চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বৃহস্পতিবার (২৯ মে) রাতের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় এবং মুষলধারে বৃষ্টি -ধমকা হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় অধিকাংশ কাঁচা রাস্তঘাট, কালভার্টের এ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে গেছে। এছাড়া গাছ ও গাছের ঢালাপালা ভেঙ্গে বিদ্যুতের তারের উপর পড়ে অর্ধশত গ্রাম বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।৩ দিন যাবৎ বিদ্যুৎ না থাকায় ওই গ্রামগুলোর গ্রাহকেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। খাঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাতে ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড়ের পড় থেকে শনিবার দুপুর পর্যন্ত উপজেলার নন্দীখোলা, নায়ের গাও উত্তর, সাড়পার,আচলছিলা, মধ্যে নওগঁা, চরপয়ালী,কালিকাপুর, কাশিমপুর, বদরপুর,পুরণ,টেমাই শিবপুর,চাপাতলী,বাড়ৈগঁাও,লেকোডা,পয়ালী,মনিগঁাও,গাবুয়া,মতলব পৌরসভার নলুয়া,দুরগঁাও, দিঘলদীসহ ৪৮ টি গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে। সাড়পাড় গ্রামের গ্রাহক মিঞা মামন বলেন,বৃহস্পতিবার রাত থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রয়েছে।
শনিবার দুপুরে একবারের জন্য বিদ্যুৎ আসেনি।বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করেও জানা যায়নি কখন বিদ্যুৎ আসবে।মধ্যে নওগঁাও গ্রামের গ্রাহক নুসরাত জাহান মুন অভিযোগ করেন, বিগত ৩ দিন আমরা বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন-যাপন করছি। বিদ্যুৎ অফিসের মোবাইল নাম্বার একাধিকবার যোগাযোগ করেও সঠিক জবাব পাইনি।
নলুয়া গ্রামের গ্রাহক খান মাসুদ, আচলছিলা গ্রামের হুমায়ুন কবির, বাড়ৈগঁাও গ্রামের মোস্তফা কামাল ও চরপয়ালীর রাসেল মিজী বলেন,গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে প্রায় ৭২ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত আমরা বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।বিদ্যুৎ অফিসে ফোন করলেও তারা ফোন রিসিভ করেন না।কখন বিদ্যুৎ আসবে এটাও আমরা জানতে পারছি না। চঁাদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মতলব দক্ষিণ উপজেলার জোনাল ম্যানেজার ( ডিজিএম) মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন,বৃহস্পতিবার রাতের ঘুর্ণিঝড়ে বপশ কয়েকটি এলাকায় গাছ ও গাছের ডালা এবং বঁাশ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিড়ে যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। একাধিক টীম কাজ করছে। যেখানে কাজ সমাধান করা হয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ চালু করা হয়েছে। আজকালের মধ্যে সব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয়ে যাবে। অপরদিকে মুশলধারে বৃষ্টি হওয়ায় মতলব উপজেলার নায়েরগঁাও উত্তর, নায়েরগঁাও দক্ষিণ, উপাদী উত্তর, উপাদী দক্ষিণ, খাদেরগঁাও ইউনিয়ন এবং মতলব পৌরসভা ও নারায়ণপুর পৌরসভার টিআর / কাবিখার করা চলমান কঁাচা রাস্তাগুলো ভেঙে গেছে। নায়েরগঁাও উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ কামরুজ্জামান মোল্লা বলেন, গত দুদিনের মুশলধারে বৃষ্টিতে নবনির্মিত ৩ টি কঁাচা মাটির প্রায় রাস্তা ভেঙে বিলিন হয়ে গেছে। উপাদদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ প্রধান বলেন,বৃহস্পতিবার রাত থেকে মুশলধারে বৃষ্টি -ধমকা হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় ডিঙ্গাভাঙ্গা হইতে রাজারগঁাও কঁাচা রাস্তার অর্ধেকের বেশী ভেঙে গেছে। ঠিকাদার কামাল ফরাজী বলেন,কয়েকদিনের বিরামহীন বৃষ্টির কারনে খাদেরগঁাও ইউনিয়নের লামচরী-খাদেরগঁাও সড়কের একটি নির্মানাধীন ব্রীজের দুপাশের এ্যাপ্রোচ সড়ক ভেঙে খাদে চলে গেছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে ঘুর্ণিঝড় ও মুশলধারে বৃষ্টি হওয়ায় চলতি অর্থবছরের টিআর, কাবিখার প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার নব নির্মিত কঁাচা রাস্তা ভেঙে বিলিন হয়ে গেছে। এছাড়া ২০ টি নব নির্মিত ব্রীজের ৫/৭ টির এপ্রোচ সড়ক ভেঙে গেছে। এতে প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে। ক্ষয় ক্ষতির তালিকা করে ঊর্ধ্বতনও কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
প্রতিবেদক:মাহফুজ মল্লিক,৩১ মে ২০২৫