চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভায় গ্রাহকদের প্রায় ১০ কোটি নিয়ে গ্রামীণ কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটি উধাও হয়ে গেছে। রোববার সকাল থেকে তাদের অফিস ছেংগারচর বাজার জনতা ব্যাংক সংলগ্ন একটি বিল্ডিং ভাড়া নেওয়া তৃতীয় তলায় তাদের এ অফিসটি তালাবদ্ধ দেখতে পায় গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের অভিযোগ প্রতারকরা সটকে পড়ে তাদের অফিসগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। রোববার থেকে মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ নামের সোসাইটির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মোবাইল নাম্বারও এখন বন্ধ রয়েছে। গত দু’দিন শত শত গ্রাহক এ অফিসে এসে তাদেরকে না পেয়ে তাদের চোখে যেন সর্ষে ফুল দেখছে। ফলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার দুই সহ¯্রাধিক গ্রাহক তাদের ৫ বছরের সঞ্চয় হারিয়ে পথে বসেছে।
জানা যায়, গ্রামীণ মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির এ প্রতিষ্ঠানটি বেশি মুনাফার লাভ দেখিয়ে ছেংগারচর বাজারের ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা সংগ্রহ করেছে।
ছেংগারচর পৌর বাজারের গ্রামীণ কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইট নামে ৫ বছর আগে জনতা ব্যাংক ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে। যা পরবর্তিতে ২০১৩ সাল থেকে মতলব উত্তর গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋনদান সমবায় সমিতি নামে কার্যক্রম চালায়। সমিতির সাইনবোর্ডে দেখা যায় নিববন্ধন ২২৪ চাঁদ/১৩,২২মে ২০১৩ইং, রেজিঃ৫৯৩,তারিখ-২৪ ডিসেম্বর ২০০৩ইং। গ্রাহকদের কাছ থেকে সঞ্চয় ও এফডিআর বাবাদ প্রায় ১০ কোটি টাকা আমানত গ্রহন করে।
ব্যাপারে গ্রাহক ছেংগারচর বাজারের মিষ্টি দোকানদার জয় মিয়া জানান,২০১২ সালে ৫ বছর মেয়াদী ডিপিএস করেন। তার ডিপিএস এ জমাকৃত টাকার পরিমান ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যা আগামী সপ্তাহে মেয়াদ শেষে তার জমাকৃত টাকা তাকে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তÍু তার আগেই ভুয়া কোম্পানির কর্মকর্তারা উধাও হয়ে যায়।
আরেক ব্যবসায়ী মোঃ মুছা খান তার ডিপিএস জমাকৃত টাকার পরিমান ৭ লাখ টাকা। জয় মিয়া ও মূছা খানের মতো আরেক কাঁচামাল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের এ মাল্টিপারপাস কো-অপরেটিভ সমবায় সমিতিতে ৭ লাখ টাকা জমা রেখেছেন। তিনি আগামী ১৫ দিন পর তার এ টাকা দেওয়ার কথা।
এছাড়া ছেংগারচর বাজারের পেয়াজ ব্যবসায়ী সুজন খান ২ লাখ টাকা, সার ব্যবসায়ী মোঃ মিজান ২ লাখ টাকা,ফল ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর ৫৫ হাজার টাকা, মোস্তফা ৩৫ হাজার টাকা, বিল্লাল ৩৫ হাজার টাকা, কাউছার ৮২ হাজার টাকা, আরো ব্যবসায়ী আমিনুল হক, ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন, ব্যবসায়ী শেখ ফরিদ বেপারী, মোহাম্মদ আলী, আলা উদ্দিন ,তবদিলসহ আরো নেকে প্রতারিত গ্রাহক অর্থ হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
সে হিসেবে প্রতারিত গ্রাহকরা এখন কোথায় গিয়ে টাকা চাইবে তারও কোনে উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না। গ্রামীণ কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটির চেয়ারম্যান অলিউল্যাহ মাসুদ চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার বিতারা ইউনিয়নের বিতারা গ্রামের মোল্লা বাড়ির বাসিন্দা। মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) মোবাইলে কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তার মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়।
অফিস তালা দিয়ে যাওয়ার খবর চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত গ্রাহকরা অফিসে এসে ভিড় জমায়।
ব্যবসায়ী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি দৈনিক কিস্তিতে গ্রামীণ লোন দিতেন। কয়েক মাস ধরে তারা লোন দেওয়া বন্ধ করে দেয়। আমাদের কাছ থেকে সঞ্চয় জমা নিয়েছে কিন্তÍু ঋন দেয়নি।
এদিকে গ্রামীণ কো-অপারেটিভ মাল্টিপারপাস সোসাইটির ভাড়া বাড়ির মালিক মোঃ সাধন সরকার বলেন,২০১২ সালে ৫ বছরের জন্য আমার বাড়ি নেয়। আমি যথাযথ নিয়ম মেনে আমার ষ্টাম্পের মাধ্যমে তাদের কাছে ভাড়া দেই। কিন্তু ২৩ নভেম্বর সকালে গ্রাহকরা এসে ওই অফিসটি বন্ধ দেখে আমাকে বিষয়টি জানায়। এ শাখার ব্যবস্থাপক মকবুল হোসেনের মুঠোফোনে (০১৭৪০-৯৬৩৩১৩) এই নাম্বারে কয়েকবার কথা বলার জন্য কল করলেও পাওয়া যায়নি। ফলে তাদের সথে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ প্রসঙ্গে মতলব উত্তর উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেন, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান। তাদের অর্থিক হিসাব আমাদের কাছে আছে। তাদের পালিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তÍু এই প্রতিষ্ঠানের বাইরে যদি কর্মকর্তা কোনো আর্থিক লেনদেন করে থাকেন সেটির হিসাব আমাদের কাছে নেই।
তিনি আরো বলেন, ‘উধাও হওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বিল্ডিং মালিকের সাথে কথা হয়েছে, যেন অফিসের কাগজপত্র সংরক্ষণ রাখেন। তাদের বিভিন্ন রেজিস্টার রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রকৃত লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
কামাল হোসেন খান, মতলব উত্তর করেসপন্ডেন্ট
।। আপডেট: ১১:২১ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
ডিএইচ