মতলব দক্ষিণ

মতলব দক্ষিণে প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অপকৌশলে চলছে বাল্য বিয়ে

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় বাল্য বিয়ে থেমে নেই। সংশ্লিষ্টদের সঠিক নজরদারি ও তদারকি না থাকায় মতলব পৌরসভাসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে বাল্য বিয়ের প্রবণতা বাড়ছে।

বাল্য বিয়ের ধরন পরিবর্তন করে এ সকল বিয়ে দিচ্ছে বর ও কনের পক্ষ। বাল্য বিয়ের সংবাদ পেয়ে পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করলেও সে বিয়ে বন্ধ থাকে না। পরবর্তী সময়ে অন্যত্র নিয়ে বাল্য বিয়ের কাজটি সম্পন্ন করে নেয় বর ও কনের পক্ষ।

প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে অন্যত্র নিয়ে বাল্য বিয়ে দেওয়ার অপরাধে উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে সমাজে কেউ এ সকল অপরাধ কর্মকান্ডের সাথে জড়িত হতো না এবং এ কাজ করার সাহসও পেতো না বলে মনে করে সচেতন মহল।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত এক সপ্তাহে মতলব পৌর এলাকায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ৩টি মেয়ে বাল্য বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।

তার মধ্যে মতলব পৌরসভার পশ্চিম বাইশপুর গ্রামের মিজান জমাদারের মেয়ে, নবকলস গ্রামের সুজু প্রধানের মেয়ে এলিনা। তারা দু’জনেই মতলবগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৮ জুলাই ব্যাপক উৎসব ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে পশ্চিম বাইশপুরের মিজান জমাদারের কন্যার বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়।

নবকলস গ্রামের সুজু প্রধানের স্ত্রী বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, ‘আমার মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। আমার মেয়েকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ে দেইনি, তবে নারায়নপুর গ্রামের প্রবাসী এক ছেলের সাথে এঙ্গেজমেন্ট (আংটি পড়ানো) হয়।’

এছাড়া উত্তর দিঘলদী গ্রামের বউ বাজার এলাকায়ও গত সপ্তাহে বরদিয়া কাজী সুলতান আহমেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রীর বাল্য বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোতেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ ধরণের স্কুলে পড়–য়া মেয়েদের বাল্য বিয়ে হচ্ছে।

তবে এ সকল বাল্যবিয়েতে বয়স কম হওয়ায় আইনগত জটিলতার কারণে কাবিন ও রেজিস্ট্রি করছেন না।

মতলব পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাজী মো. সালাউদ্দিন চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘এলাকায় কাবিন ও রেজিস্ট্রি ছাড়াই গোপনে প্রায়ই বাল্য বিয়ে হচ্ছে। এ সকল বাল্য বিয়ের বিষয়ে আমাদেরকে কেউ অবহিত করে না। জন্ম নিবন্ধনে প্রাপ্ত বয়স না হলে সেই বিয়ে আমরা রেজিস্ট্রি করি না। এ ক্ষেত্রে পুলিশ ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা বাল্য বিয়ে বন্ধ করে দিলেও তা বন্ধ থাকে না। তারা উভয় পক্ষ অন্যত্র নিয়ে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছেই।’

তাঁর দাবি প্রশাসনের মাধ্যমে বন্ধ করার পর পুনরায় বাল্য বিয়ে দিলে এবং প্রশাসনকে না জানিয়েও বাল্য বিয়ে দেওয়ার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে এলাকায় এ ধরনের বাল্য বিয়ের প্রবণতা বন্ধ হয়ে যাবে।

মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি। এরইমধ্যে বাল্য বিয়ের অপরাধে বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। বাল্য বিয়ের সংবাদ পাওয়া মাত্র তা বন্ধ করার জন্য আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’

প্রতিবেদক- মাহফুজ মল্লিক
: আপডেট, বাংলাদেশ ১১: ৫৬ পিএম, ৩১ জুলাই ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ

Share