গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি আর শীতের মধ্যে ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দিতে গাজীপুরের শিল্পনগরী টঙ্গীমুখী মানুষের ঢলে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তীব্র যানজটে ধীর গতিতে চলছে গাড়ি।
এছাড়া ঢাকা মহানগর থেকেও টঙ্গীমুখী সড়কেও যানজট দেখা গেছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানজটের কারণে ঢাকা-বাইপাস ও ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কেরও যানজট লেগে গেছে। যানজট নিরসনে পুলিশের কোন পদক্ষেপই কাজে দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন এ সড়কে যাতায়তকারীরা।
টঙ্গীতে অফিসের উদ্দেশ্যে সকাল সাড়ে ছয়টায় বাসে উঠে রওনা হন চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গীগামী যাত্রী জলিল মিয়া। তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে সাতটায় এক ঘণ্টায় মাত্র দুই কিলোমিটার রাস্তা যেতে পেরেছি।”
গাজীপুর পরিবহনের বাসের চালক মো. ইসলাম জানান, ভোর ৬টার দিকে টঙ্গী থেকে রওয়ানা দিয়ে সাড়ে ৯টায় চান্দনা চৌরাস্তায় পৌঁছান।
“রাস্তায় খানাখন্দ, বৃষ্টি এবং যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সকালে মহাসড়কে পুলিশের সংখ্যাও কম সে কারণে যানজটও বেশি থাকে।”
গাজীপুর মহানগর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার জিএম মাজহারুল ইসলাম জানান, সারাদেশ থেকে ইজতেমায় যোগ দিতে আগতদের পুরো এলাকায় গাড়ির চাপ বেড়ে গেছে। “অল্প কয়েকজন পুলিশ দিয়ে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে গাজীপুরে ঢাকা-ময়মনসিং ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের থেমে থেমে যানজট হচ্ছে।”
গাজীপুর মহানগরের ট্রাফিক বিভাগের সহকারী কমিশনার (দক্ষিণ) থোয়াই অং প্রু মারমা বলেন, টঙ্গী স্টেশন রোডসহ মহাসড়কে যে দুইটি ফুটওভার ব্রিজ ছিল, তা না থাকায় ইজতেমায় আসা মানুষ যেখান সেখান দিয়ে মহাসড়ক পার হতে গিয়ে থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
টঙ্গী, বোর্ডবাজার, সাইনবোর্ড, স্টেশনরোড, ভোগড়া বাইবাস, চান্দনা-চৌরাস্তা মোড়, তেলিপাড়া, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ভাওয়াল কলেজ সামনে, নাওজোর, কোনাবাড়ি এলাকা থেকে সড়কে যানবাহন জটে আটকে থাকার খবর পাওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, উপমহাদেশে সুন্নী মতাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় সংঘ তাবলিগ জামাতের মূলকেন্দ্র ভারতের দিল্লিতে। মাওলানা সাদের দাদা ভারতের ইসলামি পণ্ডিত ইলিয়াছ কান্ধলভি ১৯২০ এর দশকে তাবলিগ জামাত নামের এই সংস্কারবাদী আন্দোলনের সূচনা করেন। বিশ্ব ইজতেমা তাবলিগ জামাতের বার্ষিক সমাবেশ।
আগামী শুক্রবার ফজর নামাজের পর শুরু হচ্ছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলমানদের ধর্মীয় সমাবেশ। তবে বৃহস্পতিবার ইজতেমার দায়িত্বে নিয়োজিত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বয়ান শুরু হয়েছে।
১৬৫ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেল, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, তাশকিল কামরা, হালকা নম্বর বসানো, দৈর্ঘ্যে ৪০ ফুট প্রস্থে ২৬ ফুট বয়ান মঞ্চ নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে তাবলিগ জামাত অনুসারীরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে ইজতেমা ময়দানে জড়ো হতে শুরু করেছেন। লাখো মানুষের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে তুরাগ পাড়।
৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম ধাপে ৮৭টি খিত্তাসহ ছয়টি সংরক্ষিত খিত্তা স্থাপন করা হয়েছে। দেশের সব জেলারসহ বিদেশীরাও এ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন।
২০১৮ বছর জানুয়ারিতে ঢাকায় বিশ্ব ইজতেমার সময় তবলিগের দিল্লির মারকাজ এবং দেওবন্দ মাদ্রাসার অনুসারীদের মধ্যে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। তবলিগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে মতভেদ থাকলেও একসাথেই ইজতেমায় যোগ দিচ্ছেন তারা।
স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, ৯ জানুয়ারি ২০১৯