চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা বেড়িবাঁধ এলাকায় ভাঙন রক্ষায় ব্লক বসানো নদীর হার্ডপয়েন্টে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের ঢল নেমেছে।
ঈদ উৎসবে ঘুরে বেড়ানো ও বিনোদন করার মতো তেমন কোনো স্থান নেই। স্বাধীনতার ৪৫ বছরেরও মতলব উত্তর উপজেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে গড়ে উঠেনি কোনো বিনোদন কেন্দ্র। ফলে ঈদ উৎসব এলে কর্মস্থল থেকে ছুটিতে আসা বিনোদন প্রেমীরা একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে মেঘনা নদীর তীরে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে আসে।
এ বছরেও এর ব্যতিক্রম ছিল না। বরং বৈরি আবহাওয়া আর শ্রাবনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে এবার ভ্রমন পিপাসু বিনোদনপ্রেমী মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি। শ্রাবণের বৃষ্টিও তাদের ঘরে বসিয়ে রাখতে পারে নি। এ বৃষ্টিকে উপক্ষো করে হাজার হাজার মানুষ এসেছিল মেঘনা নদীর তীরে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে আর মুক্ত বাতাসে ঘুরে বেড়াতে।
অসংখ্য নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর, প্রেমিক-প্রমিকারা প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি, অটোরিক্সা, ভটভটি, নছিমন, মোটরসাইকেল, ভ্যান, রিকশা এমনকি শ্যালো চালিত ইঞ্জিনচালিত ট্রলার ও নৌকায় ঈদের দিন সকাল থেকে মানুষ আসতে থাকে।
সামনে মেঘনা নদী। একটু পরেই বিশাল জলরাশি। বিকেলে পশ্চিমে সূর্যাস্ত দেখতে চমৎকার পরিবেশ। তাই এলাকাবাসী মেঘনা পাড়ের নাম দিয়েছে মিনি কক্সবাজার।
মতলবের এখলাছপুর,মোহনপুর,আমিরাবাদ এলাকায় মেঘননা ধনাগোদা বেরিবাঁধ রক্ষা করার জন্য ব্লক বসিয়ে হার্ডপয়েন্ট-গ্রোয়েন নির্মান করা হয়। আর এই এখলাছপুর-মোহনপুর ব্লক বসানো হার্ডপয়েন্ট মেঘনা নদীর তীর উপজেলার বিনোদনের স্পট ইতিমধ্যে (মিনি কক্স বাজার) হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
নদীর ভাঙ্গন রোধসহ এসব স্থাপনা ভ্রমন পিপাসুদের বেড়ানোর মনোরম স্থান হিসেবে মতলবসহ আশেপাশের উপজেলা ও জেলার মানুষের কাছে পরিচিতি লাভ করেছে। ঈদের দিন বৃহস্পতিবার ও ঈদের পরের দিন শুক্রবার এবং শনিবার মতলবের এখলাছপুর,মোহনপুর ও ষাটনল মেঘনার তীর দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছিল।
সেখানে ঝালমুড়ি,চটপটি,ফুছকা ও আইসক্রিমসহ বিভিন্ন দোকানিরা অস্থায়ীভাবে পসরা সাজিয়ে বসতে ভুল করেনি। তাদের বিক্রি বেশ ভালো হওয়ায় তারাও খুব খুশি। অনেক দর্শনার্থী-বিনোদনপ্রেমীরা ট্রলারে ভটভটি,ট্রাকে মাইক ও সাউন্ডবক্স নিয়ে এসেছিল। গানের সঙ্গে সঙ্গে নেচে ছিল অনেকে। এখলাছপুর নয়াকান্দি হার্ডপয়েন্টে ও মোহনপুর লঞ্চঘাট মেঘনা নদীর পাড়ে ভ্রমনের জন্য অর্ধশতাধিক ইঞ্চিনচালিত ট্রলার ও নৌকা নিয়ে মাঝিরাও প্রস্তÍুত ছিল। ট্রলার কিংবা নৌকা ভাড়া করে ভ্রমন ঝঁকির মধ্যেও ভ্রমন পিপাসুরা ঘুরে বেড়িয়েছেন।
এমনকি মেঘনা-পদ্মা পাড়েরর পাশবর্তি চরগুলোতেও ঘুরে বেড়িয়েছেন। ভ্রমন পিপাসুদের উৎসাহ উদ্দিপনার কোনো কমতি ছিল না। গত তিন দিন ধরে বাঁধভাঙা জোয়ারের মতো হাজার হাজার মানুষের ঢল নেমেছিল মতলব উত্তর উপজেলার এখলাছপুর,মোহনপুর,ষাটনল ও আমিরাবাদ মেঘনা নদীর তীরে।
মতলব উত্তর উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মিনহাজ উদ্দিন খান মাইক্রোবাস যোগে পরিবার পরিজন ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মিদের নিয়ে বিনোদানের জন্য মেঘনা নদীর তীরে ঘুড়তে এসেছিলেন ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে।
তিনি বলেন, ‘নদীর এ প্রাকৃতিক দৃশ্য, বর্ষার থইথই পানির দৃশ্য, সন্ধ্যার সময় মেঘনা পাড়ে এসে সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য ও এমন সুন্দর খোলামেলা জায়গা আশেপাশের কোথাও নেই। তাই ভাতিজাদের এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সকলকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি। এখানে এসে খুবই ভালো লেগেছে।’
তবে এখানকার পরিবেশ ভালো রাখতে নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন প্রয়োজন বলেও জানান তিনি। আবার জায়গাটি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা প্রয়োজন। তাহলে দিন দিন ভ্রমন পিপাসু দর্শনার্থীর সংখ্যা আরো বাড়বে।
এদিকে সন্ধ্যার পরেও অনেকে গ্রেয়েনে ও হার্ডপয়েন্টে মেঘনা পাড়ে মুক্ত বাতাসে বসে থাকতে দেখা গেছে। সে ক্ষেত্রে সেখানে সেলার বাতি বসানো প্রয়োজন বলেও অনেকে জানান।
খান মোহাম্মদ কামাল : : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:০০ এএম, ১১ জুলাই ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ