সারাদেশ

মাতব্বরদের অদ্ভুত নির্দেশে গাছ কাটার উৎসব

“গাছ ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে, তাই কেটে সাবাড় করে দিতে হবে”। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে মাতুবররদের এমন আদেশ পেয়ে গ্রামের মানুষ গাছ নিধনের উৎসবে মেতেছে।

গ্রামের মাতব্বরগণ মিটিং করে তাদের গ্রামের মাঠ থেকে সকল প্রকার গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।

মাতব্বরদের এই নির্দেশে গাছের মালিকরা মাঠে থাকা গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন।

গত ২০ দিনে উপজেলার লক্ষ্মীপুর গ্রামে প্রায় তিন হাজারের বেশি নানা জাতের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এখনও চলছে গাছ কাটার কাজ।

আগামী এক সপ্তার মধ্যে মাঠটি বৃক্ষশুন্য করার ফরমার জারী করেছে মাতুব্বররা। গ্রামবাসির অভিযোগ ফসল ক্ষতির অজুহাতে গোটা মাঠের গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন মাতুব্বররা। ফলে গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে চরের মাঠ বলে পরিচিত এই মাঠে আর কোনো সবুজ বৃক্ষ থাকবে না। থাকবে না গাছের শীতল ছায়া।

এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি গ্রামের মাঠ থেকে এভাবে সব গাছ কেটে ফেলতে কেউ নির্দেশ দিতে পারেন না। এটা পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতি।

এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের বিশাল মাঠে গাছ কাটার কাজ চলছে। গ্রামের মানুষগুলো শুধু বলছে মাতুব্বরদের নির্দেশে তারা গাছ কেটে নিচ্ছেন। এর বেশি কিছু তারা বলতে নারাজ। গ্রামবাসি জানান, গত ১৭ মার্চ মাতুব্বররা লক্ষিপুর বাজারে গ্রামের লোকজন নিয়ে মিটিং করেন। মজিবর রহমান নামের এক মাতুব্বর সভায় সভাপতিত্ব করেন। সেখানে নানা আলোচনা শেষে মাতুব্বররা গ্রামের মাঠে থাকা সকল গাছ কাটার সিদ্ধান্ত দেন। সময় দেওয়া হয় আগামী ২০ দিনের মধ্যে মাঠে যার যা গাছ আছে কেটে নিতে হবে।

এরপর শুরু হয় গাছ কাটার কাজ।

গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি গ্রামের সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেখানে মাতবররা গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর কাটা হচ্ছে গাছ। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত তিন হাজারের অধিক গাছ কাটা হয়েছে। তিনি জানান, সদ্য লাগানো থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়সী এমন সব গাছ কাটা হচ্ছে।

ঝিনাইদহ পরিবেশ আন্দোলনের আহবায়ক মাসুদ আহম্মদ সনজু জানান, এটা খুবই অন্যায়। এ জাতীয় নির্দেশ মাতবররা কিভাবে দেন তা তার জানা নেই।

তিনি বলেন, প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বাকি গাছগুলো রক্ষা করা। ঝিনাইদহ জেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সাংবাদিক জাহিদুর রহমান কে জানান, একজনের গাছ অন্যজন কাটার নির্দেশ দিতে পারেন না। তাছাড়া গাছ কেটে এক এলাকা ফাকা করতে হবে এটা খুবই অন্যায়। বিষয়টি দ্রুত খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান।

এ ব্যাপারে গ্রামের মাতবর মজিবর রহমান জানান, ফসলের ক্ষতির কথা চিন্তা করে তারা এই গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা তার একার সিদ্ধান্ত নয়, গ্রামের মানুষের সিদ্ধান্ত।

তিনি আরো বলেন, মাঠে গাছ থাকলে ফসলের ক্ষতি হবেই। যে কারণে গ্রামের মানুষের অনুরোধে এই সিদ্ধান্ত তারা দিয়েছেন। সেখানে গোলাম মোস্তফা, ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।

About The Author

জাহিদুর রহমান তারেক, ঝিনাইদহ করেসপন্ডেন্ট
আপডেট৫:০০ এএম, ৬ মার্চ  ২০১৬, বুধবার

ডিএইচ

Share