জাতীয়

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস কাল

বৃহস্পতিবার ২৬ মার্চ । মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের আজকের দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।
২৫ মার্চের কালরাতে পশ্চিম পাকিস্তানি সামরিক নেতৃত্ব মুক্তিকামী নিরস্ত্র জনতার ওপর যে জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড চালায়,তারপরই চূড়ান্ত হয়ে যায় আমাদের স্বাধীনতার পথচলা।

পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আর নয়। ২৫ মার্চের গণহত্যা চালানোর সময়ই পুলিশ, ইপিআর এবং বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে বাঙালি সৈনিক ও অফিসারেরা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। পরের দিন থেকে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ। যে যার মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে চূড়ান্ত সংগ্রামে।

১৯৭১ সালের তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম’ ঐতিহাসিক ভাষণের মাধ্যমে মুক্তিপাগল সচেতন মানুষ পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ইঙ্গিত লাভ করে। এরপর সমস্যা সমাধানে ১৬ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সাথে বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ আলোচনা ক্রমে ব্যর্থতার দিকে গড়াতে থাকায় অনেকেই যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মার্চের সে উত্তাল দিনগুলোতে এভাবে প্রস্তুত হতে থাকে যুদ্ধের ক্ষেত্র।

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভের পর পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নানাভাবে নিপীড়িত হতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসক শ্রেণির হাতে। দেশ বিভাগের পরপরই বঞ্চনার নতুন অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে লাগল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ।

পাকিস্তান বিষয়ে মোহভঙ্গ হতে শুরু হলো এ অঞ্চলের মানুষের। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে বারবার রাজপথে নামতে বাধ্য করা হয়। এ অঞ্চলের মানুষের প্রতি শাসক শ্রেণীর উদাসীনতা এবং বঞ্চনার জবাব দেয়া হয় ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু শাসক শ্রেণী নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে তাদের হাতেই ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ফলে আবার রাজপথে নামতে বাধ্য করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের বাঞ্ছিত মানুষের ন্যায্য দাবি আদায় এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা অর্পণের দাবিতে আন্দোলন যখন চূড়ান্তপর্যায়ে ১৫ মার্চ আলোচনার জন্য ঢাকা এলেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান।

১৬ মার্চ থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা শুরু করলেন তিনি। মূলত আলোচনার নামে এটি ছিল একটি প্রতারণা এবং সময়ক্ষেপণ মাত্র। পশ্চিম পাকিস্তানি নেতৃবৃন্দ প্রতিদিন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে গোপনে অস্ত্র এবং সৈন্য জমা করতে থাকে পূর্ব পাকিস্তানে। ২৪ মার্চ উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা ঢাকা ত্যাগ করলেন আন্দোলন দমনে গণহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে।

২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার নির্দেশ দিয়ে রাতেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে করে করাচির উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন ইয়াহিয়া খান। রাত ১১ টায় তিনি করাচি পৌঁছার খবর ঢাকায় পাঠানোর পরপরই শুরু হয় গণহত্যার অভিযান। রাজপথে নেমে আসে ট্যাংক এবং সশস্ত্র সৈন্য।

পূর্ব পাকস্তানের ন্যায্য দাবি আদায়ের আন্দোলনকে চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য শুরু হয় ইতিহাসের এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ। আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয় অন্যায় যুদ্ধ। শুরু হয় আমাদের স্বাধীনতার পথ চলা। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী লড়াই আর অশেষ ত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে প্রিয় স্বাধীনতা।

বার্তা কক্ষ , ২৫ মার্চ ২০২০
এজি

Share