সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন আপন দুই ভাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৌহিত্র মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে টানা ষষ্ঠবারের মতো নৌকা প্রতীকে বিজয়ী নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন ও ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনে দ্বিতীয়বারের মতো বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী।
নিক্সন ও লিটন সাবেক সংসদ মরহুম ইলিয়াছ চৌধুরীর ছেলে ও হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের ভাই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা-সদরপুর-চরভদ্রাসন) আসনে ভোটের মাঠে পরাজিত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক সাংসদ কাজী জাফরউল্লাহ। আর এই পরাজয়কে খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাই তার রাজনৈতিক অপমৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছে। কাজী জাফরউল্লাহ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রেসিডিয়াম সদস্যও।
এদিকে, মাদারীপুর-১ (শিবচর) আসনে নূর-ই আলম চৌধুরী লিটন নৌকা প্রতীকে ২লাখ ২৭ হাজার ৪৫৪ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মাওলানা জাফর আহম্মদ হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৩৬ ভোট। এছাড়া এ আসনে সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু ধানের শীষ প্রতীকে পেয়েছেন ৩০৫ ভোট, সাহনেয়াজ তোতা গোলাপফুল প্রতীকে পেয়েছেন ১০৭ ভোট, জহিুরুল ইসলাম মিন্টু লাঙ্গল প্রতীকে পেয়েছেন ৬৪ ভোট। এ আসনে ভোট বাতিল হয়েছে ৬২৬, কাস্টিং ভোট ৯৩ দশমিক ৪২ শতাংশ।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থেকেও ফরিদপুর-৪ আসনের সাধারণ মানুষ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর কাছে যেতে পারেননি কাজী জাফরউল্লাহ। এ কারণে সুযোগ বুঝে ব্যালট পেপারেই তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। পাশাপাশি তারা গ্রহণ করে নিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া এলাকার মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সনকে।
নিক্সন সাবেক সংসদ মরহুম ইলিয়াছ চৌধুরীর ছেলে ও হুইপ নূর-ই আলম চৌধুরী লিটনের ভাই। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো এবারো বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, ফরিদপুর-৪ আসনটি সব সময়ই আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। এই আসনটি ৩০ বছর আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। অর্থাৎ ৬টি সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় দলটি। কাজী জাফরউল্লাহ নিজেই এই আসন থেকে ২০০১ সালে নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে অযোগ্য হওয়ায় তার স্ত্রী নিলুফার জাফরউল্লাহ নির্বাচন করেন এবং বিজয়ী হন। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দুর্নীতির কারণে পরাজিত হন কাজী জাফরউল্লাহ।
এদিকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও এলাকার মানুষের জন্য কোনো উন্নয়ন বা খোঁজ খবর নেননি কাজী জাফরউল্লাহ। এ কারণেই মূলত স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। পাশাপাশি রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কারণে নিক্সন চৌধুরীর সঙ্গে সম্পর্ক ভালো হয় তাদের।
ওই আসনের চরভদ্রাসন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক মাস্টার বলেন, ‘কাজী জাফরউল্লাহ রাজধানীর গুলশান-বনানী-ধানমন্ডির নেতা। তৃণমূল নেতাকর্মী থেকে তিনি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। সাধারণ নেতাকর্মীদের সঙ্গে তিনি বুক মেলানো তো দূরের কথা, হাতটা পর্যন্ত মেলাতে চান না। সেই নেতা কীভাবে নির্বাচনে জয়ী হবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘নিক্সন চৌধুরী পাশের জেলা থেকে এসেও এ আসনে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। তার ব্যবহারও ভালো। এ কারণে এই অঞ্চলের মানুষ তাকে বুকে টেনে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনবিচ্ছিন্নতাই কাজী জাফরউল্লাহের পরাজয়ের কারণ। আর এই পরাজয়ে তার রাজনৈতিক অপমৃত্যু হয়েছে। এখন তার আর এই এলাকায় রাজনীতি না করাই মঙ্গল।’
সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘কাজী জাফরউল্লাহের কাছে নেতাকর্মীদের কোনো দাম নেই। অপরদিকে নিক্সন চৌধুরী স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করলেও আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তিনি দলের কর্মীদের ভালোবাসেন। বিপদে-আপদে পাশে থাকেন। এ কারণে এই আসনে কাজী জাফরউল্লাহের পরাজয় হয়েছে। তৃণমূলের কাছে তার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই।
ভাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া বিশ্বাস জানান, এই আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। এই এলাকার ৮০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থক। কাজী জাফরউল্লাহের কাছে নেতাকর্মীদের কোনো দাম নেই। এ কারণে তার পরাজয় হয়েছে।’
বার্তা কক্ষ
৩ জানুয়ারি, ২০১৮