চাঁদপুরের ধনাগোদা নদীর ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কচুরিপানার জট লেগে আছে। এতে কয়েক দিন ধরে এ নদীতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুর্ভোগে পড়েছেন লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার যাত্রীরা। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও নৌপথে মালামাল পরিবহন করতে সমস্যা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও মতলব দক্ষিণ উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে এই ধনাগোদা নদী। বছরের এই সময়ে নদীতে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপানা থাকে। নৌকা দিয়ে নদী পারাপারের সময় মাঝিরা নিজেদের বইঠা নিজেদের বাইতে হয়। এতে সময়ের অপচয় হয়। তাই বাধ্য হয়ে অনেককে পথ ঘুরে মতলব সেতু দিয়ে নদী পার হতে হচ্ছে।
এদিকে নদীতে নৌযান চলাচল ব্যাহত হওয়ার কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার যাত্রীরা; পাশাপাশি ব্যবসায়ীদেরও নৌপথে মালামাল পরিবহন করতে সমস্যা হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নদীর আমিরাবাদ লঞ্চঘাট থেকে কালীপুর লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কচুরিপানার জট লেগে আছে। এ ছাড়া মতলব খেয়াঘাট, বাইশপুর, গাজীপুর মোড়, সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর, টরকি, মাছুয়াখাল, শাহপুর, নায়েরগাঁও, দুর্গাপুর, শ্রীরায়ের চর, কালীর বাজার, নন্দলালপুর খেয়াঘাট এলাকায় কচুরিপানা জমাট বেঁধে আছে। এতে খেয়া পারাপারের যাত্রীদের চরম ভোগান্তি হচ্ছে।
মতলবের খেয়াঘাটের নৌকার মাঝি লিয়াকত আলী বলেন, ‘কস্তুরি ঠেইলা নদী পার অইতে কষ্ট লাগে। পাঁচ মিনিটের জায়গায় লাগে ৩৫-৪০ মিনিট। যাত্রীগো মধ্যে চার-পাঁচজন পুরুষ মানুষ না থাকলে নাও (নৌকা) ছাড়ি না।’
একাধিক যাত্রী অভিযোগ করে জানান, নদীর দুই পাড়ে অবৈধ ঝাঁক থাকায় জোয়ার-ভাটার সময় কচুরিপানা সরতে পারে না। এতে কয়েক মাস কচুরিপানার জমাট বেঁধে নৌকাসহ এই নদীতে অন্যান্য নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়।
কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ওই নদীর গাজীপুর থেকে নায়েরগাঁও ও কালীর বাজার এলাকা পর্যন্ত কচুরিপানার জট লেগে আছে। কচুরিপানায় আটকে যাচ্ছে লঞ্চ, ট্রলার, কার্গো, ফেরিসহ অন্যান্য নৌযান। এগুলোর চাপে ডিঙি নৌকায় নদী পারাপার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। নৌকার মাঝির সঙ্গে যাত্রীরাও বইঠা বেয়ে কচুরিপানার জট ছাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
খেয়া পারাপারের যাত্রী মোবারক হোসেন ও ব্যবসায়ী কামাল জানান, নদীতে খেয়া পারাপার হতে অনেক সময় লাগে। একদিকে কনকনে শীত, অন্যদিকে কচুরিপানার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায় নদী পার হতে।
মতলব-ঢাকা নৌপথে চলাচলকারী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘গ্রিন ওয়াটার’-এর চালক মো. মহিন জানান, সকাল সাড়ে সাতটায় তাঁর লঞ্চটি ঢাকার উদ্দেশে মতলব লঞ্চঘাট ছাড়ে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেটি ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। কচুরিপানা ঠেলতে ঠেলতে সেটি ঢাকায় পৌঁছায় বেলা দুইটায়। কচুরিপানা পেঁচিয়ে লঞ্চের ইঞ্জিন ও পাখা প্রায়ই বিকল হয়।
ইউএনও ফাহমিদা হক বলেন, ‘নদীতে কচুরিপানার বিষয়টি শুনেছি। এ ব্যাপারে চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হবে।’
চাঁদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাছির উদ্দিন বলেন, ‘নদীতে কচুরিপানা থাকবেই। তা অপসারণের দায়িত্ব আমাদের নয়।’
স্টাফ করেসপন্ডেট