Home / লাইফস্টাইল / মা হতে পারা সব মায়ের জন্য অনেক আনন্দের, কিন্তু…
মা হতে পারা সব মায়ের জন্য অনেক আনন্দের, কিন্তু...
প্রতীকী ছবি

মা হতে পারা সব মায়ের জন্য অনেক আনন্দের, কিন্তু…

মা হতে পারা পৃথিবীর সব মায়ের জন্য অনেক আনন্দের একটি অনুভুতি যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। ছোট একটি শিশুকে পৃথিবীতে আনতে গিয়ে একজন মাকে যেতে হয় নানান ধরনের শারীরিক ও মানসিক জটিলতার ভিতর দিয়ে।

যার অন্যতম হচ্ছে শিশুর জন্মের পর বেশির ভাগ মায়ের পেটের ত্বকে লম্বা লম্বা ফাটা দাগ হয়ে যায়। ইংরেজিতে স্ট্রেচমার্কস বলে পরিচিত এই মাতৃত্বকালীন ফাটা দাগ সৌন্দর্যে ব্যাঘাত ঘটায় এবং মায়েদের মনের কষ্টের কারন হয়ে দাড়ায়।

গর্ভধারণের কারনে একজন মাকে প্রায় ৪০ সপ্তাহ ধরে তাঁর সন্তানকে প্রায় দুই লিটার পানিসহ গর্ভে ধারণ করতে হয়। যার ফলে জরায়ুর আয়তন আগের চেয়ে ২০ গুণ বড় হয়ে যায় ৷

গর্ভবতী মায়ের পেটের ভিতরে আস্তে আস্তে একটি শিশু বড় হতে থাকে, সাথে সাথে পেটও বড় হতে থাকে তাই পেটের ত্বকেও ধীরে ধীরে টান পড়ে। মেয়েদের পেটের ত্বকের টিস্যু এমনভাবে তৈরি যে, তা ধীরে ধীরে রাবারের মতো ঢিলা বা বড় হতে পারে ৷

পেটের ত্বকে তান পড়ার কারনে প্রথমে পেটে লালভাব পরে নীল হয়ে যাওয়া ফাটা দাগ দেখা দেয়৷ এই দাগ শিশুর জন্মের আগে সাধারণত পেট, ঊরু ও নিতম্বে হয়ে থাকে। তবে এই দাগের জন্য আসলে শরীরের হরমোনাল ইমব্যালান্স দায়ী।

কিছু হরমোন ত্বকে টান পড়লেও যেন ত্বক ফেটে না যায় তার জন্য কাজ করে, শরীরে সেসব হরমোনের উৎপাদন কম থাকলে এই দাগগুলো পড়ে। রিলাক্সিন , ইস্ট্রজেন ও করটিসল নামক হরমোন বেড়ে গিয়ে মিউকোপলিসেকারাইড জমা করে যা যোজক কলা থেকে পানি শোষণ করে।

ফলে যখন চামড়ায় টান পড়ে তখন সহজেই ঐ স্থানে দাগের সৃষ্টি হয়ে যায়। যাদের ওজন বেশি বা যাদের বাচ্চা বড় তাদের দাগ হবার প্রবণতা বেশি। কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে মাতৃত্ব কালীন দাগ খুব সহজেই পড়ে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে বংশগত কারণও থাকতে পারে ৷ তবে সব নারীর যে গর্ভাবস্থায় অথবা পরে এমন ফাটা দাগ হয় এমনটা কিন্তু নয় ৷

তবে যে কারনেই দাগ হোক না কেন সব নারীর কাছেই তা অনাকাঙ্ক্ষিত। কোনো নারীই তার সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাক এমনটা চান না। গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই সঠিক যত্ন নিলে এ দাগ পুরোপুরি দূর না করতে পারলেও ত্বকের রঙের সাথে মিশে থাকে এমন হালকা করে দেওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেই মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার প্রাকৃতিক উপাদান কি কি এবং কীভাবে সেগুলো ব্যবহার করতে হবে।

অলিভ অয়েল
ফাটা দাগ দূর করার জন্য অলিভ অয়েলের তুলনা হয় না, অলিভ অয়েলে আছে পরিমাণ মতো ভিটামিন আর অ্যান্টি অক্সিডেন্টস। যুগ যুগ ধরে ত্বকের যত্নে অলিভ অয়েল ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই তেল ত্বককে ভিতর থেকে নরম করে তোলে। গর্ভধারণের প্রথম থেকে, চামড়া ফাটার আগে থেকেই অলিভ অয়েল তল পেটে, বুকে, নিতম্বে ম্যাসাজ করা শুরু করে দিন। প্রতিদিন ৩ বেলা করে এই তেল ব্যবহারের ফলে ত্বক থাকবে ময়েসচারাইজড।

প্রতিদিন অলিভ অয়েল ব্যবহারের ফলে ত্বকের কালচে ভাব ও দূর হয়ে যাবে। শিশুর জন্মের পরও যতদিন পর্যন্ত ফাটা দাগ থাকবে ততদিন পর্যন্ত অলিভে অয়েল ম্যাসাজ করতে থাকুন, এটি ত্বকের সাথে যতক্ষণ মিশে থাকবে ততক্ষনই ত্বকের জন্য ভালো। শিশুর জন্মের পর ফাটা দাগের স্থানে চিনি, লেবুর রস ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে স্ক্রাব বানিয়ে তা প্রতিদিন ফাটা দাগের উপর প্রতিদিন ৫-১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন।

এর ফলে দাগ হাল্কা হয়ে আসবে। তাছাড়াও যেকোনো ভালো মানের ত্বকে ব্যবহার উপযোগী তেল ফাটা দাগ দূর করতে সাহায্য করবে, তবে যে তেল ব্যবহার করেন না কেন তা হাতে নিয়ে খুব ধীরে ধীরে প্রথমে নাভি থেকে শুরু করে পেটের চারিদিকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে মালিশ করতে হবে৷ মনে রাখতে হবে কোনোভাবে যেন পেটে চাপ না লাগে৷ কিছুক্ষণ পর শুধু বৃদ্ধাঙ্গুলি ও তর্জনি দিয়ে খুব মোলায়েমভাবে নাভি থেকে ওপরের দিকে ঘোরাতে হবে৷ এভাবে নিয়মিত যত্ন নিলে শতভাগ না হলেও পেট অনেকটাই দাগমুক্ত রাখা সম্ভব৷

ডিমের সাদা অংশ
ডিমের সাদা অংশ মাতৃত্বজনিত দাগ দূর করার জন্য খুবই ভালো একটি উপাদান। ডিমের অ্যামাইনো এসিড ও প্রোটিন ত্বককে নতুন জীবন দান করতে সক্ষন। প্রতিদিন গোসলের আগে ডিমের সাদা অংশ কাঁটা চামচ দিয়ে ভালো করে ফেটিয়ে নিয়ে দাগের মাঝে মেকআপ ব্রাশ দিয়ে লাগিয়ে নিতে হবে। পুরোপুরি শুকিয়ে এলে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে পেট মুছে নিয়ে লাগাতে হবে অলিভ অয়েল যেন ত্বক মশ্চারাইজড থাকে। এ পদ্ধতি ২ সপ্তাহ অবলম্বণ করলে দাগ চলে যাবে অনেকাংশেই।

লেবু
ভিটামিন সি’র চাহিদা পুরণ করার জন্য লেবুর তুলনা মেলাও ভার। লেবু যেহেতু অ্যাসিডিক তাই এর রস যেকোনো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। লেবু টুকরো করে কেটে নিয়ে পেটের দাগের অংশে হালকা ভাবে ম্যাসাজ করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন লেবুর রস ভালো মতো ত্বকে লাগে। ৩ থেকে চার মিনিট ম্যাসাজ করার পর ১০ মিনিটের জন্য পেটে লেবুর রস লাগা অবস্থায় রাখতে হবে পেট।

এরপর উষ্ণ পানিতে ধুয়ে নিতে হবে। লেবুর রসের সাথে খানিকটা শশার রস লাগালেও উপকার পাওয়া যাবে। মাতৃত্বজনিত দাগ হালকা করার জন্য এটি খুবই ভালো একটি উপায় তবে শিশু পেটে থাকা অবস্থায় লেবুর রস দেওয়া যাবে না, এবং শিশুর জন্মের কম করে ২ মাস পর থেকে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন, যদি গর্ভকালীন সমইয় থেকে করতে চান তবে সে ক্ষেত্রে ভালো মানের ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন।

আলুর রস
মাতৃত্বজনিত দাগ হালকা করার জন্য আলুর ভিটামিন আর মিনারেল খুবই ভালো ওষুধ। একটি আলু নিয়ে তা মোটা করে ২ টুকরা করে ফাটা দাগের উপওে কিছুক্ষণ ম্যাসেজ করুন। এর রস ভালো মত লাগলে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন স্থানটি।

অ্যালোভেরা
ইংরেজিতে অ্যালোভেরা বলা হলেও বাংলায় এর নাম ঘৃতকুমারী। নানা ঔষধি গুণে ভরপুর অ্যালোভেরার জেল সরাসরিই ত্বকে লাগানো যায়। একটি অ্যালোভেরার পাতা নিয়ে চা চামচ দিয়ে এর জেল করে নিয়ে তা দাগের জায়গায় লাগাতে হবে। ২০ মিনিট পর হালকা গরম পানিতে ধুয়ে নিলেই হবে। এটা কয়েক সপ্তাহ করলে দাগ অবশ্যই কমে আসবে।

ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েল যেকোনো সুপার শপ বা কসমেটিকসের দোকানে পাওয়া যায়। দামও খুব বেশী না। ত্ত্বকের বলিরেখা দূর করতে বা যেকোনো দাগ দূর করতে এই তেল ব্যবহার করা হয়। পেটের দাগ দূর করার জন্য ক্যাস্টর অয়েল দিয়ে পেট ম্যাসাজ করে একটি পাতলা কাপড় দিয়ে ত্বক ঢেকে দিতে হবে। এরপর একটি হট ওয়াটার ব্যাগ তার উপর রেখে ৩০ মিনিট রাখতে হবে। এরপর গোসল করাই ভালো। এটা অন্তত এক মাস করলে মাতৃত্বজনিত দাগ প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

এখানে যেসব উপায়ের কথা বলা হলো তা প্রসবের পর শারীরিকভাবে সুস্থ হওয়ার পর প্রয়োগযোগ্য।গর্ভবতী অবস্থায় অলিভ অয়েল অথবা অন্য যেকোনো ভালো মানের তেলের ম্যাসাজ খুব ভালো কাজে দেবে ত্বকের জন্য। অন্য পদ্ধতিগুলো শুধুমাত্র বাচ্চা হওয়ার পর প্রয়োগ করা যাবে। গর্ভাবস্থায় এসব পদ্ধতি গর্ভের সন্তানের ক্ষতি করতে পারে। তাছাড়াও গর্ভবতী থাকাকালীন অবস্থায় স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে প্রতিদিন ৷

অর্থাৎ খাবারের তালিকায় থাকতে হবে শস্যদানাযুক্ত খাবার, মাছ এবং বিভিন্ন সবজি৷ যেমন ব্রোকলি, গাজর এবং ভিটামিন ‘ই’ ও ‘সি’ যুক্ত খাবার৷ তাছাড়া চিনিবিহীন চা এবং প্রচুর পানি পান করতে হবে৷

প্রতিদিন কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে শরীরে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকবে ৷ ফলে ত্বক দাগ হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারে৷ গর্ভবতীরা ‘ইয়োগা’ বা যোগ ব্যায়ামের মতো হালকা ব্যায়াম করতে পারেন৷

তবে মা ও শিশুকে সুস্থ রাখতে বিশেষভাবে সহায়তা করে সাঁতার কাটা ৷ তবে অবশ্যই যোগ ব্যায়াম অথবা সাঁতার কাতার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে জেনে নিন আপনি শারীরিক ভাবে এইসব করার জন্য উপযুক্ত কিনা।

আপনি যদি ফাটা দাগের উপর কোন ক্রিম ব্যবহার করতে চান তবে অবশ্যই তার আগে একজন চর্ম বিশেষজ্ঞর পরামর্শ গ্রহন করুন।মাতৃত্বজনিত দাগ অধিকাংশ মায়েরই হয়। কারো কম কারো বেশী।

মন খারাপ না করে প্রাকৃতিক এ উপাদানগুলো ব্যবহার করে দেখুন। নিজের যত্ন নিন। আপনি ভালো থাকলেই ভালো থাকবে আপনার শিশু।