চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪ টি ইউনিয়নের নারী শ্রমিকরা মজুরী বৈষম্যের শিকার। যুগযুগ ধরে চলছে এ মজুরী বৈষম্য। উপজেলার সম্বলহীন নারীরা পাল্লা দিয়ে পুরুষ শ্রমিকদের সাথে কাজ করছে প্রাচীনকাল থেকে।
উপজেলায় শ্রমিক হিসাবে মহিলাদের কদর বেশি। কারণ পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে এক দিকে যেমন মহিলা শ্রমিকদের মুজুরী কম। অপরদিকে তাদের কাজে কোন ঝুঁকি নেই।
এসব মহিলা উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ইট ভাটা, মাটি কাটা, রাস্তার পাশে গাছ পালা কাটা, ধান কাটা, আলু তোলা, ধান রোপন, ধান শুকানো, বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করে। আবার বাসায় এসে স্বামীকে সহযোগিতা করা ছাড়াও কোন কোন ক্ষেত্রে পুরো পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে আসছে।
বিশেষ করে উপজেলায় রাস্তা সংস্কার, ইট ভাঙা, ধান কাটা ও নতুন ভবন নির্মাণে নারী শ্রমিকের প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি। সে সময়ে একজন পুরুষ শ্রমিকের মজুরি দেওয়া হয় ৩৫০ টাকা পক্ষান্তরে নারী শ্রমিকদের মজুরী দেওয়া হয় ১৫০ টাকা।
একই কাজে কম মজুরি নিয়ে নারী শ্রমিকরা কাজ করলেও আজ পর্যন্ত তাদের পাশে কেউ দাড়ায়নি। দিনের পর দিন নারী শ্রমিকরা তাদের প্রাপ্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মতলব উত্তর উপজেলা উ-সহকারী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃ ইউনুস আলী জানান, মতলব উত্তর উপজেলা আরইআরএমপি-২ প্রকল্পের আওতায় পাকা রাস্তার সাইটগুলো সংরক্ষণ, ছোট ছোট গর্ত ভরট করাসহ রক্ষণা-বেক্ষণের কাজে নিয়েজিত রয়েছে মোট ১৫২ জন অসহায়, অস্বচ্ছল, বিধাবা ও স্বামী পরিত্যক্ত নারী শ্রমিক।
তার মধ্যে এনায়েত নগর থেকে শ্রীরায়েরচর পর্য়ন্ত ১৩ জন। আর বাকি শ্রমিক বিভিন্ন ইউনিয়নগুলোতে। তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কাজ করেন।
তাদের দৈনিক মজুরি দেয়া হয় ১৫ টাকা। এখানেও নারী শ্রমিকরা মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই কাজগুলোতে যদি পুরুষ শ্রমিক কাজ করতো তাহলে তাদেও মজুরী হতো অন্যন্ত পক্ষে ৩৫০-৪০০ টাকা। মাটি কাটা কাজে নিয়োজিত এমন কয়েকজন নারী শ্রমিকের সাথে সরেজমিনে কাজ করা অবস্থায় কথা হয়। কলাকান্দা ইউনিয়নের নারী শ্রমিক স্বামী হারা সেলিনা(৩০), বিপাসা (২৮), রাজিয়া আক্তার (৩০), বিপাসা আক্তার (২৭), জেসমিন (২৯), আকলিমা (২৯), এদের কারো স্বামী আছে আবার কারো স্বামী থাকলেও অস্বচ্ছল পরিবার আবার কেউ অল্প বয়সে হয়েছে বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্তা।
তাদের মধ্যে আবার অনেকেরই কোনো বাড়ি ঘর নাই। তাদের ছোট-বড় সন্তানদের নিয়ে এই আয়-রোজগার দিয়ে কোনো রকম পরের বাড়িতে চলে তাদের টানাপোড়ন জীবন।
তাদের মধ্যে আবার অনেকেরই কোনো বাড়ি ঘর নাই। তাদের ছোট-বড় সন্তানদের নিয়ে এই আয়-রোজগার দিয়ে কোনো রকম পরের বাড়িতে চলে তাদের টানাপোড়ন জীবন।
এছাড়াও সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের নারী শ্রমিক রিনা আক্তার (২৯), ইসলামবাদ ইউনিয়নের পলি আক্তার (২৬), মোহনপুর ইউনিয়নের নাজমা বেগম (৩২)সহ আরো কয়েকজনের শ্রমিকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, নারী শ্রমিক রাজিয়া আক্তার জানান, সারাদিন কাজ করে পাই ১৫০ টাকা। অথচ আমাদের জায়গায় পুরুষ সারাদিন কাজ করলে পেতো ঘন্টায় ৪০ টাকা হিসাবে ৩৬০ টাকা। এখানেও আমাদের ঠকানো হচ্ছে। একদিন কাজে না গেলে ঘরে খাবার জুটেনা। সন্তান নিয়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।
রুপালি বেগম (৩) জানান, তার ২টি সন্তান রয়েছে। স্বামী নাই। তার কোনো বাড়ি ঘর নাই। ১টি সন্তান তুষার ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে। তাদের পড়াশুনা খরচ চালানো আমার পক্ষে কষ্ট হয়ে পরেছে। এই আয়-রোজাগার দিয়ে সংসার চালিয়ে ছেলে-মেয়েদের পড়াশুনা চালানো সম্ভব নয়।নারী শ্রমিক হাসিনা বেগমের স্বামীর বাড়ি বড়িশাল। সে সেখানে বিয়ে করেছেন। তার কোনো খোঁজখবর নেয়না স্বামী। তার ১টি সন্তান রয়েছে। অন্যের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকেন সন্তানকে নিয়ে। আর বিপাসা বেগম (৩০) স্বামী জামাল হোসেন ৪ বছর আগে মারা গেছে। ২টি ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে ডালিম ৬ষ্ঠ ও ছোট ছেলে সাগর পঞ্চ শ্রেণীতে পড়ে। তাদের পড়াশুনার খরচ চালানো তার পক্ষে অসম্বব হয়ে পড়েছে। নারী শ্রমিক জেসমিন আক্তার (২৮) জানান তার স্বামী ছিঠু প্রধান মানসিক প্রতিবন্ধি। সে কোনো কামাই রোজগার করতে পারেনা।
আবার বাড়ি-ঘরও নাই। চেয়ারম্যানের বাড়িতে আশ্রয়ে থাকেন স্বামী সন্তান নিয়ে।
জানা গেছে উপজেলায় এরূপ প্রায় ৩’সহস্রাধিক নারী শ্রমিক পুরুষের পাশাপাশি কঠোর পরিশ্রমক করে মজুরী বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। আজ ১লা মে বিশ্ব শ্রমিক দিবসে পুরুষের ন্যায় মতলবের নারী শ্রমিকরাও তাদের ন্যায্য মজুরী প্রত্যাশা পুরণে সবাই এগিয়ে আসবে বলে তারা মনে করেন ।
উপজেলা সহকারী প্রক্যেশলী (অতিরিক্থ দায়িত্ব) মোঃ ইউনুস আলী চাঁদপুর টাইমসকে জানান, উপজেলায় আরইআরএমপি-২ প্রকল্পের আওতায় পাকা রাস্তার সাইটগুলো সংরক্ষণ,ছোট ছোট গর্ত ভরট করাসহ রক্ষাণা-বেক্ষণের কাজে নিয়েজিত রয়েছে মোট ১৫২ জন অসহায়,অস্বচ্ছল, বিধাবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী শ্রমিক। তারা সত্যিকার অর্থে যে শ্রমিক মজুরী পায় তা দিয়ে তাদের জীবন চলে না। সরকারের পাশাপাশি সমাজের বিত্থবানদেরকেও তাদের জন্য কিছু করা প্রয়োজন রয়েছে।
খান মোহাম্মদ কামাল,
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪: ০০ এএম, ১ মে ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur