চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর বাজারে সুস্বাদু ও দেশব্যাপী খ্যাত দিনাজপুরের লিচুর জমজমাট বাজার জমে উঠেছে। আর বাজার বসার সঙ্গে সঙ্গেই ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে উপজেলার ছেংগারচর বাজারসহ বিভিন্ন হাট-বাজার। রসালো ও সুস্বাদু এই লিচু আকৃষ্ট করেছে ভোক্তাদের। তবে এ বছর লিচুর দাম নিয়ে কৃষক-ব্যবসায়ীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
জ্যৈষ্ঠ মাসের মধু ফল হিসেবে পরিচিত দিনাজপুরের লিচু দেশব্যাপী খ্যাত। অনেকে এই দিনাজপুর জেলাকে লিচুর রাজ্য হিসেবে অভিহিত করে। আর এ জেলার লিচুর মধ্যে চায়না থ্রি, বেদেনা, বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাঁঠালি উল্লেখযোগ্য।
সপ্তাহখানেক ধরে ছেংগারচর বাজারে দিনাজপুরের বোম্বাই,মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু উঠতে শুরু করেছে। বাজারে লাল রঙেরর থোকা থোকা লিচু নজর কাড়ছে সবার। দিনাজপুরের রসালো এ লিচুর খ্যাতি রয়েছে সারা দেশজুড়েই।
তবে সুমিষ্ট স্বাদের বোম্বাই, চায়না থ্র্রি, কাঁঠালি ও হাড়িয়া জাতের লিচু কিছু কিছু আসতে শুরু করলেও পুরোদমে এখনো তেমন বাজারে আসতে শুরু করেনি। তবে ইতিমধ্যে উপজেলার সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর বাজারে জমে উঠেছে লিচু বেচা-কেনা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাঁকডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে বাজারের ফলপট্রি ও বিভিন্ন অলি-গলি। আজ বৃহস্পতিবার এই বাজার ঘুরে আমাদের প্রতিবেদক কামাল হোসেন খান লিচুর জমজমাট কেনা-বেচা সচিত্র প্রতিবেদন তৈরি করেন।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ মে) দুপুরে ছেংগারচর বাজারের লিচুর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বাজারে বর্তমানে উঠেছে দিনাজপুরের বোম্বাই, মাদ্রাজি ও বেদানা জাতের লিচু। আমদানিও বেশ ভালো। তবে অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এবার দামও বেশ চড়া। খুচরা বাজারে প্রতিশত বোম্বাই লিচু ৩২০ থেকে ৩৫০ ও ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা কিনা তাদের প্রতি শতে ২৮০ টাকা।
ছেংগারচর পৌরসভার কলাকান্দা গ্রাম থেকে থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী মোঃ ইকবাল জানান, রাজশাহীর দিনাজপুরের লিচু খুব সুস্বাদু ও এর চাহিদা খুব বেশি। এটা বোম্বাই লিচু। গত সপ্তাহের এটার দাম অনেক কম ছিলো,কিন্তÍু এই সপ্তাহে মোকামে তুলনামূলক দাম একটু বেশি। এই লিচুটা রসালু এবং বিচিটা অনেক ছোট,খাইতে খুবই ভালো। তিনি প্রতি ১০০টা লিচু ৩০০,৩২০,৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে লিচুর দাম আরো বাড়তে পারে এই আশঙ্ককা রয়েছে। দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবখানেই বেশি। লাভ কম হলেও ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য এখানের লিচুর ব্যবসা করেন।
লিচু কিনতে আসা উপজেলার ৯নং দক্ষিণ ব্যাসদী মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জেসমিন আক্তার জানান, আত্মীয় ও ছেলেদের জন্য লিচু কিনতে এসেছেন তিনি। দাম মোটামুটি ভালো। তবে সবচেয়ে ভালো কথা যে, এবারের লিচুতে ভেজাল পায়নি প্রশাসন।
ছেংগারচর বাজার মজিব সরকারের চা দোকানের সামনে লিচু বিক্রি করতে আসা ব্যবসায়ী নুরুজ্জামান জানান, খরার কবলে পড়ে এবারে লিচুর দানা ছোট হয়েছে। পাশাপাশি লিচুতে দেখা দিয়েছিল পচা ও ফেটে যাওয়া রোগ। দামের বিষয়ে শঙ্কা থাকলেও ভালো দাম পাচ্ছেন তারা। তিনি জানান, আমার কাছে বোম্বাই জাতের লিচু প্রতি একশ’টি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, মাদ্রাজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা, দরে বিক্রি হচ্ছে।
উপজেলার আদুরভিটি এলাকা থেকে আসা লিচু ব্যবসায়ী মোঃ মোস্তফা জানান, এবার রংপুর, নওগাঁ, পাবনা, নাটোরেও লিচু আবাদ হয়েছে। যার ফলে এবার দাম কিছুটা কম। তবে তিনি জানান, সব জায়গার চেয়ে দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা অনেক বেশি।
দিনাজপুরের লিচুর চাহিদা সবখানেই বেশি। লাভ কম হলেও ব্যবসা ভালো হওয়ার জন্য দিনাজপুরের লিচুর ব্যবসা করেন তিনি।
কৃষকরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবারে লিচুর দাম অনেক কম। আর ব্যবসায়ী কিংবা আড়তদাররা বলছেন, লিচুর আকার ও গুণগত দিক দিয়ে এবারে লিচুর দাম বেশি। তবে কৃষিবিদদের মতে, প্রচণ্ড খরার কারণে এবারে লিচু ছোট হওয়ায় দাম কম, তাছাড়া এবারের লিচুতে মোটাতাজাকরণ ওষুধ তেমনটি ব্যবহার হয়নি বলে দাবি করেন তাদের।
প্রতিবেদক: খান মোহাম্মদ কামাল,২৫ মে ২০২৩