মতলব উত্তর

মতলব উত্তরে জমে উঠেছে পশুর হাট : স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার কোরবানির পশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠেছে। তবে গরুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই শারীরিক দূরত্ব মানছেন না। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে কেনাবেচা। হাটে আসা বেশির ভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই।

২৭ জুলাই সোমবার বিকেলে উপজেলার ছেংগারচর বাজার ঘুরে দেখা গেল কোরবানির পশুর হাটটি বেশ জমে উঠেছে।

মতলব উত্তর উপজেলায় কোরবানির পশুর হাট এবার খানিকটা দেরিতে জমে উঠেছে। শেষ মুহূর্তে হাটগুলোতে গরু উঠছে প্রচুর। স্থানীয় ক্রেতা ছাড়াও ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারের মৌসুমি গরু ব্যবসায়ী ও ব্যাপারীরা গরু কিনছেন। ক্রেতা-বিক্রেতা, হাট ইজারাদারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এখন পর্যন্ত গরুর দাম তুলনামূলক কম ও সহনীয়।

হাটের চিত্র দেখে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘কৃত্রিম সংকট’ তৈরি করা না হলে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এবার কোরবানির গবাদিপশুর দাম সহনীয় থাকবে। কারণ বাজারে প্রচুর গবাদিপশুর সরবরাহ। তবে খামারি ও গৃহস্থের অনেকেই লোকসানের আশঙ্কা করছেন। তাঁরা বলছেন, হাটগুলোতে প্রচুর গরু আমদানি হচ্ছে।

মতলব উত্তরের স্থানীয় হাটগুলোতে আগে কোরবানির ঈদের দু-তিন সপ্তাহ আগেই গবাদিপশুর হাটগুলোতে বেচাকেনা জমে উঠত। এবার শেষ সপ্তাহে ঢাকাসহ দেশের বড় বড় বাজারের ব্যাপারী ও গরু ব্যবসায়ীরা গরু কেনা শুরু করেছেন। এখনো চাহিদার তুলনায় হাটগুলোতে অনেক বেশি গরু উঠছে। ফলে বেচাবিক্রি আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কম। এই কারণে প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েও গরু বিক্রি করছেন। শেষ পযন্ত এ অবস্থা থাকলে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খামারি ও গৃহস্থেরা।

সোমবার (২৭ জুলাই) উপজেলার সবচেয়ে বড় েেকারবানির পশুর হাট ছেংগারচর বাজার ঘুরে দেখা গেল গরুর দাম কিছুটা কম। প্রত্যাশার চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের। এতে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন খামারি ও গৃহস্থেরা। অপরদিকে কম দামে কোরবানির পশু কিনতে পেরে ক্রেতারা ছিলো অনেক খুঁশি।

কোরবানি পশুর দাম নিয়ে স্বস্তি-অস্বস্তির পাশাপাশি উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, হাটগুলোতে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বালাই নেই। স্থানীয় বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলছে কেনাবেচা। হাটে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষের মুখেই মাস্ক নেই। পশুর পাশাপাশি গাদাগাদি-হুড়োহুড়ি করে মানুষকে হাটে চলাফেরা করতে দেখা গেছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মতলব উত্তর উপজেলায় ছোট–বড় ১৫টি কোরবানির পশুর হাট রয়েছে। এর মধ্যে স্থায়ী গবাদিপশুর হাট রয়েছে ৩টি। মতলব উত্তরের েেছংগারচর বাজার, লুধুয়া আমতলা বাজার ও কালির বাজার হাটে গবাদিপশু বেশি বিক্রি হয়।

গত সোমবার বিকেলে উপজেলার সবচেয়ে বড় গবাদিপশুর হাট ছেংগারচর বাজার হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাটে প্রচুর গরু উঠেছে। পশুর হাটে ভটভটি, নছিমন ও ট্রাকে করে হাটে গরু আসছিল। এই হাটে আকারভেদে প্রতিটি গরু ৩৫ হাজার থেকে শুরু করে আড়াই –তিন লাখ টাকায় গরু বিক্রি হচ্ছে। এদিন ছিলো এ হাটের সাপ্তহিক হাটের দিন। এ দিন সবচেয়ে বেশি গরু বেচা-কেনা হয়েছে।

ছেংগারচর বাজারের কোরবানিনর পশুর হাটের ইজারাদার মোঃ মোসলেম উদ্দিন খান ও মোবারক হোসেন মুফতি তারা বলেন, গতবারের তুলনায় এবার হাটে গরুর আমদানি বেশি। ছোট ও বড় গরুর তুলনায় মাঝারির চাহিদা বেশি। তবে গত বছরের তুলনায় এবার সব ধরনের গবাদিপশুর দাম কম রয়েছে। ক্রেতা-বিক্রেতা উভয় পক্ষই দাম নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে আমদানির তুলনায় বেচাবিক্রি মুটামুটি ভালো। আমাদের বাজারের আগামী শুক্রবার শেষ হাটের দিন পর্যন্ত বেচা-বিক্রি চলবে। ঢাকা-চট্টগ্রামের গরু ব্যবসায়ীরা এলে দাম বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পশুর হাট পরিচালনা করছি। হাটে কম খাজনা নেওয়ার কারনে অনেকেই আসিল (খাঁজনা) দিয়ে যাচ্ছেন। এতে আমরা এবং ক্রেতা-বিক্রেতা উভই খুঁশি।

হাটে গরু কিনতে এসেছিলেন ছেংগারচরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আঃ সাত্তার। তিনি একটি গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। গরুর দাম জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৬৫ হাজার টাকায় মাঝারি আকারের এই গরু কিনলাম। ধারণা করছি, ২ মণ ৪০ কেজি থেকে ৪৫ কেজি পর্যন্ত মাংস হতে পারে। সবাই বলছে সস্তাই হয়েছে। গতবার এ ধরনের গরু ৭৫ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। সে তুলনায় এবার দাম কিছুটা কমই রয়েছে।’

উপজেলার ঘনিয়ারপাড় থেকে নিজের খামারে পালন করা ১০টি গরু নিয়ে এ পশুর হাটে এসেছিলেন মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, বড় আকৃতির ১০টি গরু এনেছেন। প্রতিটি গরুর দাম ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা হবে বলে আশা করেছিলেন। কিন্তু দাম বলছে ৮০-৮৫ হাজার টাকা করে। কেনা ও পরিচর্যা খরচসহ প্রতিটি গরুর দাম ৯০ হাজারের নিচে হলে লোকসান গুনতে হবে। এর আগে আরও দুটি হাট ঘুরেছেন। কিন্তু প্রত্যাশার দাম না পাওয়ায় গরুগুলো বিক্রি করেননি। শেষ হাট পর্যন্ত এ রকম দাম থাকলে বাধ্য হয়ে লোকসান দিয়েই গরু বিক্রি করতে হবে।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এএম জহিরুল হায়াত বলেন, শর্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাট বসানোর কথা। আমরা সব ইজারাদারকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করার জন্যে বলেছি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মতলব উত্তর উপজেলার নির্বাহী অফিসার এএম জহিরুল হায়াত বলেন, শর্ত অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনেই হাট বসানোর কথা। আমরা সব ইজারাদারকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করার জন্যে বলেছি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিবেদক:কামাল হোসেন খান,২৯ জুলাই ২০২০

Share