সন্ধ্যা নামতেই দূর থেকে মনে হবে মাঠজুড়ে যেন মিটিমিটি জ্বলছে জোনাকি। কাছে গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি লাইট আর নিচে সবুজ ড্রাগন গাছ ও সাদা ফুলের হাতছানি। যেন আঁধার রাতে আলো আর সবুজ-সাদার মিলনমেলা। চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর গ্রামের একটি ড্রাগন বাগানে দৃশ্যটি চোখে পড়ে।
ড্রাগন চাষে এক অবিশ্বাস্য কৃষি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার ও বাড়তি ফলনের আশায় এমন পরিবেশ তৈরি করেছেন সিকোটেক্স এ্যাগ্রো লিমিটেড এর পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার।
জানা গেছে, সিকোটেক্স এ্যাগ্রো লিমিটেড এর পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার ৩ বছর আগে নাটোর থেকে ৬০টি ড্রাগনের চারা এনেছিলাম শখের বসে। এটাতে ভালো ফল হয়। পরবর্তীতে ইউটিউব ঘেটে টাংগাইল গিয়ে অনেক বড় বাগান দেখে আরো উদ্বুদ্ধ হয়। সেখান থেকে আরো গাছের চারা সংগ্রহ করে এবং কিভাবে গাছ লাগায় সেগুলো দেখে নিজ জমিতে ২০২২ সালে জমিতে ড্রাগন বাগান তৈরি করি। বর্তমানে ৩০ একর জমিতে এ ড্রাগন চাষ করেছেন।
২০২২ ও ২০২৩ সাল পর্যন্তফল চাষের প্রযুক্তি সংগ্রহ করে দেন তাকে। সেপ্টেম্বর মাসে ড্রাগন খেতে লাইট বসানো শুরু করেন। চীন থেকে আনা ২ হাজার টি লাইট খেতে সেট করে। ৬ হাজার ড্রাগন গাছে লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিদিন সন্ধ্যায় ৩ ঘণ্টা ও সূর্যোদয়ের আগে আরো ৩ ঘণ্টা লাইটগুলো জ্বালানো হয়।
শীতকালে দিন ছোট হয় তাই দিনের আলো কম হয় । ড্রাগন বেড়ে ওঠে মূলত দিনের আলোয়, তাই এ পদ্ধতিতে চাষ করলে রাতেও ড্রাগনের বেড়ে ওঠা স্বাভাবিক থাকে। এতে বাগানে বেশি পরিমাণ ফুল ও ফল ধরছে। বর্তমানে বাগান ফুল-ফলে ভরে গেছে। যা অন্য সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ।
দর্শনার্থী মাইনুদ্দিন জানান, ‘ড্রাগন বাগানে আসার পর দেখে অনেক ভালো লাগলো। বাংলাদেশের এই অঞ্চলে এটাই প্রথম বাগান। অনেক অত্যাধুনিক চাষ। এই বাগানকে ঘিরে এই জায়গা আরও উন্নত হবে।
বাগানের কর্মচারীরা বলেন, যে সময় ড্রাগনের কোনো চাষ থাকে না সেই অসময়ে এমন উৎপাদন সত্যিই অভিনব ঘটনা। এর আগে কখনো এমন বাগানে কাজ করিনি। যখন ফুল ফোটে তখন রাতেও ফুলগুলোতে কৃত্রিম পরাগায়নের কাজ করতে হয়।’
সিকোটেক্স এ্যাগ্রো লিমিটেড এর পরিচালক নাছির উদ্দীন সরকার বলেন, ‘ইউটিউব দেখে মূলত এ পদ্ধতির খবর জেনেছি । তারপর শুরু করে ব্যাপক ফলন পাচ্ছি । প্রাথমিকভাবে বড় অংকের টাকা লাগলেও লাভও ৩ গুণ। নতুন পদ্ধতিতে আগের চেয়ে ৬-৭ টন বেশি ফলন হবে। প্রতিটি খুঁটিতে ৭ থেকে ৮ কেজি ফলন বৃদ্ধি পাবে। এতে করে তিন গুণ ফলন বেশি বৃদ্ধি পাবে। ফলের মানও ভালো হচ্ছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে ফলের দাম কম থাকে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি ড্রাগন ১৫০-২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে তার বাগানের ড্রাগন ৩৪০-৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।’
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ফয়সাল মোহাম্মদ আলী জানান, ‘মতলব উত্তর ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এখানে নতুন প্রযুক্তি লাইট জ্বালিয়ে কৃত্রিমভাবে দিবাদৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে ড্রাগন চাষ শুরু হয়েছে।এই প্রযুক্তিতে চাষ করা অনেক ব্যয়বহুল। এই চাষ যে কেউ করতে পারবে না। নাছির উদ্দীন সরকার চীন থেকে অধ্যাধুনিক এই লাইট অনেক টাকা ব্যয় করে নিয়ে এসেছেন। তবে তাদের দেখা দেখি যদি এই প্রদ্ধতিতে কেউ চাষ করতে চাইলে অল্প পরিসরে পরীক্ষামূলক ভাবে করতে পারে। আমরা আশাবাদী এ পদ্ধতি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে। যদি তারা লাভবান হয়, তাহলে পরে বেশি পরিসরে এই পদ্ধতিতে ড্রাগন চাষ করতে পারে।’
নিজস্ব প্রতিবেদক, ২০ নভেম্বর ২০২৪