চাঁদপুর

চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে বাড়ছে রোগী কমছে না সংকট

অপর্যাপ্ত চিকিৎসক, নার্স, চিকিৎসা সরঞ্জাম, অবকাঠামো-সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতাল। রোগীর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়লেও, চিকিৎসক সংকট মোকাবেলা করা যায়নি।

রোগীর বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে দুর্ভোগ। অনেক রোগীর চাপ বেশি হলে চিকিৎসকের অভাবে পাঠানো হচ্ছে অপর চিকিৎসকের কাছে।

জেলার সিকি কোটি মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল সরকারি হাসপাতালটি ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও তার কার্যক্রম তেমন উন্নতি হয়নি। এর এক বছর পর নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে হাসপাতালের বারান্দায়, ওয়ার্ডের ভেতরে গাদাগাদি করে চিকিৎসক-কর্মচারী পদায়ন, চিকিৎসা সরঞ্জামসহ অন্যান্য সেবা আজও শুরু হয়নি।

এদিকে হাসপাতালের নির্ধারিত ২৫০ শয্যার প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার কোনো বাস্তবায়ন হয়নি আজও। প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ডবয়, আয়াসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ শূন্য।

দীর্ঘদিন ধরে সিনিয়র সার্জারি, সিনিয়র মেডিসিন, এনেসথেশিয়া, নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ, ইউনানী মেডিকেল অফিসার, রেডিওলজি, ইমারজেন্সি মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল অফিসার ইউনানী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, উপসেবা তত্ত্বাবধায়কের অনুমোদিত পদ সম্পূর্ণ শূন্য অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া দুটি অ্যাম্বুলেন্স, আলট্রাসোনোগ্রাম, কম্পিউটার অকার্যকর হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। সাধারণ অনেক পরীক্ষাই হয় না এখানে।

১৫৯ জন চিকিৎসক ও সিনিয়র স্টাফ নার্স থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৮৪ জন। বাকি ৭৫ জনের কোটা দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে।

হাতে গোনা দু’একজন বাদে অধিকাংশের বিরুদ্ধে রয়েছে দায়িত্ব পালনে উদাসীনতাসহ বিভিন্ন অভিযোগ।

নানা প্রভাব খাটিয়ে অনেক চিকিৎসকই এখানে আছেন দীর্ঘদিন। কিন্তু তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের ভালো চিকিৎসা পেতে ক্লিনিকে যাওয়ার উপদেশ দিয়ে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

হাসপাতালে নিয়মিত ঘোরাফেরা করে বিভিন্ন ক্লিনিকের দালাল চক্র। এরা হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তির জন্য মোটা অঙ্কের কমিশন পায়। অন্যদিকে অভিযোগ আছে, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর যোগসাজশে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, কম্পিউটার মাঝেমধ্যে অকার্যকর করে রাখা হয়। চিকিৎসকের মতোই নার্সের অনেক পদও শূন্য। এমনিভাবে চিকিৎসক ও নার্সসহ ৭৫ জনের কোটা শূন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

আবাসিক অফিসার ২ জনের মধ্যে আছেন ১ জন। অ্যানেসথেটিস্ট ২ জনের মধ্যে আছেন ১ জন। ইমারজেন্সি কেল অফিসার ৩ জনের মধ্যে আছেন ২ জন। ১৪ জন সহকারী রেজিস্ট্রারের মধ্যে আছে ১০ জন। বিষয়ভিত্তিক ১৪ জন মেডিকেল অফিসারের মধ্যে আছে মাত্র ৭ জন। ৮৮ জন সিনিয়র স্টাফ নার্সের মধ্যে আছে মাত্র ৪০ জন।

প্রতিদিন হাজার হাজার লোক জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে এলে লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে চিকিৎসা নিতে হয় হতভাগ্য রোগীদের। তিন-চার ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও চিকিৎসাসেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও কম নয়। হাসপাতালে অনেক চিকিৎসকের চেম্বারই বন্ধ থাকে দীর্ঘ সময়ে। বেশির ভাগ ডাক্তার আসেন বেলা ১২টার পর।

চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারণেই অনেক রোগীদের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তারপও রোগীরা উন্নত সেবা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। চাঁদপুর সদর হাসপতালে শহরের বাইরে থেকে শরিয়তপুর. মাদারীপুরসহ বিভিন্ন জেলার রোগীরা এসে ভীড় জামায়। এতে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি, যাতে দ্রুত সদর হাসপতালের চিকিৎসক সংকট দূর করে। আশা করি দ্রুত সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।’

দালাল চক্রের বিষয়ে বলেন, ‘চাঁদপুর সদর হাসপতাল দালাল মুক্ত রাখতে আগেও অভিযান চালানো হয়েছে। যদিও এখন দালালদের তেমন আনাগোনা নেই। আমরা মডেল থানার সহযোহিতায় আবার হাসপতালে দালাল মুক্ত রাখতে অভিযান চালাবো। যারা হাসপাতালে অসহায় রোগীদের সাথে প্রতারণা করে তাদের ছাড় দেয়া হবে না।’

এ সংক্রান্ত আগের পর্বের প্রতিবেদনগুলো দেখুন.৩য় পর্ব..ওয়ার্ডে নৈশ প্রহরী নেই : নিরাপত্তা সংকটে চাঁদপুর সরকারি হাসপাতাল

২য় পর্ব-চাঁদপুর সরকারি হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম বন্ধ : নেই চক্ষু ডাক্তার

১ম পর্ব চিকিৎসক সঙ্কট : চাঁদপুর সদর হাসপাতালের চিকিৎসায় পরিচ্ছন্নকর্মী

About The Author

প্রতিবেদক- শরীফুল ইসলাম
Share