মুক্তা আক্তার (১৬) মতলব উত্তর উপজেলার শরীফ উল্লাহ হাইস্কুল এন্ড কলেজের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। প্রতিদিনের মতো লেগুনা গাড়িতে করে প্রাইভেট পড়তে স্কুলের মিজান স্যারের কাছে যাচ্ছিল মুক্তা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্কুলের লালপুর মিজান স্যারের কাছে পৌঁছা হলোনা মুক্তার। পথেই ঝড়ে গেল তাজা প্রাণ।
৫ ডিসেম্বর রোববার সকাল ৭টার দিকে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল কনুমার্কেট বেরীবাঁধ মহসড়কে লেগুনা থেকে নামতে গিয়ে নামার আগেই বেপরোয়া লেগুনা র্ষ্টাট দিয়ে বেপরোয়া ভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় ছিটকে পড়ে মুক্তা আক্তার (১৬) মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
পরে গুরুতর আহত মুক্তাকে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত্যুর খবর শোনার পরপরই মতলব উত্তর উপজেলার শরীফ উল্লাহ হাইস্কুল এন্ড কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজন সড়কে টায়ার ও গাছ ফেলে ব্যাড়িকেড দেয়। ফলে ৩ ঘন্টা পর্যন্ত যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নিহত মুক্তা আক্তার উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের রঙ্গুখারকাদি গ্রামের আয়েত আলী চোকদারের বড় মেয়ে। স্কুল ছাত্রী মুক্তার মৃত্যুতে পরিবারের ও সহপাঠিদের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ। এ লেগুনা গাড়ির মালিক কালিপুর চৌধুরীর বাড়ির রহমত উল্লাহ চৌধুরী।
মতলব উত্তর উপজেলার শরীফ উল্লাহ হাইস্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ উল্লাহ বলেন, মুক্তা স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। সে সদ্য এসএসসি পরীক্ষার টেস্ট পরিীক্ষায় ভালো ফলাল করেছে। সে আমার স্কুল খেকে জিপিএ-৫ পাওয়ার মতো শিক্ষার্থী। প্রতিদনের মতো সে লেগুনায় করে স্কুলে আসছিলো। তাদের বহণকারী লেগুনা উপজেলার ষাটনল ইউনিয়নের ষাটনল কনুমার্কেট বেরীবাঁধ মহসড়কে লেগুনা থেকে নামতে গিয়ে নামার আগেই বেপরোয়া লেগুনা র্ষ্টাট দিয়ে বেপরোয়া ভাবে চালিয়ে যাওয়ার সময় ছিটকে পড়ে মুক্তা আক্তার (১৬) মাটিতে পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন।
পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এটি একটি হত্যাকান্ড। এ সংবাদ পাওয়ার পর পরেই আমি এবং আমার স্কুলের সকল শিক্ষক,ম্যানেজিং কমিটি মুক্তার বাড়িতে আসি। আমি এবং আমার স্কুলের সকল শিক্ষক,ম্যানেজিং কমিটি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানাই। অবিলম্বে লেগুনা চালক নজরুলকে গ্রেফতার করা হইক। তিনি শরীফ উল্লাহ হাই স্কুল এন্ড কলেজ এর পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
নিহত মুক্তা আক্তার এর স্কুলের দশম শ্রেনীর এক ছাত্র বলেন, এই মহাসড়কে বেরীবাঁধ এ লেগুনাগুলো বেপরোয়া ভাবে চলাচল করে। আমাদের বোন আজকে সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় ইচ্ছাকৃতভাবে আমাদের বোনকে মেরে ফেলেছে। আমাদের বোন আসন্ন ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। কেন এভাবে বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে আমার বোনকে মেরে ফেলা হলো তার জন্য এ হত্যার বিচার চাই আমরা। আজকে এই রাস্তায় কোনো গাড়ি চলবেনা। চালক নজরুলকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানাই।
আন্দোলনরত নিহত মুক্তা আক্তার এর সহপাঠি নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমার বান্দবীকে চালক ইচ্ছাকৃতভাবে মেরে ফেলেছে। আমরা এর সুষ্ঠ বিচার চাই। আমরা নিরাপদ সড়ক চাই। আমরা আজকে রাস্তায় নিরাপদ না। আমরা আমাদের সেফটির জন্য আজকে রাস্তা বন্ধ করেছি। প্রত্যেকটা গাড়ি চালকেকে আইন মানতে হবে। গাড়ি চালকদেরকে আমাদের নিরাপত্তার দিগ নিশ্চিত করে গাড়ি চালাতে হবে। আজকে মুক্তার প্রাণ ঝড়ে পড়েছে। আগামীকাল হয়ত আমি বা আমার কোন সহপাঠি এ ঘটনার শিকার হতে পারি। তাই নিজেদের নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত না হলে আমরা আন্দোলন থেকে ফিরবোনা।
এদিকে, ঘটনার পরপরই ষাটনল বেরীবাঁধ সড়ক অবরোধ করে শরীফ উল্লাহ হাইস্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ। এসময় শিক্ষার্থী ও সাধারণ লোকজন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে এবং বড় বড় গাছের গোড়ালি ফেলে যান চলাচল বন্ধ করে দেন।
পরে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে এসআই মিজানুর রহমানসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় গাড়ির চালক-হেলপারদের গ্রেফতারের আওতায় আনা হবে আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ অবরোধ তুলে নেন এবং স্বাভাবিক হয় যানচলাচল।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিনের বলেন, এ ঘটনায় ঘাতক লেগুনাটি আটক করা হয়েছে। চালককে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। অভিযোগের ভিত্তিতে এ ঘটনায় আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে জানান ওসি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ৫ ডিসেম্বর ২০২২