময় আর সেই নিরাপত্তা বেষ্টনি রাখা হয় না। স্বল্প জনবলের কারণে আমাদের পক্ষেও একই সাইট বার বার পরিদর্শন করা সম্ভব হয় না। প্রতিটি ভবন ধরে পরিদর্শন করার মতো জনবলও নেই রাজউকের।’
চাঁদপুর টাইমস : ডিএইচ/২০১৫
নিয়মিত ফেসবুকে নিউজ পেতে ক্লিক লাইক দিন : www.facebook.com/chandpurtimesonline/likes
চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।