মরহুম আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ. ওয়াক্ফ এস্টেট শতাব্দীকাল থেকেই এ অঞ্চলের মানুষের সেবা দিয়ে আসছে

দেশের একটি খ্যাতিমান মসজিদ হচ্ছে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ। অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর কারণে সাধারণ মানুষের কাছে এ মসজিদটি দৃষ্টি কেড়েছে। দানবীর আলহাজ্ব আহমদ আলী পাটোয়ারী (রহ.) হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদের ওয়াকীফ, প্রতিষ্ঠাতা , প্রথম মোতওয়াল¬ী। মসজিদের প্রতিষ্ঠাকাল ১৩৩৭ বঙ্গাব্দ।

২৮,৪০৫ বর্গফুট আয়তনের এ বিশাল মসজিদটির রয়েছে- সুউচ্চু কারুকার্য খচিত একটি মিনার। এটি শুধু চুন-সুরকি আর ইট দিয়ে নির্মিত। উদ্যোক্তা এ মসজিদ নির্মাণের জন্য তিনি নিজেই ইটভাটা নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি আহম্মদ আলী পাটওয়ারী রহ. ওয়াক্ফ এস্টেটের তত্ত¦াবধায়নে চলে আসছে। ঐতিহাসিক এ মসজিদের সাথেই আলীয়া মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদরাসা, নূরানী মাদরাসা, ফোরকানীয়া মাদরাসা, ইসলামীয়া পাঠাগার, বেওয়ারিশ লাশ দাফন এবং দু:স্থ-অসহায়দের সহযোগিতা প্রদানসহ ধর্মীয় কার্যাবলী চালু থাকায় ধর্ম প্রাণ মুসল্লিরা এ মসজিদে জুমাতুল বিদা নামাজ আদায়ে দূর থেকে আসেন।

তাই হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদে হাজার-হাজার আলেমেদ্বীন, হাজী সাহেবান অলি দরবেশ, বুজুর্গানে দ্বীনগণের সাথে প্রতি ওয়াক্ত নামাজ, জিকির আজকার, তাসবিহ্-তাহলিল, এবাদত বন্দেগীর সাথে নিয়মিত ‘জুমা’ এবং ‘জুমআতুল’ বিদা’ নামাজের বিশাল জামাতে শরীক হয়ে দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণ লাভ করুন। আহমাদ আলী পাটওয়ারী ওয়াকৃ এস্টেট শতাব্দীকাল যাবত ধর্ম-কর্ম, শিক্ষা দীক্ষা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও সামাজিক সেবা দিয়ে যাচ্ছে অত্র এস্টেট কর্তৃক অত্র অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি কিংবা বড় পরিসরের প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হচ্ছে।

যার ফলে হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্সকে দিন দিন মুসরিøর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর কর্ম পরিধিও বেড়ে গেছে । তাই আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ.ওয়াক্ফ এস্টেট শতাব্দীকাল থেকেই এ অঞ্চলের মানুয়ে সেবা দিয়ে আসছে।

সেবা সমূহ : ১। সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী, ঐতিহাসিক মসজিদ, ২। সবচেয়ে বেশি সংখ্যক সম্মানীত মুসুল্লী ব্যবস্থাপনা, ৩। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ বেশ কয়েকটি মার্কেট ভবন, ৪ । সবচেয়ে বেশি দোকান-পাট, বাসা- বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ৫। সবচেয়ে বড় আলীয়া মাদ্রাসা (বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী) ৬। সবচেয়ে বড় কওমী মাদ্রাসা (বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী),

৭। সবচেয়ে বেশি মানুষের কর্মসংস্থান, ৮। সবচেয়ে বেশি এতিম, দুস্থঃ, অসহায়, নিঃস্ব শিক্ষার্থী থাকা খাওয়া ব্যবস্থাপনা। আমরা জানি ধর্ম মানুষকে সুন্দর সমাজ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করে । যার প্রেক্ষিতে কল্যাণের পথ প্রশস্থ থেকে প্রশস্থতর হয়। তারই ধারাবাহিকতায় অত্র এস্টেট ধর্মীয় সেবার এক অন্যন্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে, যুগ যুগ ধরে কল্যাণ বা সেবা মূলক কাজে অবদান রেখে যাচ্ছে।

আহমাদ আলী পাটওয়ারী ওয়াক্ফ এস্টেট কর্তৃক উল্লেখযোগ্য সেবাধর্মী কাজ যথাক্রমে:১. ২৪ ঘন্টা মসজিদ খোলা রেখে নিরবিচ্ছিন্ন এবাদতের ব্যবস্থা,২. প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের নামাজ এবং নামাজের প্রাসঙ্গিক সেবা প্রদান ব্যবস্থাপনা (নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ৯০০ ফিট গভীর থেকে পানি উত্তোলন পূর্বক ২৪ ঘন্টা আর্সেনিক এবং আয়রন মুক্ত পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ, পাখা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, ইমাম মোয়াজ্জিনসহ স্টাফ- কর্মচারী ব্যবস্থাপনা), ৩. উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী জুমাতুল বিদাসহ বছরে লড়া-লড়া মানুষের নামাজের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান, ৪. সাপ্তাহিক মাসিক ও অন্যান্য দিবসে মাহফিলসহ ধর্মীয় আচার- অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা প্রদান,


৫. পবিত্র রমজান মাসে সম্মানীত রোজাদারগণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থাপনা, ৬. রোজাদার, সম্মানীত মুসল্লীগণসহ এতেকাফ কারীগণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা . স্মরণের ব্যবহারের জন্য বাজারের দোকানে পানি নেয়ার ক্ষেত্রে আয়রন ও আসেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি নেওয়ার সুযোগ প্রদান, ৮. পয়ঃনিষ্কাশনসহ চব্বিশ ঘন্টা টয়লেট ব্যবস্থাপনা ৯. বড় মসজিদ কমপ্লেক্সের বিশাল অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ, সংস্কার ও উন্নয়ন। ১০. এস্টেটের সম্পদ সম্পত্তি হেফাজত, সংস্করণ ও উন্নয়ন,

১১. যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সেবা মান ধরে রাখার লক্ষ্যে এস্টেটের স্থায়ী আয়ের উৎসের জন্য পর্যায়ক্রমে বহুতল ভবন নির্মাণ, ১২. কর্মসংস্থানের বিশাল ব্যবস্থাপনা হিসাবে সম্মানীত ভাড়াটিয়াদের নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবসার পরিবেশসম্মত সুবিধা প্রদান, ১৩, মাদ্রাসা সমূহের সংস্কার, উন্নয়ন ব্যবস্থাপনায় সাধ্যমত সহযোগিতা প্রদান, ১৪. মসজিদ, মাদ্রাসা নিরাপত্তা প্রহরী ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনা, ১৫. বাজারে ক্রেতা হিসাবে কিংবা অন্য কোন প্রয়োজনে আগত মা-বোনদের প্রাকৃতিক প্রয়োজন মিটানোর সুযোগ এর নিরবচ্ছিন্ন ব্যবস্থা প্রদান, ১৬. বাজারে অগ্নি নির্বাপনে ফায়ার সার্ভিসকে তাৎক্ষণিক পানি সরবারাহের সুযোগ প্রদান,

১৭. দুঃস্থ, অসহায় ব্যক্তিদের সাধ্যমত সহযোগিত, দান-অনুদান প্রদান, ১৮. যে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে সহযোগিতা এবং সামাজিক কার্যক্রমে সাধ্যমত আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, ১৯. ধর্মীয় এবং রাষ্ট্রীয় দিবস সমূহ উদযাপনে সহযোগিতা প্রদান, ২০. মসজিদ ছাড়াও মার্কেট সমূহের সার্বিক নিরাপত্তায় প্রহরী, সিসি ক্যামরা ব্যবস্থাপনা, ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত এর ব্যবস্থা,

২১. সাধ্যমত ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দান অনুদান, ২২ মৃত ব্যাক্তি বা তার ওলি ওয়ারিশদের মসজিদের পাশে শায়িত হওয়ার ইচ্ছে পূরণে দাফন এর সুযোগ প্রদান। (মৃত্যুর পর মসজিদের পাশে যারা শায়িত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন, যারা ওছিয়ত করেন, কিংবা মৃত্যুর পর যাদের আত্মীয় পরিজন মসজিদের পাশে মাটি বা কবর দেওয়ার জন্য প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন)।

দাফনের জন্য কোন ধরণের বিনিময় বা টাকা পয়সা নেয়া হয় না। এমনকি দাফন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে, কেউ আর্থিকভাবে দান সহযোগিতা করতে চাইলে, তা গ্রহণ করা হয় না। ফি সাবিলিল্লাহ হিসাবে দাফন কার্যক্রম ২৩. সম্পন্নকরা হয়। তা ছাড়াও লা-ওয়ারিশ/ বে ওয়ারিশ লাশ দাফন । মহৎ হৃদয়ের অধিকারী আহমাদ আলী পাটওয়ারী (রহ.) সর্ব সাধারণের সেবার জন্য মসজিদ মাদ্রাসায় সম্পদ সম্পত্তি দান এর পাশাপাশি পারিবারিক কবরস্থানকে মৃত্যুর পর সর্ব সাধারণের দাফনের জন্য তিনি ফি ছাবিলিল্লাহ হিসাবে উৎসর্গ করেন। নেক কাজে ছদকায়ে জারিয়া হিসাবে যারা দান সহযোগিতা করেছেন এবং আরো যারা দান সহযোগিতা করবেন আল্লাহ আমাদের সকলকে দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণ দান করুন।

হাজীগঞ্জ বর্তমানে একটি উপজেলা মাত্র । উপজেলা পর্যায়ে-একটি ওয়াক্ফ এস্টেট, জনকল্যাণ মূলক সেবা কার্যক্রমের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে- তার পরিচালনাধীন এবং আওতাধীন প্রতিষ্ঠানসহ সরকারী , আধা সরকারী বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলোর ছায়াতল থেকে সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য পরিমানে সেবা মূল্য বা অর্থ নিন্মোক্ত কর্তৃপক্ষ বা সংস্থাকে প্রদান করে যাচ্ছে। ১. বিদ্যুৎ বিল বাবদ অর্থ প্রদান । ২. পৌর ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স বাবদ অর্থ প্রদান । ৩. ওয়াক্ফ কন্ট্রিবিশান বাবদ অর্থ প্রদান । ৪. ভ্যাট বাবদ অর্থ প্রদান । ৫. রাজস্ব খাজনা বাবদ অর্থ প্রদান । ৬. পরিবেশ ছাড় পত্র বাবদ অর্থ প্রদান ।

৭. অগ্নি নির্বাপন ফি বাবদ অর্থ প্রদান ৮. জাতীয় দিবসসহ সামজিক কার্যক্রমে অর্থ প্রদান, ইত্যাদি । হাজীগঞ্জ উপজেলায় পর্যায়ে ধর্ম-কর্ম, শিক্ষা-দীক্ষা, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেবা প্রদান মূলক বিশাল কার্যক্রম সম্পাদন পূর্বক রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংস্থাকে নিয়ম মোতাবেক বিভিন্ন ট্যাক্স বা ফি বাবদ অর্থ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে।

দেশের অন্য কোন উপজেলায় উল্লেখিত সেবাধর্মী কাজের ক্ষেত্রে এ ধরনের নজির আছে বলে মনে হয় না। যে সকল ব্যক্তি সংস্থা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ সর্বত্মক সহযোগিতা প্রদান করেছেন,বর্তমানে যারা করছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দুনিয়া এবং আখেরাতের কল্যাণ দান করুন।

তথ্য সূত্র : অধ্যক্ষ ড.মো.আলমগীর কবির পাটওয়ারীর সম্পাদনায় আহমাদ আলী পাটওয়ারী রহ. ওয়াকফ এস্টেট এবং হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদ কমপ্লেক্স এর‘ ‘স্মারক গ্রন্থ ’। সম্পাদনা-সাপ্তাহিক হাজীগঞ্জ এর ভার-প্রাপ্ত সম্পাদক আবদুল গনি। ৫ এপ্রিল ২০২৫, চাঁদপুর।

৮ এপ্রিল ২০২৫
এজি

MAILER-DAEMON@yahoo.

Share