মতলবে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে নদীতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু, নিখোঁজ ১

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর পর্যটন কে›দ্রে পিকনিকে এসে নারায়নগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়া ইসতিহাক শামস (১৬) নামে এক স্কুল শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু এবং একই স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহা (১৬) নামে আরো এক শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে।

২৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১টার সময় মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্রে মেঘনা নদীতে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাড়ির এসআই বাবুল বালা। নিখোঁজ শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।

নিহত শিক্ষার্থী শাহরিয়া ইসতিহাক শামস (১৬) এর পিতা মোঃ জাহিদুল ইসলাম একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তিনি নারায়নগঞ্জ পুলিশ লাইন এলাকায় বসবাস করেন। তাদের স্থায়ী বড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুষ্টিয়া জেলার চরহাট গ্রামে এবং নিখোঁজ সুসমিত সাহা ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর গ্রামের শুধাংশু সাহার ছেলে। তারা দুজন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ নারায়ণগঞ্জ শাখার ১০ শ্রেণির ছাত্র। তারা মোহনপুর পর্যটনে শিক্ষাসফরে এসেছিলো। নিহত শাহরিয়া ইসতিহাক শামস তার বাবার জ্যেষ্ঠ পুত্র। তারা দুই ভাই। তার লাশ এখনও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে। অপরদিকে নিখোঁজ সুস্মিত সাহার বাবার নাম সুধাংশ সাহা। তারাও নারায়নগঞ্জ বসবাস করে। নিহত শাহরিয়ার ইশতিয়াক শ্যামস কুষ্টিয়া জেলার চরহাট গ্রামের জিহাদুল ইসলামের ছেলে

জানা যায়, নারায়নগঞ্জ লঞ্চঘাট থেকে সকাল সাড়ে ৯টার সময় নারায়নগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৭৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে এমভি প্রিন্স কামাল নামে লঞ্চযোগে দুপুর ১২টার দিকে মোহনপুর পর্যটন এসে পৌছে।

দুপুর ১টার সময় সে তিন সহপাঠীদের সাথে মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র নদীতে গোসল করতে নামলেতারা তলিয়ে যেতে থাকলে পাশে থাকা উদ্ধার হওয়া শিক্ষার্থীর বাবা সাথে থাকায় তাকে উদ্ধার করতে পারলেও শাহরিয়া ইসতিহাক শামস (১৬) ও সুস্মিত সাহা (১৬) নামে তীরে উঠতে পারেনি। পরে পিকনিকে আসা শিক্ষক ও স্বজনরা ডুবে যাওয়া শিক্ষার্থী শাহরিয়া ইসতিহাক শামস (১৬) কে উদ্ধার করে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তকে ডুবে আরেক শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহা (১৬) এখনও নিখোঁজ রয়েছে। তবে মোহনপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও চাঁদপুর ডুবরি দল তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানাগেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নৌ পুলিশ, লোকাল পুলিশের উপস্থিতিতে ডুবুরিরা খুজতে ছিল।

এদিকে সংবাদ পেয়ে মতলব উত্তর উপজেলার মোহনপুর নৌ পুলিশ স্টেশন ও চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ডুবুরি দলের লিডার প্রণব বড়ুয়ার নেতৃত্বে সোহেল মিয়া ও হাসিবুর রহমান সহকারী ডুবরিরা মেঘনা নদীর ঘটনাস্থলে নিখোঁজ ছাত্রের সন্ধান করে। ঘটনার পর দীর্ঘ ৪-৫ ঘন্টা অভিযান চালিয়েও নিখোঁজ ছাত্রের সন্ধান পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ রাত ৭ টার সময় অভিযান স্থাগিত করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।

এদিকে নারায়নগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী শাহরিয়া ইসতিহাক শামস ও নিখোঁজ শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহার মৃত্যুতে কলেজ থেকে শিক্ষা সফরে আসা এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর মধ্য থেকে শাহরিয়া ইসতিহাক শামস ও নিখোঁজ শিক্ষার্থী সুস্মিত সাহা নামে দশম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীর পানিতে ডুবে নিখোঁজ হওয়ায় স্কুলের শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও পরিবারে বইছে শোকের ছায়া।

উল্লেখ্য, এর আগেও মোহনপুর পর্যটনে শিক্ষা সফরে এসে গোসল করতে নেমে শিক্ষার্থীর মৃত্যুও ঘটনা ঘটেছে। গতবছর অক্টোবর মাসে এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এর আগেও ঢাকা ডেমরা থেকে পরিবারের সাথে ঘুরতে আসা এক শিশু একই স্থানে ডুবে মৃত্যু হয়।

ক্যাব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের সমন্বয়কারী আনিছুর রহমান আনিছ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, আমরা ছাত্রদেরকে পানিতে নামতে নিষেধ করেছি। চারদিন আগে থেকেই তাদেরকে বলা হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ঘটনাটি ঘটে গেল। আমরা খুবই দুঃখিত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নিব কি না তা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক সাহিদুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসছি। নিখোঁজ ব্যক্তিকে উদ্ধারে চেষ্টা চলছে।

নিহত শাহরিয়ার ইশতিয়াক শ্যামস কুষ্টিয়া জেলার চরহাট গ্রামের জিহাদুল ইসলামের ছেলে এবং নিখোঁজ সুসমিত সাহা ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার নবীনগর গ্রামের শুধাংশু সাহার ছেলে। তারা দুজন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ নারায়ণগঞ্জ শাখার ১০ শ্রেণির ছাত্র। এদিকে নিহত ও নিখোঁজ ছাত্রের অভিভাবক ও স্বজনেরা ঘটনাস্থলে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তারা দ্রুত নিখোঁজ সুসমিত সাহাকে উদ্ধারের দাবী জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশরাফুল হাসান ও মতলব উত্তর থানার ওসি মোঃ মহিউদ্দিনসহ সঙ্গীয় ফোর্স ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

প্রতিবেদক: খান মোহাম্মদ কামাল, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Share