দাউদকান্দি-চাঁদপুরের মতলব মহাসড়কের শ্রীরায়েরচর-ছেংগারচর সড়কের কাজে অংশের বন্ধ রয়েছে। ৫ আগস্টের পর থেকে সড়কে নির্মাণ সামগ্রী সড়কে পরে থাকলেও ঠিকাদার ও তার লোকজন নেই। খারাপ অবস্থায় সড়কটি পরে থাকায় যাত্রী দুর্ভোগ চরমে।
কুমিল্লার দাউদকান্দি-শ্রীরায়েরচর ও চাঁদপুরের শ্রীরায়েরচর- ছেংগারচর পর্যন্ত মহাসড়ক উন্নয়নের উদ্যোগ নেয় সরকার। এ সড়ক উন্নয়নের মাধ্যমে চাঁদপুর,লক্ষ্মীপুর নোয়াখালী ফেনী হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যোগাযোগের বিস্তার করার লক্ষ্যে এই সড়কটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল।
২০২০ সালের ১ জুলাই শুররু হয় শ্রীরায়েরচর- ছেংগারচর সড়ক প্রকল্পের কাজ। ২০২৪ সালের ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। ৫ আগস্টের পর থেকে কাজ বন্ধ রয়েছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ থেকে জানা যায়, এ সড়কের মতলব অংশের দৈর্ঘ্য ১০.৫০০কিলোমিটার। সড়কের সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয়েছে ৫.২০০ কিলোমিটার। ৪.৮০০কিলোমিটারের কার্পেটিং বাকী। ছেংগারচর থেকে শিকিরকান্দি স্কুল সামনেসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশে কাজ শেষ হয়নি। মোট কাজে ৭৫% শেষ হয়েছে এবং ২৫% কাজ বাকী আছে। কাজটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল হাসান টেকনো বিল্টাস লিমিটেড। সড়ক নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছিল ২৬কোটি টাকা। ৫ই আগস্টের পর ঠিকাদারের লোকজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঠিকাদার খুঁজে না পাওয়ায় কাজটি বন্ধ রয়েছে। শেষ করা যাচ্ছে না।
এ সড়কটি গুরুত্ব অপরিসীম। কাজ শুরু থেকে মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। কাজটি বন্ধ থাকায় রাস্তাটি এখন গর্তে আর ধুলাবালিতে ভরপুর। বৃষ্টির দিনে কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পথচারী, শিক্ষার্থী, রোগী ও যানবাহন চালকরা।স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, রাস্তায় এত ধুলা যে, জানালা খুলে বসা যায় না। শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে। আর একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তা দিয়ে চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়।
এলাকাবাসী বলেন, এ সড়ক শুধু মতলববাসীর ব্যবহারের জন্য নয়। চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সংযোগস্থল হিসেবে জাতীয় গুরুত্ব বহন করে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা জরুরি।
গাড়ি চালক সবুজ খান বলেন, এই রাস্তায় ধুলায় চোখে কিছু দেখা যায় না। বৃষ্টি হলে রাস্তায় জিনিসপত্র নিয়ে গেলে কাদায় গাড়ি আটকে যায়। কখনো পিছলে পড়ে দুর্ঘটনাও ঘটে।
ঠাকুরচর পাড় গ্রামের রোগী দেলোয়ারা বেগম জানান, চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে গিয়ে রাস্তায় এত কাঁপুনি লাগে যে শরীর ব্যথায় ভরে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীর জন্য এ যাত্রা খুব কষ্টদায়ক।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, একমাত্র এ সড়কটি ব্যবহার করে রোগীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসতে হয়। সড়কটির কাজ শেষ না হওয়াতে রোগিরা অনেক সমস্যায় পড়ছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারি প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঠিকাদার ও তার লোকজন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুই মাস আগে কাজটি বাতিলের জন্য হেড অফিসে চিঠি দিয়েছি। সিদ্ধান্ত আসার অপেক্ষায় আছি। আগে যে কাজ হয়েছে তাও কিছু নষ্ট হয়ে গেছে।
চাঁদপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা ঠিকাদার ও তার প্রতিনিধি কে খুঁজে পাচ্ছি না। কাজের চুক্তি বাতিল করার জন্য আমরা উধর্তন কর্তৃপক্ষের নিকট চিঠি দিয়েছি। তারা চুক্তি বাতিল করলে নতুন প্যাকেজ তৈরি করে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ শুরু করতে পারবো ইনশাল্লাহ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা কুলসুম মনি বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এটির সাথে উপজেলা পরিষদ কমপ্লক্সে ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংযুক্ত। সড়কটির কাজ বন্ধ রয়েছে। আমি এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে যোগাযোগ করেছি। জনস্বার্থে দ্রুত সড়কটির কাজ শেষ করা প্রয়োজন।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৭ জুলাই ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur