Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব উত্তর / মতলব উত্তরে ব্র্যাকের উদ্যোগে ওরিয়েন্টশন সভা
ব্র্যাকের

মতলব উত্তরে ব্র্যাকের উদ্যোগে ওরিয়েন্টশন সভা

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচি ব্র্যাকের আয়োজনে টিবি, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং কোভিড-১৯ কার্যক্রমের উপর ওরিয়েন্টশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) সকালে মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর ব্র্যাক শাখার সেমিনার কক্ষে এ ওরিয়েন্টশন সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে টিবি, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং কোভিড-১৯ কার্যক্রমের উপর এবং সচেতনাতা তৈরি উপর বিস্তার আলোচনা করেন মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের রোগনিয়ন্ত্রণ (এমওডিসি) ডা.মোঃ জাবেদ ইকবাল রিয়াদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসুচির ব্র্যাক এর প্রগ্রাম অফিসার মোঃ ইস্রাফিল মীর।

আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন, যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসুচির ব্র্যাক এর প্রগ্রাম অফিসার নারদ চন্দ্র কর ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএলসিএ মোঃ সাদেকুর রহমান। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করেন,ছেংগারচর পৌরসভার তালতরী জাবালেনূর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মোঃ খোরশেদ আলম।

উক্ত ওরিয়েন্টশন সভায় পল্লী চিকিৎসক,জনপ্রতিনিধি,মসজিদের ইমাম,সাংবাদিক,স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশ গ্রহণ করেন। সভায় বিভিন্ন বক্তারা বলেন,করোনার চেয়ে বেশি ভয় যক্ষা, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ায়। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র বদলে দিয়েছে। বৈশ্বিক এ মহামারির বিস্তৃতিতে উদ্বেগে রয়েছে সাধারণ মানুষ। কিন্তু করোনার চেয়েও বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে আরেকটি রোগ, যার নাম যক্ষা।

নিউইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রদিক এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ্য করে ওরিয়েন্টশন সভায় বলা হয়েছে, বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১৫ লাখ মানুষ যক্ষায় মারা যায়। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ লাখ মানুষ যক্ষায় আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে ৭০ হাজার রোগী মারা যান। করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিশ্বজুড়ে যে লকডাউন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এবং সরবরাহ শৃঙ্খলব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে যক্ষা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়ার মতো রোগগুলো বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে। একমাত্র সচেতনতা ও সঠিক সময়ে সুচিকিৎসাই পাড়ে যক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও যক্ষা মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

করোনাভাইরাস আসার আগ পর্যন্ত যক্ষার আর দুটি ভয়ংকর বন্ধু হিসেবে ছিল এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে এ দুটি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড গড়েছিল। তবে এ বছর করোনাভাইরাস ধাক্কা দিয়েছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে। ফলে যক্ষা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অবহেলা দেখানোয় এগুলো বড় হুমকি হয়ে উঠে আসতে পারে। কাজেই একমাত্র সচেতনতা ও যথাসময়ে সুচিকিৎসায় পাড়ে যক্ষা,এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পেতে।

সাধারণত হালকা জ্বর ও অসুস্থতা দিয়ে যক্ষার উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে। এরপর শ্বাসকষ্ট ও ব্যথাযুক্ত কাশি শুরু হয়। যক্ষা রোগীর আশপাশে থাকা মানুষের মধ্যে ছড়ায় বলে রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের খোঁজ রাখা, পৃথক রাখা ও রোগীকে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত চিকিৎসার প্রয়েয়াজন পড়ে। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলেই এ রোগ বিস্তার লাভ করেছে বলে সবচেয়ে সংক্রামক এটি পরিচিতি পেয়েছে।

ওরিয়েন্টশন সভায় টানা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি- শুকনো কিংবা কফযুক্ত, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথা, ওজন হ্রাস, অবসাদ, অরুচি, সন্ধ্যায় বা রাতে হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কিংবা রাতে ঘাম হলে অবশ্যই যক্ষা সন্দেহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।

চিকিৎসায় যক্ষা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে যক্ষ্মার চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটি ক্যাটাগরিতে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। অপর ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ৮-৯ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।

তবে অনেক সময় দুই থেকে তিন মাস ওষুধ খাওয়ার পর আক্রান্ত রোগী একটু ভালো অনুভব করলে, ওষুধ খাওয়া ছেড়ে দেন। এটি একদমই ঠিক নয়। যক্ষার চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধ নিয়মিত পূর্ণ মেয়াদে সেবন করতে হয়।

না হলে আবার যক্ষা হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং এরকম ক্ষেত্রে আগের ওষুধ কোনো কাজেও আসে না। তৈরি হয় মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি এবং এক্সট্রিম ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট টিবি, যার চিকিৎসা খুবই দুঃসাধ্য এবং ব্যয়বহুলও বটে।

যক্ষা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তাই রাস্তা-ঘাটে হাঁচি-কাশি এলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত এবং যত্রতত্র কফ-থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

যক্ষায় আক্রান্ত রোগীকে যথাযথ পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শ্লেষ্মায় জীবাণুবাহী যক্ষার ক্ষেত্রে রোগীকে অন্তত ২ সপ্তাহ আলাদা রাখতে হবে এবং রোগীর মুখে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে রাখা জরুরি।

সাধারণত চিকিৎসার দুই থেকে চার সপ্তাহের মধ্যে জ্বর কমে যায়, খাবারে রুচি আসে এবং ওজনও বাড়তে থাকে। এ ধরনের উন্নতি দিয়ে বোঝা যায়, রোগী চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন।

যক্ষ্মার ওষুধে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, যেমন- জন্ডিস, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা, পায়ে শিরশির করা ও অবশতা দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদক,৩০ আগস্ট ২০২২