এটি অ্যালকোহল এ্যাডিকশন, অ্যা্লকোহলিজম, অ্যালকোহল ডিপেন্ডেন্স সিন্ড্রোম নামে পরিচিত। ডায়াগোনষ্টিক এন্ড স্ট্যাটিস্টিক ম্যানুয়াল অফ মেন্টাল ডিজঅর্ডার [DSM (Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders)] অনুসারে এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক রোগ কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি এর খারাপ ফলাফল জানা সত্ত্বেও অ্যালকোহল সমৃদ্ধ পানীয় গ্রহন করে থাকে বা অ্যালকোহলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অনেকেই এর অনেক ধরনের সংজ্ঞা দিয়েছেন। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি সংজ্ঞা এর যাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যারা মদ্যপান করে থাকে তাদের দুইভাগে ভাগ করা যায়-
(১) যাদের আচরণ অসামাজিক (anti-social) এবং বিনোদনের জন্য মদ্যপান করে থাকে।
(২) যারা অনেক দুশ্চিন্তা করে এবং অনেকদিন মদ্যপান না করে থাকতে পারে, তবে একবার মদ্যপান শুরু করলে সহজে তা ছাড়তে পারে না।
অনিয়ন্ত্রিতভাবে মদ্যপান করলে তাকে অ্যালকোহলের অপব্যবহার বলা হয়।
কারণ
অ্যালকোহল যেসব উপাদান দ্বারা তৈরি সেসব উপাদান কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রসহ দেহের প্রত্যেক প্রকারের টিস্যুর উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দীর্ঘদিন যাবৎ মদ্যপান করলে মস্তিষ্ক এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। সময়ের সাথে সাথে এই নির্ভরশীলতা বাড়তেই থাকে, তাই একজন ব্যক্তি যখন এটি ছাড়তে চায় তখন বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয় এবংবিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। শুধুমাত্র শারীরিক নির্ভরশীলতাই অ্যালকোহলিজমের একমাত্র কারণ নয়। এটি বংশ ও জিনগত, লিঙ্গগত, সংস্কৃতিগত এবং মানসিক কারনেও হতে পারে।
লক্ষণ
এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:
অতিরিক্ত মদ্যপান (Abusing alcohol) বিষণ্নতাজনিত সমস্যা (Depressive or Psychotic symptoms)
ঔষধের অপব্যবহার (Drug Abuse) বিষণ্নতা (Depression)
উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা (Anxiety and nervousness) আক্রমণাত্মক আচরণ (Hostile behavior)
ডিলিওশন অথবা হ্যালুসিনেশন (Delusions or Hallucinations) অতিরিক্ত রাগ (Excessive anger)
রক্তবমি (Vomiting blood) ধূমপানজনিত সমস্যা (Smoking problems)
উচ্চারণে অস্পষ্টতা (Slurring words) হীনমন্যতায় ভোগা (Low selfesteem)
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
নিম্নলিখিত বিষয়ের কারণে এই ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়ঃ
অনিয়ন্ত্রিতভাবে এবং মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে অ্যালকোহলের উপর ব্যক্তি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। যারা খুব কম বয়সেই অ্যালকোহলের প্রতি আসক্ত হয়ে যায় তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
বাবা-মা বা কাছের আত্নীয়-স্বজনের যদি মদ্যপানের অভ্যাস থাকে তবে তার দ্বারা সন্তান প্রভাবিত হতে পারে। যারা দুশ্চিন্তা এবং মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, তাদের অ্যালকোহলের প্রতি আকর্ষন বেশি থাকে।
কিছু কিছু ঔষধ এ্যালকোহলের সাথে অন্তঃপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে যা এর বিষক্রিয়ার মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই জাতীয় ঔষধ গ্রহন করার সময় মদ্যপান করলে ঔষধের কার্যকারিতা অতিরিক্ত পরিমানে কমে বা বেড়ে যেতে পারে, যা বেশিভাগ সময়ই বিপজ্জনক অবস্থার সৃষ্টি করে।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতি- শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
টিপস্-
মদ্যপান জনিত সমস্যার সঙ্গে মোকাবেলার জন্য প্রয়োজন অভ্যাস ও জীবনধারার পরিবর্তন।
সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বন্ধু এবং পরিবারকে এটি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতে হবে যে আপনি মদ্যপান পান করেন না, এমন ব্যক্তি থেকে দূরে থাকতে হবে যারা আপনার ক্ষতিসাধন করতে পারে।
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলে হবে । উদাহরণস্বরূপ- পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্য সম্মত খাদ্যাভাস আপনাকে মদ্যপান ছেড়ে দিতে সাহায্য করতে পারে।
অ্যালকোহল সম্বৃদ্ধ যে কোন খাবার বা পানীয় পান থেকে বিরত থাকুন। আপনার অনেক কার্যক্রমের সাথে মদ্যপান জড়িত থাকতে পারে, অন্যান্য শখ বা বিনোদনের দ্বারা তা প্রতিস্থাপন করুন।
মদ্যপানের অভ্যাস গড়ে ওঠার শুরুতেই যদি তা নিয়ন্ত্রন করা যায় তবে এই সমস্য চরম পর্যায়ে পৌঁছাবে না। মা-বাবা, কাছের মানুষ এবং বিনোদন জগতের বিভিন্ন মডেলদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে বিশেষ করে তরুন-তরূনীরা মদ্যপানে আসক্ত হয়ে পড়ে। সেজন্য সামাজিক এবং পারিবারিকভাবে আমাদেরকে আরো সচেতন হতে হবে।
কিশোরদের মাঝে নিম্নলিখিত লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখে সতর্ক হতে হবে যে এরা মদ্যপানের সাথে জড়িত কিনা:
* কাজকর্ম, শখ এবং নিজের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।
* রক্তরাঙা চোখ, অসংলগ্ন কথা, সমন্বয়হীনতা এবং স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
* বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি।
* স্কুল বা পড়াশোনার প্রতি অনিহা।
* ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন এবং আত্মরক্ষামূলক আচরণ।
* মদ্যপান থেকে বিরত থেকে আপনি বাবা-মা হিসেবে আপনার সন্তানের জন্য একটি ভালো উদাহরন তৈরী করতে পারেন, এবং এর
* পাশাপাশি আপনার উচিৎ আপনার ছেলেমেয়ের সাথে এই ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করা। নিজের ছেলেমেয়েকে পর্যাপ্ত সময় দিন এবং * তাদের আচরন বোঝার চেষ্টা করুন। সক্রিয়ভাবে আপনার সন্তানের জীবনের সাথে জড়িত হন। আপনার সন্তানের কাছ থেকে আপনি কি
* আচরণ আশা করেন তা তাকে জানতে দিন এবং সবসময় তাদের জীবনের ব্যাপারে উৎসাহিত করুন।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১০:০০ এএম, ২২ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ