চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি ও দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক মো. সফিক উল্যাহ সরকারের প্রথম নামাজে জানাজা শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বাদ জুম্মাহ চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এরপর বাদ আসর মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের কালিপুরস্থ গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা শেষে সেখানেই পারিবারিক গোরস্থানে মরহুমকে চিরনিদ্রয় সমাহিত করা হয়।
সাংবাদিক, রাজনিতি, ক্রীড়া সংগঠক ও সমাজসেবকসহ বহু সমাজিক কর্মকান্ডের সাথে জরিত সফিক উল্যাহ সরকারের নামাজে জানাজায় জেলার প্রশাসনিক, রাজনিতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অঙ্গণেরসহ সর্বস্থরের মানুষের উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়।
বাদ জুম্মাহ মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজাপূর্বক সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন চাঁদপুরের জেলা প্রাসক মো. আব্দুস সবুর মন্ডল, জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও পৌর মেয়র নাছির উদ্দিন আহমেদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওচমান গণি পাটোয়ারীর পরিচালনায় আরো বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ইকরাম চৌধুরী, বর্তমান সভাপতি বিএম হান্নান, সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী, সাবেক সভাপতি শাহ মো. মাকসুদুল আলম, জেলা আওয়ামীলীগ সাবেক সহ-সভাপতি ইউছুফ গাজী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. সেলিম আকবর, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা বাবু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান আরশাদ আলী, জেলা বিএনপির সিনিয় যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. সলিমউল্লা সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক আক্তার হোসেন মাঝি, দেওয়ান মো. সফিকুজ্জামান, জেলা আ’লীগ সাবেক যুগ্ম সম্পাদক অ্যাড. জহিরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুল হক মন্টু পাটোয়ারী, তাফাজ্জল হোসেন এসডু পটোয়ারী, অ্যাড. মজিবুর রহমান ভূইয়া।
মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন সফিক উল্যাহ সরকারের ছোট ভাই ষাটনল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিক উল্যাহ সরকার।
জেলা প্রশাসক তার বক্তব্যে বলেন, ‘যে কোনো মৃত ব্যক্তির সামনে দাঁড়িয়ে আমি কথা সাধারণত বলি না। প্রিয় মানুষের মুত্যু মেনে নেয়াটা কষ্টের। তবুর পৃথীবির নিয়মেই আমাদের একদিন চলে যেতে হবে। গত ৬ মাসে মাসে আমি আমার বাবা ও শ্বশুরকে হারিয়েছি। মরহুম সফিক উল্যাহ সরকার চাঁদপুরে আমার প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। একজন স্পষ্টবাদি মানুষ হিসেবে আমি ওনাকে চিনি। তিনি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক।’
জেলা প্রশাসক আরো বলেন, সেফিক উল্যাহ সরকার সাংবাদিকতা, রাজনৈতিক, সামাজসেবা ও ক্রীড়াঙ্গণসহ সকল ভালো কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। আর এতেই বলে দেয় তিনি কতটা ভালো মানুষ হতে পেরেছে। আমরা মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। পাশাপাশি মরহুমের শোকাহত পরিবারের প্রতি গভির সমবেদনা জানাচ্ছি।
প্রসঙ্গত শুক্রবার ০৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ৬টা ৫০ মিনিটে ঢাকা সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি এবং দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রাকাশক এ কে এম শফিক উল্যা সরকার এক বর্ণাঢ্য ও কর্মময় জীবনের অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন একাধারে ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, রাজনীতিবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, শিক্ষানুরাগী, সমাজসেবক ও সংবাদপত্র শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি কয়েকবছর জেলা বিএনপির ক্রীড়া ও আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এর আগে জেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বৃহত্তর মতলব উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী ছিলেন তিনি। তার প্রতিনিধি হিসেবে শফিক উল্যা সরকার চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিরও সদস্য ছিলেন।
এর আগে মোফাজ্জ্বল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রতিমন্ত্রী ও জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী থাকাকালে শফিক উল্যা সরকার ছিলেন তার চাঁদপুরের প্রতিনিধি। শফিক উল্যা সরকার চাঁদপুর শহরের ক্রীড়া সংগঠন নাজিরপাড়া ক্রীড়া চক্রের সভাপতি, প্রফেসরপাড়া ক্রীড়া চক্রেরও প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যকরী কমিটির সদস্য ও চাঁদপুর ক্লাবের কার্যকরী কমিটির সদস্য হিসেবে জেলার ক্রীড়াঙ্গনে তার উপস্থিতি ছিল সরব।
তিনি তার নিজ এলাকা মতলব উত্তরের ষাটনলে উচ্চশিক্ষার জন্য ‘কালিপুর স্কুল এন্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠাতা করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই কলেজের গভর্নিংবডির সভাপতি ছিলেন। এছাড়া ইমামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিরও সভাপতি তিনি।
মরহুমের পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি প্রায় এক মাস ধরে লিভারজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি থাইল্যান্ডের একটি হাসপাতালে মেডিক্যাল চেকআপ করতে যেয়ে তার শরীরে অসুস্থতার বিষয়টি ধরা পড়ে। পরবর্তীতে সেখানে আবারো চিকিৎসা নিতে যান তিনি। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় রেফার করা হয়।
গত ১৬ জানুয়ারি তিনি ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন। ওই হাসপাতালের ৬০৪ নম্বর বেডে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দিন দিন অবস্থার অবনতি হতে থাকে তার। গত ৩ ফেব্রুয়ারি সেখান থেকে তাকে ঢাকাস্থ সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের ১০০৪ নম্বর কেবিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
আশিক বিন রহিম, চীফ করেসপন্ডেন্ট
: আপডেট ৭:২৬ পিএম, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ