হাজীগঞ্জ

‘মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি’র প্রতিবাদে হাজীগঞ্জে সংবাদ সম্মেলন

হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে কটুক্তিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে হাজীগঞ্জে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেয়।

মঙ্গলবার বিকেলে হাজীগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআতের প্রেসিডিয়াম কমিটির সদস্য আবু সুফিয়ান খাঁন আবেদী আল-কাদেরীর স্বাক্ষরে ও অনুমতিক্রমে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ইসলামী ফ্রন্ট চাঁদপুর জেলা শাখার সহ-সভাপতি এ এইচ এম আহসান উল্লাহ।

এ সময় তিনি বলেন, “ইসলামের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সমাজে নানা মতবিরোধ ও মতানৈক্য রয়েছে। আর সব মতবিরোধ বা মতানৈক্যই সমাধানযোগ্য। প্রিয় নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের যুগ থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত মুসলমানদের মধ্যে মোনাফিক নামে একটি সম্প্রদায় রয়েছে। যারা বাহ্যিক বেশভূষায় পাক্কা মুসলমান কিন্তু অন্তরে কুফুরীতে ভরপুর। তাদের ব্যাপারে কোরআন মাজিদে একখানা স্বতন্ত্র সূরা ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় বেশ কিছু আয়াতে কারীমা রয়েছে, যেখানে তাদের চরিত্র সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে আলাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়ে দিয়েছেন, তাদের স্থান হচ্ছে জাহান্নামের সর্বনিম্নস্তরে। তাদের কাজই হচ্ছে প্রিয় নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের শানে বেয়াদবি করা এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা। ঈমানদার মুসলমানরা যখন প্রিয় নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের প্রতি প্রশংসা, গুণগান ও ভক্তি শ্রদ্ধা জানিয়ে কোনো আমল করবে তখনই এই মোনাফিকরা র্শিক, বিদ্আত বলে নানা ফতোয়াবাজি শুরু করে দেয়। এই মোনাফিক সম্প্রদায় কেয়ামত পর্যন্ত থাকবে। আপনারা লক্ষ্য করছেন, নানা মতবিরোধের মধ্যে একটি বিষয় নিয়ে প্রকাশ্য মতবিরোধ মুসলমানদের মধ্যে খুব বেশি দেখা যায়, তা হচ্ছে মিলাদ ও কিয়াম। অর্থাৎ প্রিয় নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের গুণগান সম্বলিত মিলাদ মাহফিল আর এই মিলাদ মাহফিলে নবীজীকে দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শনার্থে ‘ইয়া নাবী সালামু আলাইকা’ বলে সালাম দেয়া। এই মিলাদ ও কিয়াম জায়েজ কি নাজায়েজ এ নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। আর নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে আলেমদের মধ্য থেকেই। তাই দুই পক্ষের আলেমগণ সহীহ নিয়তে সমাধানের লক্ষ্যে বসলেই এ বিতর্কের অবসান হয়ে যায়। এসব বিষয়ে ওহাবী ও মওদুদীবাদীরা মনগড়া ফতোয়াবাজি করে থাকে। কিন্তু তারা কখনো এসব বিষয়ে সুন্নী আলেমদের সাথে সঠিক সমাধানের লক্ষ্যে বাহাস-মোবাহাসায় বসতে চান না, এমনকি অতীতে দেশের কোথাও কোথাও বাহাসে বসলেও তারা (ওহাবী পন্থী) পরাজিত হয়েছেন। চাঁদপুরেও গত বছরের জুলাই মাসে তারা সুন্নী আলেমদের সাথে মিলাদ-কিয়াম ও হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাাম যে নূরের সৃষ্টি তা নিয়ে বাহাসে বসবেন বলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তারা (ওহাবী-কাওমী আলেমরা) দূরে সরে যান। হাজীগঞ্জেও তেমন একটি ঘটনা ঘটল। প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জের মকিমাবাদ গ্রামের একটি বাড়িতে ইছালে ছাওয়াবের মাহফিলে মিলাদ অনুষ্ঠানে প্রিয় নবী সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেন হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের খতিব মুফতি আঃ রউফ। সেখানে অনেক আলেমসহ শত শত মুসল্লির সামনে মিলাদ-কিয়াম করলেও মুফতি আঃ রউফসহ তার অনুসারী ক’জন কেয়াম না করে বসে ছিলেন। কিয়াম শেষে মুনাজাতের আগে মুফতি আঃ রউফ মিলাদ-কিয়ামের বিরোধিতা করে নানা যুক্তি দেখিয়ে তিনি এটিকে র্শিক-বিদ্আত বলে ফতোয়া দিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন। তিনি সেদিন তার বিতর্কিত আলোচনায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে হুজুর সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাামের ইল্মে গায়েবের বিষয়টি নিয়ে আসেন। যদিও মিলাদ-কিয়াম ও ইল্মে গায়েব পৃথক ভিন্ন দুটি বিষয়। তখন সে মজলিশে উপস্থিত সুন্নী আলেমদের পক্ষে হাফেজ মাওঃ জুনায়েদ মুফতি আঃ রউফকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হুজুর আপনি যে কথাগুলো বললেন আমাদের বক্তব্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত। তাই এ বিষয়ে আপনার সাথে আমরা সুন্নী আলেমরা বসতে চাই। তখন তিনি তার অফিসে যেতে বললেন। এরপর আমরা গত ১০/১২/২০১৫খ্রিঃ তারিখে মাওঃ আবু সুফিয়ান খান আবেদী আল-কাদেরীর নেতৃত্বে মাওঃ মোহাম্মদ আলী নক্শবন্দী, হাফেজ মাওঃ জুনায়েদ ও মাওঃ গাজী মোঃ আঃ রাহীম বড় মসজিদের খতিব মুফতি আঃ রউফের অফিসে যাই। সেখানে তাঁর সাথে নানা কথোপকথনের পর উভয় পক্ষের ৫ জন করে আলেম ১২/১২/২০১৫খ্রিঃ তারিখে তাঁর (মুফতি আঃ রউফের) অফিসে বসার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ১১ ডিসেম্বর মুফতি আঃ রউফের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তারা বসবেন না বলে জানিয়ে দেন। ১২ ডিসেম্বর সকালে তার সাথে পুনরায় যোগাযোগ করা হলে তিনি একই কথা জানান। তখন আমরা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে দেখা করে আমাদের বক্তব্য উপস্থাপন করি। আমরা ওইদিন ১৪ ডিসেম্বর হাজীগঞ্জে সুন্নী মহাসমাবেশের ঘোষণা দেই। বিষয়টি জানতে পেরে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ১৩ ডিসেম্বর উভয় পক্ষকে নিয়ে থানায় বসার কথা আমাদেরকে জানান। ১৩ ডিসেম্বর যথাসময়ে আমরা সুন্নী আলেমগণ থানায় উপস্থিত হলেও বড় মসজিদের ইমাম আঃ রউফ আসেননি। এসেছেন হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের সাবেক ইমাম হাফেজ রফিক আহমদসহ মুজাহিদ কমিটির কয়েকজন। তারা তখন বলেন, আমরা ওইসব বিষয় নিয়ে আসিনি, আমরা এসেছি ১৪ ডিসেম্বর বড় মসজিদ প্রাঙ্গণে আমাদের চরমোনাইর পীরসাহেবের মাহফিল হবে, সেটি যাতে সুন্দরভাবে হয়, আর কাছাকাছি স্থানে একই সময়ে সুন্নী সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে সেটি নিয়ে কথা বলার জন্যে। তখন প্রশাসনের কর্মকর্তাগণসহ উভয় পক্ষের কথোপকথনের পর শর্ত সাপেক্ষে আমরা ১৪ ডিসেম্বরের সুন্নী সমাবেশ স্থগিত করি। একই সাথে ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অফিসে উভয় পক্ষের ৫ জন করে আলেমদের নিয়ে বসার। থানায় ১৩ ডিসেম্বরের বৈঠকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং এএসপি সার্কেলও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু দেখা গেলো যে, ১৮ ডিসেম্বর আমরা সুন্নী আলেমরা যথাসময়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের অফিসে হাজির হলেও মুফতি আঃ রউফসহ ওহাবী-কাওমী আলেমরা আসেননি। সেদিন আমি মাওঃ আবু সুফিয়ান ছাড়াও স্বনামধন্য আলেম মুফতি আঃ রব আল কাদেরী, মুফতি রুহুল আমিন মানছুরি, মুফতি সাইদুল ইসলাম মোনাজেরী, আলামা হুজ্জাতুল্লাহ নক্শবন্দী মোজাদ্দেদী, আল্লামা আবুল হাশেম শাহ্ মিয়াজী, আল্লামা মোহাম্মদ আলী নক্শবন্দীসহ আরো অনেক আলেম উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ জনাব শাহ্ আলমও উপস্থিত ছিলেন। অবশেষে সেদিনও প্রতিপক্ষ না আসায় সে বৈঠকে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অধ্যাপক আঃ রশিদ মজুমদার পুনরায় ১২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে উভয় পক্ষের সর্বোচ্চ ৭ জন করে আলেম তর্কিত ওইসব বিষয় নিয়ে বসার সিদ্ধান্ত দেন। আর এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ উভয় পক্ষকে চিঠি দেবেন বলে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান। অবশেষে ১২ জানুয়ারি মঙ্গলবার বৈঠকটিও হলো না। নানা অযৌক্তিক অজুহাত দেখিয়ে প্রশাসন থেকে বৈঠক না করার বিষয়টি আমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা চেয়েছি ওহাবী-কাওমীরা ইসলামের মৌলিক বিষয় নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে যে মনগড়া ফতোয়াবাজি করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে আসছে, তা নিরসনের জন্যে উভয় পক্ষের আলেমরা বসে সমাধান করা। কিন্তু তারা সুন্নী আলেমদের মুখোমুখি না হয়ে মোনাফেকদের মতো প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বার বার পিছু হটে। তারা বাহাসে না এসে মোনাফিক কাপুরুষের মতো গোপনে গোপনে লিফলেট ছাড়ে। এসব করে তারা সমাজে বিতর্ক ও মতানৈক্য জিইয়ে রেখে মুসলমানদের বিভক্ত করে ইহুদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। আমরা সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে চাই, ভবিষ্যতে এসব বিষয় নিয়ে সমাজে যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে এর জন্যে দায়ী থাকবেন হাজীগঞ্জ বড় মসজিদের খতিব মুফতি আঃ রউফসহ তার মতবাদে বিশ্বাসী ওহাবী আলেমরা। একইভাবে দায়ী থাকবেন নেপথ্যে যারা তাদেরকে সহযোগিতা করছেন। তাদের বিচার আল্লাহর উপর ছেড়ে দিলাম।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য রাখেন আলীগঞ্জস্থ হজরত মাদ্দাহ্ খাঁ (রঃ) মাজার সংলগ্ন মসজিদের ইমাম স্বনামধন্য আলেম মুফতি আঃ রব আল কাদেরী, চান্দ্র দরবার শরীফের শাহাজাদা আল্লামা হুজ্জাতুল্লাহ নক্শবন্দী মোজাদ্দেদী, ধেররাস্থ মাদ্রাসায়ে আবেদীয়ার সুপার আল্লামা মোহাম্মদ আলী নক্শবন্দী। এ সময় প্রায় অর্ধশত আলেমদ্বীসহ হাজীগঞ্জে কর্মরত জাতীয় ও স্থানীয় সকল দৈনিক সমূহের সংবাদকর্মীগণ উপস্থিত ছিলেন।

জহিরুল ইসলাম জয়, হাজীগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট

|| আপডেট: ১০:০০ পিএম, ১২ জানুয়ারি ২০১৬, মঙ্গলবার

এমআরআর  

Share