শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে শিশুদের রোটা ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ঠাঁই হচ্ছে না চাঁদপুরের মতলব আইসিডিডিআরবি ( আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র) হাসপাতালে।
গত ৪৪ দিনে রোটা ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ১৩ হাজার শিশু ভর্তি হয়েছে এ হাসপাতালে। ১শ শয্যার এ হাসপাতালে রোগীদের চাপ বেড়ে যাওয়ায় বারান্দায় তাবু টানিয়ে আলাদা বেড বসিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এসব রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
মতলব আইসিডিডিআরবি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিসেম্বর মাসে ৩১ দিনে ১০ হাজার ১’শ এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১৩ তারিখ দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার ৯২৭ শিশু রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয় । গড়ে দৈনিক ২৯৫ শিশু ভর্তি হতে দেখা যায়। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে তিনগুন বেশী। এসব শিশুদের বয়স শূন্য থেকে সর্বোচ্চ ২ বছর। শিশুদের চিকিৎসা সেবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে অতিরিক্ত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ করা হয়েছে। তবে অভিভাবকদের আতংকিত না হয়ে স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল বা মতলব হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
হাসপাতালের দেয়া পরিসংখ্যানে আরো জানা গেছে, অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে গেলো (২০২২ খ্রী.) ডিসেম্বর মাসে রোটা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ১০ হাজার ১০০ শিশু চিকিৎসা নিয়েছে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে। চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, শরীয়তপুর ও মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রায় ৩৫ টি উপজেলা থেকে রোগী আসে এ হাসপাতালে।
হাসপাতালের দেয়া তথ্যমতে জানা গেছে, গেল ডিসেম্বর মাসে যেসব উপজেলা থেকে বেশী রোগী ভর্তি হয়েছিল সেগুলোর মধ্যে চাঁদপুর সদর থেকে ৫৪১, কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলা থেকে ৫৬৪, লক্ষীপুর জেলা সদর থেকে ৪৮৫, কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা থেকে ৫২৬, দাউদকান্দি উপজেলা থেকে ৪৮৫, বড়ুরা উপজেলা থেকে ৪৩৩, দেবীদ্বার উপজেলা থেকে ৫৩৮, চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলা থেকে ৪৪০, ফরিদগঞ্জ উপজেলা থেকে ৩৭৪ শিশু। হাসপাতালে আসা শিশুদের অভিভাবকেরা এখানে চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুবই সন্তুষ্ট।
চিকিৎসা নিতে আসা শরীয়তপুরের সাড়ে ৫ মাসের শিশু ফারাবীর মা উম্মে সালমা বলেন, তার বাচ্চার ৪ দিন যাবৎ ঘন ঘন পাতলা পায়খানা ও বমি হচ্ছিল।
স্থানীয় চিকিৎসকের পরামর্শে ২ দিন ঔষধ খাওয়ানোর পরও ভাল না হওয়ায় বৃহস্পতিবার দুপুরে এ হাসপাতালে নিয়ে আসি।এখানে ভর্তি হওয়ার ১ দিনের মধ্যে তার শিশু বাচ্চা আগের চেয়ে অনেক সুস্থ্য আছে।
মুন্সীগঞ্জ থেকে আসা আনাস (১০ মাস), নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার স্বাধীন ( ২ বছর), কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলা হান্নান (৪৫ দিন), ফরিদগঞ্জের ইকরা (১০ মাস) ও মতলবের ঢাকিরগাঁও গ্রামের সায়মা আক্তার (১৬ মাস) সহ ১০/১৫ টি শিশুর অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা যায়, একাধিকবার বমি ও ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হওয়ার পর শিশুদের প্রাথমিকভাবে নিজ এলাকায় ডাক্তার দেখানোর পর সুস্থ না হলে মতলব আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে নিয়ে আসেন । এখানে নিয়ে আসার পর চিকিৎসকদের সঠিক সেবা, পরামর্শ ও যত্নের কারনে অল্প সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠে শিশুরা। পরে তারা বাড়ী ফিরে যান।
আইসিডিডিআরবি মতলব হেলথ রিসোর্স সেন্টারের জৈষ্ঠ্য মেডিকেল অফিসার ডা. চন্দ্র শেখর দাস বলেন, বছরের ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রোটা ভাইরাস নামক ডায়রিয়া বেশী দেখা দেয়। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া শিশুদের ৫ থেকে ৭ দিন সময় লাগে সুস্থ হয়ে উঠতে। তবে আতংকিত বা ভয় পাওয়ার কিছু নেই। এ ক্ষেত্রে বেবি জিংক সিরাপ, খাবার সেলাইন খাওয়াতে হবে এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
আইসিডিডিআরবি মতলব হেলথ রিসোর্স সেন্টারের হেড ডা. মো. আল ফজল খান বলেন, হাসপাতালের ইতিহাসে এই প্রথমবার ডিসেম্বর মাসে সর্বাধিক রোগী ভর্তি হয়েছে। যা স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ বেশি রোগী। প্রায় ৩৫ টা উপজেলা থেকে নিয়মিত রোগী আসছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত চিকিৎসক ও জনবল নিয়োগ করার কথা জানান হাসপাতালের এই জৈষ্ঠ্য কর্মকর্তা।
তিনি আরো জানান, শীতকালে শিশুদের সাধারণত রোটা ভাইরাস হয়ে থাকে। ভর্তি হওয়া ৮৫ ভাগ রোগীই রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত। বুকের দুধ ও স্বাভাবিক খাবার দিতে হবে। আতংকিত হওয়ার কারণ নাই।
প্রতিবেদক: মাহফুজ মল্লিক,১৪ জানুয়ারি ২০২৪