চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় এক হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলেকে বিয়ের দাবীতে তার(ছেলের) বাড়ীতে অনশন করে মুসলিম পরিবারের এক মেয়ে। এ ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের শান্তিনগর বাজারের পূর্ব পার্শ্বে কীর্তনীয়া বাড়ীতে শনিবার(২৭ ডিসেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। ছেলের নাম জয় কীর্তন (২১), তার পিতার নাম গৌরাঙ্গ কীর্তন এবং মেয়ের বাড়ী হাজীগঞ্জ উপজেলার নাসির কোর্টের মালাপাড়া গ্রামে।
হিন্দু সম্প্রদায়ের ছেলের বাড়ীতে মুসলিম পরিবারের মেয়ে বিয়ের দাবীতে অনশন করাকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করে।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কেএম ইশমাম এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,ছোট বেলায় মেয়ের মা তার বাবাকে ছিন্ন করে অন্য জায়গায় বিয়ে বসে। তখন থেকেই তার মা ও সৎ বাবার সাথে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থাকতেন মেয়ে। সেখানে জয় কীর্তন ব্যবসা করতেন এবং মোবাইলের মাধ্যমে উভয়ের পরিচয় ও প্রেমের সম্পর্ক হয়।
মেয়ে বলেন, আমি নারায়ণগঞ্জের বলেপাড়া এলাকায় বিউটি পার্লারের ব্যবসা করতাম।সেটির নাম ছিল সুমাইয়া বিউটি পার্লার।এরপর কসমেটিকস এর একটি দোকান দিয়ে নিজেই ব্যবসা করতাম।মোবাইলের মাধ্যমে জয় কীর্তনের সাথে আমার পরিচয় হয়।একপর্যায়ে উভয়ের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তবে সে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সেটি গোপন রেখেছিল।৩/৪ মাস পর জানতে পারি সে হিন্দু সম্প্রদায়ের। পরে সে আমাকে আশ্বস্ত করে মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে আমাকে বিয়ে করবে।এমন করতে করতে প্রায় ২ বছর ৩ মাস পেরিয়ে যায়। এ সময়ে মধ্যে সে ধর্মান্তরিত হয়ে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। সে ব্যবসার কথা বলে বিভিন্ন সময়ে প্রায় পৌনে চার লক্ষ টাকা আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়। হঠাৎ করে গত ১৫/২০ দিন যাবৎ যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় এবং গ্রামের বাড়ী মতলবে চলে আসে।
পরে আমি তার আইডি কার্ডের ঠিকানা অনুযায়ী শনিবার দুপুরে মতলবের উপাদী গ্রামে তার বাড়ীতে আসি আমার অধিকার আদায়ের জন্য। বাড়ীতে এসে জয় কীর্তনকে পাওয়া গেলেও স্থানীয় এলাকাবাসীর তোপের মুখে সে বাড়ী থেকে পালিয়ে যায়।
এদিকে বিষয়টি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে মুসলমান ধর্মের শত শত মানুষজন ওই বাড়ীতে যায় এবং উত্তেজনা পরিবেশ সৃস্টি হয়। জয় কীর্তনকে না পেয়ে আরো বেশী উত্তেজিত হয়ে যায় যুবসমাজ। বিষয়টি মতলব দক্ষিণ উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ইশমাম জানতে পেরে তাৎক্ষণিক মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন এবং মেয়েকে ওই বাড়ী থেকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম ইশমাম বলেন, ছেলে এবং মেয়ে দুজন দুই ধর্মাবলম্বীর। মেয়ের দেয়া জবানবন্দিতে জানা যায় তাদের দুজনের মধ্যে দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ছেলেও তার সাথে প্রতারণা করে গ্রামের বাড়ীতে চলে এসেছে।এদিকে মেয়ে নিজে বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।তাই বিষয়টি আইনি প্রক্রিয়ায় রয়েছে। সেজন্য মেয়েকে তার বাবার জিম্মায় বুঝিয়ে দেয়া হয়।
এসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুমতাহিনা পৃথুলা, মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ হাফিজুর রহমান, উপাদী উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদ উল্লাহ প্রধান ও সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
প্রতিবেদক: মাহফুজ মল্লিক,
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur