চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচি ব্র্যাকের আয়োজনে টিবি, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং কোভিড-১৯ কার্যক্রমের উপর ওরিয়েন্টশন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর ব্র্যাক শাখার সেমিনার কক্ষে এ ওরিয়েন্টশন সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এতে টিবি, ম্যালেরিয়া, এইচআইভি এবং কোভিড-১৯ কার্যক্রমের উপর এবং সচেতনাতা তৈরি উপর বিস্তার আলোচনা করেন মতলব উত্তর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.আসাদুজ্জামান জুয়েল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন, যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসুচির ব্র্যাক এর কর্মসুচী সংগঠক নারদ চন্দ্র কর।
আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএলসিএ মোঃ সাদেকুর রহমান, বাড়িয়া ডায়াগণস্টিক সেন্টারের পরিচালক মোঃ দেলোয়ার হোসেন,ছেংগারচর পৌর বাজার বনিক সমবায় সমিতি লিঃ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোঃ নাছির ফরাজী, মোঃ মফিজুল ইসলাম খান, মোঃ কামাল হোসেন খান, মোঃ কাউছার মেহেদী,ছেংগারচর সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক হাবিবুর রহমান, মোঃ সারোয়ার প্রমুখ।
উক্ত ওরিয়েন্টশন সভায় পল্লী চিকিৎসক,জন প্রতিনিধি,মসজিদের ইমাম,সাংবাদিক,স্বাস্থ্যকর্মী, শিক্ষক ও এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করেন।
সভায় বিভিন্ন বক্তারা বলেন, দেশে এখনো বড় এক স্বাস্থ্য সমস্যা যক্ষা। এ রোগে শুধু যে নিম্ন আয়ের মানুষেরাই আক্রান্ত হচ্ছে, তা কিন্তু নয়, যে কারোরই হতে পারে যক্ষা। করোনার চেয়ে বেশি ভয় যক্ষা, এইচআইভি, ম্যালেরিয়ায়। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থার চিত্র বদলে দিয়েছে। কিন্তু করোনার চেয়েও বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে আরেকটি রোগ, যার নাম যক্ষা।
ওরিয়েন্টশন সভায় বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতিদিন যক্ষায় মারা যান ৪ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ। বিশ্বে যক্ষায় আক্রান্ত মোট রোগীর দুই-তৃতীয়াংশ যে আটটি দেশে আছে, তারই একটি বাংলাদেশ। বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে ৩ লাখ মানুষ যক্ষায় আক্রান্ত হন এবং এর মধ্যে ৭০ হাজার রোগী মারা যান।
করোনাভাইরাস আসার আগ পর্যন্ত যক্ষার আর দুটি ভয়ংকর বন্ধু হিসেবে ছিল এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া। গত এক দশকের মধ্যে ২০১৮ সালে এ দুটি রোগে মৃত্যুর সংখ্যা রেকর্ড গড়েছিল। তবে এ বছর করোনাভাইরাস ধাক্কা দিয়েছে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে। ফলে যক্ষা, এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে অবহেলা দেখানোয় এগুলো বড় হুমকি হয়ে উঠে আসতে পারে। কাজেই একমাত্র সচেতনতা ও যথাসময়ে সুচিকিৎসায় পাড়ে যক্ষা,এইচআইভি ও ম্যালেরিয়া থেকে রক্ষা পেতে।
ওরিয়েন্টশন সভায় টানা তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি- শুকনো কিংবা কফযুক্ত, কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ব্যথা, ওজন হ্রাস, অবসাদ, অরুচি, সন্ধ্যায় বা রাতে হালকা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর (৯৯-১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট) কিংবা রাতে ঘাম হলে অবশ্যই যক্ষা সন্দেহ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
চিকিৎসায় যক্ষা সম্পূর্ণরূপে ভালো হয়। দুই ধরনের ক্যাটাগরিতে যক্ষার চিকিৎসা দেওয়া হয়। একটি ক্যাটাগরিতে ছয় মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ খেতে হয়। অপর ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে ৮-৯ মাস ধরে নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।
যক্ষা প্রতিরোধে জন্মের পরপরই প্রত্যেক শিশুকে বিসিজি টিকা দেওয়া উচিত। হাঁচি, কাশি ও কফের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ায়। তাই রাস্তা-ঘাটে হাঁচি-কাশি এলে মুখে রুমাল চাপা দেওয়া উচিত এবং যত্রতত্র কফ-থুথু ফেলা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
যক্ষায় আক্রান্ত রোগীকে যথাযথ পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শ্লেষ্মায় জীবাণুবাহী যক্ষার ক্ষেত্রে রোগীকে অন্তত ২ সপ্তাহ আলাদা রাখতে হবে এবং রোগীর মুখে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। চিকিৎসা চলাকালীন রোগীকে নিয়মিত ফলোআপে রাখা জরুরি।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ১৫ নভেম্বর ২০২২