পেরুর ইতিহাসের এক অন্ধকার অধ্যায় বেরিয়ে এলো মাটির নিচ থেকে। বিজ্ঞানীরা মাটি খুঁড়েই বড়সড় ধাক্কা খেলেন।
দেশটির উত্তরের উপকূলীয় অঞ্চলে খননকার্য চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। সেখানে পাওয়া গেলো ১৪০টি শিশুর কঙ্কাল। সঙ্গে ছিল উট পরিবারের লিয়ামান প্রাণীর ২০০টি শাবকের কঙ্কাল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা সম্ভবত বিশ্বের ইতিহাসের বৃহত্তম শিশু বলীর চিত্র। সেখানে আরো একজন পুরুষ এবং দুজন নারীর দেহাবশেষ মিলেছে।
এলাকাটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট চান চান এর বেশ কাছেই অবস্থিত। বলীদানের এই এলাকাটি আগ হুয়ানচাকুইতো-লাস লিয়ামাস নামে পরিচিত ছিল। আজ থেকে সাড়ে পাঁচশো বছর আগেই কলাম্বিয়ান চিমু সাম্রাজ্যের আগে এই শিশুবলীর ঘটনা ঘটেছিল বলে ধারণা করছেন বিজ্ঞানীরা।
২০১১ সালের ২২ এপ্রিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক কয়েকটি ছবি প্রকাশ করেছিল। সেখানে ডজনখানেকের বেশি শিশুর দেহাবশেষ ৫০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মরুতে সংরক্ষিত অবস্থায় আছে বলে জানানো হয়। হুয়ানচাকুইতো-লাস লিয়ামাস এলাকটি ত্রুজিলোর কাছেই অবস্থিত।
যে শিশুদের বলী দেওয়া হয়েছে তাদের বয়স ৫-১৪ বছরের মধ্যে। আর লিয়ামাস প্রাণীর শাবকগুলোর বয়স ১৮ মাসের মধ্যে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবশিশু এবং প্রাণীগুলোর পাঁজরের হাড়গুলো কেটে সরিয়ে ফেলার প্রমাণ পরীক্ষায় মিলেছে। শিশুদের মুখ লালচে রং দিয়ে লেপে দেওয়া হয়েছে। কোনো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়েই এদের বলী দেওয়া হয়। বুক চিরে হাড়গুলো কেটে ফেলার আগেই তাদের মুখে এই রং লাগানো হয়। সম্ভবত এ কাজ করা হয়েছে তাদের হৃদযন্ত্র বের করে নেওয়ার জন্যে। লিয়ামাসগুলোর ভাগ্যে একই ঘটনা ঘটেছে। মানবশিশুগুলোকে শোয়ানো হয়েছে পশ্চিম দিকে মুখ করে। আর লিয়ামাসগুলোর মুখ আন্দেজের শৃঙ্গের দিকে ঘোরানো ছিল।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, মানুষ এবং প্রাণীর শিশুদের বলীদানের ঘটনা একই সময়ে ঘটেছে। আর প্রাপ্তবয়স্ক যে তিনজনের দেহ মিলেছে তাদের মুখে আঘাতের চিহ্ন আছে। তারাও হয়তো বলীদানের অংশ ছিল।
২০১১ সাল থেকেই এ সাইটে খনন চালাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। প্রথমে যখন সাইটটি খনন করা হয় তখনই বলীদানের ঘটনাটি পরিষ্কার হয়ে ওঠে। জরুরি ভিত্তিতে চলে খনন। তখন ৪২টি শিশু এবং ৭৬টি লিয়ামাসের দেহাবশেষ মেলে।
সূত্র : সিএনএন