চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের গ্রীন ক্ল্যাব (গ্রীন এগ্রো নামক) গাভীর খামারে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনের ঘটনা ঘটেছে।
গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাত ২টার সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতিকারীরা আর্ত মানবতার সেবায় নিয়োজিত গ্রীন ক্ল্যাব চান্দ্রাকান্দি (গ্রীন এগ্রো) একটি গাভীর খামারে ৩০টি গাভী পুড়িয়ে মারার অসৎ উদ্দেশ্যে ওই খামারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি ঘটায়। এতে খামারের অর্ধেক অংশ পুড়ে যায়। এতে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে খামার কর্ক্ষৃপক্ষ। তবে খামারের দায়িত্বরত কর্মচারীর বুদ্ধিমত্তায় খামারটিতে থাকা ৩০টি গাভী অক্ষত অবস্থায় উদ্বার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে গ্রীন ক্লাব চান্দ্রাকান্দি (গ্রীন এগ্রো) মানবসেবামূলক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন বুধবার বিকেলে মতলব উত্তর থানায় একটি জিডি দায়ের করেছেন।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের গ্রীন ক্লাব (গ্রীন এগ্রো নামক) গাভীর খামারে দুষ্কৃতিকারীদের দেওয়া আগুনে খামারটির পশ্চিম অংশ পুড়ে গেছে।
খামারের সার্বিক দায়িত্বে থাকা কর্মচারী মোঃ জীবন জানান,প্রতিদিন আমি খামারে গাভীদের খাবার খাইয়ে মশারী টানিয়ে বুধবার রাত ১২টার সময় ঘুমাতে যাই। রাত ২টার সময় খামারের গাভীর চিৎকারে আমি ঘুম থেকে উঠে দেখি খামারে আগুন। আমি তাৎক্ষনিক মোটর চালিয়ে পাইপ দিয়ে দ্রুত পানি দিতে থাকি। আমার স্ত্রী ও আমার টিৎকারে খামারের কমিটির নেতৃবৃন্দ ও আশেপাশের লোকজন দ্রুত ছুটে আসে। আমরা গাভীগুলো দ্রুত নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাই। মোটর দিয়ে দ্রুুদ পানি দেওয়ার কারনে এবং লোকজনদের আন্তরিকতায় আল্লাহপাকের অশেষ মেহের বানীতে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে সক্ষম হই। তবে ততোক্ষনে খামারের অর্ধেক অংশ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
জানা যায়, উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের গ্রীন ক্লাব চান্দ্রাকান্দি (গ্রীন এগ্রো নামক) গাভীর খামারের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আউয়াল ১২০ জন সদস্য নিয়ে আর্ত মানবতার সেবার জন্য সমাজের দরিদ্র ও অসহায়দের সাহায্য সহযোগিতার সেবার ব্রত নিয়ে ২৫ শতক জায়গায় ৫০টি গাভী নিয়ে একটি গাভীর খামার প্রতিষ্ঠা করেন আজ থেকে তিন বছর আগে। এ খামারটি প্রতিষ্ঠাকালিন সময় থেকেই সমাজে অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকা কিছু মাদকাশক্ত বখাটে তারা এর পিছু লাগে। তরা এটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য বিভিন্ন অপচেষ্টা চালাতে থাকে।
গ্রীন ক্লাব চান্দ্রাকান্দি (গ্রীন এগ্রো নামক) গাভীর খামারের সহ-সভাপতি মোঃ রাসেল মামুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম টিটু,অর্র্থ-বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মোহন, আইন বিষয়ক সম্পাদক মোঃ সালাউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক মোঃ সুরুজ্জামান,সদস্য মোঃ মুক্তার হোসেন ও সদস্য মোঃ রাশেদুল ইসলামসহ আরো কয়েকজনদের সাথে সরেজমিনে আলাপ কালে জানা যায়, বিশিষ্ট সমাজ সেবক ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল আউয়াল এলাকায় দেশের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে সমাজের দরিদ্র ও অসহায় মানুষের পাশে দাড়ানোর লক্ষ্যে গ্রীন ক্লাব চান্দ্রাকান্দি (গ্রীন এগ্রো নামক) গাভীর খামার প্রতিষ্ঠা করেন। এই খামার থেকে প্রতিদিন গাভীর দুধ বিক্রি করে যে আয় হয় তা সরাসরি একাউন্ডে চলে যায়।
সংগঠনে মোট ১২০ জন সদস্য রয়েছে। প্রতি দিন ৬০-৭০ কেজি দুধ বিক্রি করে এই খামারে যে আয় হয় তা আর্ত মানবতার সেবায় ব্যয় করা হয়। যেমন- গৃহহীন মানুষকে ঘর নির্মাণ, গরীব,দুস্থ পরিবারকে মাসিক চাউল প্রদান,গরীব শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য বই-খাতাসহ পড়ালেখার খরচ প্রদান,গরীব ও অসহায়দের চিকিৎসাসেবায় সাহায্য সহযোগিতা,দরিদ্র মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার খরচ, রমজান মাসে গরীব ও দুস্থ্যদের মাঝে সেমাই,চিনি,মসলা ও বস্ত্র বিতরণ এবং শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে মানবতার সেবায় ব্যয় করা হয়।
এখান থেকে সভাপতি,সাধারণ সম্পাদক কিংবা ক্লাবের কোনো সদস্য ব্যক্তিগতভাবে এ থেকে কোনো অর্থ নিচ্ছেন না। এক শ্রেনীর দুষ্কৃতিকারীরা এমন একটি ভালো উদ্যোগকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যে খামারের গাভীগুলো পুড়িয়ে মারার লক্ষ্যে এধরনের জগন্যতম ঘৃনিত কাজ করেছে বলে তারা মনে করেন। এদিকে গাভীর খামারে দুষ্কৃতিকারীদের দেওয়া আগুনের ঘটনায় ওই এলাকায় বড় ধরনের অগ্নিকান্ড থেকে রক্ষা পেয়েছে অনেকগুলো পরিবার। কেননা খামারের পাশেই রয়েছে অনেকগুলো বশত বাড়ি।
মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন মৃধা বলেন,এ ব্যাপারে বুধবার মতলব উত্তর থানায় জিডি করেছেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কবির হোসেন। সংবাদ পাওয়ার সাথে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থলে অফিসার পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদক:কামাল হোসেন খান