চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপাদি ইউনিয়নের পশ্চিম পিংড়া বাজার এলাকায় একটি অসহায় পরিবারের উপর কয়েক দফায় হামলা এবং বসতবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় মো. শরীফ হাসান (৭০) এবং তার দুই ছেলে সাইদুর রহমান ও ফয়সাল হাসানকে পিটিয়ে রক্তাক্ত আহত করা হয়েছে।
গত ২৫ এপ্রিল তাদের রক্তাক্ত আহত এবং ২৯ এপ্রিল শনিবার বসতবাড়ি ভাংচুর করা হয়। ট্রিপল ৯৯৯ ফোন করেও হামলা থেকে রক্ষা পায়নি অসহায় পরিবারটি। বর্তমানে ওই অসহায় পরিবারটি জীবননাশের ভয়ে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভাংচুর করা বাড়িতেই বসবাস করছে।
আহত বৃদ্ধ মো. শরীফ হাসান জানান, আমরা তিন ভাই পৈত্রিক জমিতে বসবাস করছি। পৈত্রিক সম্পত্তি ছাড়াও আমার ক্রয়কৃত অনেক সম্পত্তি রয়েছে। জীবিকার প্রয়োজনে আমি ঢাকায় থাকি। ফলে ঈদের ছুটি ছাড়া খুব একটা বাড়িতে আসা হয় না।
এই সুযোগে আমার ছোট ভাই রহিম বকাউল রাজনীতিক প্রভাব খাটিয়ে আমার সম্পত্তি দখল এবং আমার পরিবারের উপর নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়ন করে আসছে। ২০১৬ সালে আমার মেয়ে খাদিজা হাসানকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। তাদের থেকে বাঁচতে আমি আদালতে মামলা করেছি।
তিনি আরো জানান, ওই মামলা উঠিয়ে নিতে আমাকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। মামলা না উঠানোকে কেন্দ্র করে গত ২৫ এপ্রিল বিকেলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার ভাই রহিম বকাউল, তার ছেলে বশির বকাউল, রাসেল বকাউল, আহম্মদ বকাউল ও বাদল বকাউল আমার উপর আতর্কিত হামলা করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এসময় ডাক-চিৎকার শুনে আমার ছেলে ফয়সাল হাসান ও সাইদুর রহমান এগিয়ে এলে তাদেরও পিটিয়ে রক্তাক্ত করে। তারা আমার টাকা, মোবাইল এবং স্ত্রীর সোনার গহনা নিয়ে গেছে।
আহত শরীফ হাসান জানান, মৃত্যুর ভয়ে আমি এবং আমার ছেলে ৩/৪ দিন আমরা বাড়ি ছাড়া রয়েছি। এই সুযোগে গত ২৯ এপ্রিল শনিবার রাতে অভিযুক্তরা দ্বিতীয় দফায় আমাদের বাড়িতে হামলা চালায়। ওই সময়ে আমার স্ত্রী রাশিদা হাসান এবং অসুস্থ্য মেয়ে খাদিজা হাসান ঘরে ছিলো। তারা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে ঘরের দরোজা-জানালা ভেঙ্গে দিয়েছে।
আহত মো. শরীফ হাসানের স্ত্রী রাশিদা হাসান বলেন, আমার মেয়ের সিজারে মৃত সন্তান প্রসব করেছে। তিন/চার দিন আগে হাসপাতাল থেকে তাকে বাড়িতে এনেছি। মেয়ে আর আমি ঘরে ছিলাম। এ অবস্থায় তারা আমাদের বাড়িঘরে হামলা এবং ভাঙচুর করেছে। আমার মেয়ে ট্রিপল নাইনে ফোন করেছিলো। কিন্তু ঝড়ের রাত হওয়ায় আমরা প্রতিকার পাইনি।
অসহায় মো. শরীফ হাসানের মেয়ে খাদিজা হাসান বলেন, আমার চাচা এবং তার পরিবারের হাত থেকে আমরা বাঁচতে চাই। ওই পরিবারের লোকেরা যে কোন সময় আমার বাবা ও ভাইদের মেরে ফেলতে পারে। আমি প্রশাসনের কাছে আমাদের জীবনের নিরাপ্তা এবং সুবিচার প্রার্থনা করছি।
এ বিষয়ে উপাধি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে তাদের উভয় পক্ষের জমি জমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে আমরা বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক করেছি। কিন্তু তারা উভয়পক্ষ কেউই মীমাংসার বিষয়ে না মানার কারণে আমরা তা সমাধান করতে পারিনি। তবে গত পরশুদিন তাদের যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে তার জন্য বশির আমাকে কল দিয়েছিল। কিন্তু তারপরের দিন যে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে কেউ কিছু জানায় নি।
প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি, ৩০ এপ্রিল ২০২৩