মহাসাগরের নিচে নির্মিত হচ্ছে ১০ হাজার ফ্ল্যাট! -ভিডিও

মহাসাগরের নিচে নির্মিত হবে ১০ হাজার ফ্ল্যাট। সেখানে বাস করবে ২০ হাজার মানুষ। প্রতি ফ্ল্যাটের নির্মাণ খরচ পড়বে প্রায় ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮ টাকা। তবে ফ্লাটগুলোর বিক্রয় মূল্য এখনো নির্ধারিত হয়নি। ২০৬৫ সালের ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

প্রকল্পটির পরিকল্পনা করেছেন বেলজিয়ামের স্থপতি ভিনসেন্ট ক্যালিবাউট। পানির নিচে এ শহরটিতে ফ্ল্যাট ছাড়াও থাকবে অফিস স্পেস, ওয়ার্কসপ, বিজ্ঞানাগার, সামুদ্রিক খামার, কৃষি খামার ও ফলের বাগান। সব মিলিয়ে এটি হবে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ আবাসস্থল।

নতুন প্রজেক্ট ‘অ্যাকুয়ারা’ (২০১৫) শীর্ষক প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ খুব শিগগিরই শুরু হবে। ভিনসেন্ট ক্যালিবাউট ২০১৫ সালে ব্রাজিলের রাজধানী রিও ডি জেনিরিওতে প্রকল্পটি প্রকাশ করেন। সাতটি মহাদেশের পাঁচটি মহাসাগরে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি। সাগরের বহুরূপি ব্যবহার ও ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা চিন্তা করেই ক্যালিবাউট এ পরিকল্পনাটি করেছেন।

তিনি জানান, ভবনগুলোর কাঠামো তৈরি হবে নীল রঙের স্বচ্ছ কার্বন দিয়ে। এজন্য প্রতিটি ভবনে কার্বন লাগবে ২৫০০ টন। ভবনগুলোর প্রতিটিঅ্যাপার্টমেন্টে প্রকৃতি নির্ভর জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে।

পাপাশাপাশি সাজানো অ্যাপার্টমেন্টগুলোকে এক সঙ্গে রাখতে যে আঠা ব্যবহার করা হবে তা তৈরিও হবে প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। খারাপ আবহাওয়া সেগুলোকে আলাদা করতে বা কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। গলদা চিংড়ির মতো স্বচ্ছ ও বিশেষ আবরণের ফাইবার ব্যবহার করা হবে। ভবনগুলোর মেঝেতে এমন এক ধরনের পদার্থ ব্যাবহার করা হবে, যা হাঙ্গরের ত্বকে থাকে। সেগুলো সম্পূর্ণ ব্যাকটেরিয়া মুক্ত। এর উপাদান যে কোনো বিষাক্ত পদার্থকে ধ্বংস করে ফেলতে সক্ষম।

প্রত্যেকটি ভবনের উচ্চতা হবে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত ১০০০ মিটার বা ১০ লাখ বর্গমিটার। আর প্রস্থে হবে ৫০০ মিটার বা পাঁচ লাখ বর্গমিটার। প্রতিটি ভবন হবে আড়াইশ তলা। ভবনে অ্যাপার্টমেন্ট থাকবে দশ হাজারটি করে। প্রতিটি অ্যাপার্টমেন্টের আয়তন হবে ১৫০ বর্গমিটার। একেকটি অ্যাপার্টমেন্টে দুজন মানুষ থাকতে পারবে। আর এভাবে প্রতিটি ভবনে দশ হাজার করে মানুষ থাকবে।

ভবনের প্রতি বর্গমিটারের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭০৪ টাকা। সে হিসেবে একেকটি অ্যাপর্টমেন্টের পেছনে খরচ পড়বে ২ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৮ টাকা। তবে অ্যাপার্টমেন্টের বিক্রয় মূল্য এখনো নির্ধারিত হয়নি বলে জানিয়েছেন ভিনসেন্ট। এ ভবন নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার ২৮০ টাকা।

ভিনসেন্ট বলেন, “সমুদ্রের নিচে তৈরি ভবনগুলোর বাসিন্দাদের কোনো কিছুর জন্য বাইরে যেতে হবে না। প্রয়োজনীয় সবকিছু ভবনের মধ্যেই উৎপাদিত হবে। ভবনটির নকশায় পরিবেশের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এ ভবন কোনো কার্বন নিঃসরণ করবে না। কারণ ভবনটিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো জ্বালানি ব্যবহার করা হবে না। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত তাপ দিয়েই জ্বালানির চাহিদা মেটানো হবে।

‘সমুদ্রের লবণাক্ত পানিকে মিঠা পানিতে রূপান্তরিত করার ব্যবস্থাও থাকবে। ওসোমোটিক চাপ প্রয়োগ করে পানি থেকে লবণ আলাদা করা হবে। বাতাসও প্রাকৃতিকভাবে সতেজ করা হবে। একটি চিমনির সাহায্যে গরম বাতাস বাইরে বের করে দেওয়া হবে। সতেজ বাতাস সরবাহের জন্য এখানে একটি অক্সিজেন স্টেশনও থাকবে।

‘খাবারের জন্য চাষাবাদও করা যাবে। কৃষি খামারের জন্য নির্মিত হবে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৫০ মিটার প্রস্থের জমির প্লট। শাকসবজি ও ফল চাষের ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। মাছ চাষ করার দরকার পড়বে না। কারণ সমুদ্রের মাছেই চাহিদা মিটবে।”

ভিনসেন্ট ক্যালিবাউট তার নকশার মূল পরিকল্পনায় ভবনগুলোর ডিজাইন ক্রিস্টাল জেলি ফিসের মতো করে করেছেন। সেখানকার অ্যাপার্টমেন্টগুলো হবে সাজানো গোছানো গ্রামের মতো। দেখতে হবে অবিকল ক্রিস্টাল জেলি ফিসের আকৃতির। ভবনগুলোর উপরেও জেলি ফিসের ডিজাইন করা হয়েছে।

প্রতিটি ভবনের উপরে একটি করে ডক স্টেশন থাকবে। বাইরে থেকে ছোটো ছোটো নৌকায় করে এই ডক স্টেশনে এসে থামতে হবে। তারপর ভবনে প্রবেশ করা যাবে। ভবনের বাইরে যেতে চাইলেও এভাবেই যেতে হবে।

প্রকল্পটির স্থপতি ভিনসেন্ট ক্যালিবাউটের জন্ম ১৯৭৭ সালে বেলজিয়ামে। ২০০০ সালের জুন মাসে ব্রাসেলসে ‘গ্র্রান্ড প্রিকস ডি’ আর্কিটেকচার রেনে’সিরোরি’ নামে স্থাপত্য বিষয়ের ওপর ডিপ্লোমা করেন তিনি। ডিপ্লোমা করার পর আর্কিটেকচার বিষয়ে ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় অংশ নিয়ে সুনাম অর্জন করেন ক্যালিবাউট।

২০০৫ সালে তিনি বেলজিয়ামে ‘রি-নোভিউক্স পালিরেসিস ডি’ আর্কিটেকচার’ পুরস্কার পান। ২০০৯ সালে ফ্রান্সের রায়েত-এ তার ‘থার্মাল সুইমিং পুল’ প্রজেক্ট প্রথম পুরস্কার জিতে নেয়। ২০১০ সালে তাইওয়ানে তার ‘লাক্সারিয়াস রেসিডেন্টাল টাওয়ার’ প্রথম পুরস্কার অর্জন করে। ২০১৩ সালে ডমিকান রিপাবলিক-এ ‘টপ সাস্টটেইনবেল আর্কিটেকচারের অ্যাওয়ার্ড পান এই মেধাবী স্থপতি। ২০১৪ সালে ‘তাও জো গার্ডেন’ নামে একটি প্রজেক্টের সাফল্যে তিনি আন্তর্জাতিক আর্কিটেকচার পুরস্কার পান। এই প্রজেক্টের কল্যাণেই তিনি ‘হাইলি কমেন্টটেড অ্যাওয়ার্ড ২০১৪’ লাভ করেন।

বর্তমানে এ কীর্তিমান স্থপতি ফ্রান্সের প্যারিসে থাকেন। তার বিখ্যাত কয়েকটি প্রকল্প হলো- নতুন বিশ্ব ২০০৫ (New worlds), আর্কিবায়োটিক ২০০৮ (Archibiotic), ইকোলজিক্যাল আর্কিটেকচার ২০১১ (Ecological Architecture), মাস্টার অব আর্কিটেকচার ২০১৩ (Masters of Architecture), উর্বর শহর (Fertile Cities) ২০১৪ এবং অ্যাকুয়ারা (২০১৫)।

অ্যাকুয়ারা প্রজেক্ট নিয়ে একটি একটি ভিডিও চিত্র পাওয়া গেছে। নতুন সময়ের পাঠকদের জন্য সেটি দেওয়া হলো।

নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৬:৩২ পিএম, ০৭ জানুয়ারি ২০১৬, বৃহস্পতিবার

এমআরআর  

Share