Home / উপজেলা সংবাদ / মতলব দক্ষিণ / মতলবে হাটবাজারে তিন ইঞ্চি দূরত্বও থাকছে না কেউ
মতলবে হাটবাজারে, নিয়মিতই বাজার করতে হয়

মতলবে হাটবাজারে তিন ইঞ্চি দূরত্বও থাকছে না কেউ

নিয়মিতই বাজার করতে হয় কামাল হোসেনকে। করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ শুরুর পর সতর্ক হয়ে যান। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাজারে যান না। আবার কয়েক দিনের বাজার একসঙ্গে কিনে আনেন। বাজারে লোকজনের ভিড়ও কমে গিয়েছিল। তবে কয়েক দিন ধরে বাজারের অবস্থা দেখে তিনি শঙ্কিত। লোকজনের প্রচণ্ড ভিড়। ঠেলাঠেলি করে সবাই কেনাকাটা করছেন। তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা দূরের কথা, তিন ইঞ্চি দূরত্বও থাকছে না।

চাঁদপুরের মতলব সরকারি কলেজের শিক্ষক কামাল হোসেন বলেন, কাঁচা তরকারি ও মাছবাজারে গিজগিজ অবস্থা। একজনের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন আরেকজন। কাপড় ও মুদিদোকানগুলোতেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন ক্রেতারা। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। মনে হচ্ছে, করোনা যেন তাঁদের কিছুই করতে পারবে না। করোনাকে মোটেও গা করছেন না তাঁরা।

শনিবার সকালে মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের বাজারা, বরদিয়া আড়ং, নারায়ণপুর, মুন্সিরহাটসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে কাঁচা তরকারি, মুদিদোকান ও মাছবাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। শারীরিক দূরত্ব মানার বিষয়টি দারুণভাবে উপেক্ষিত। গা–ঘেঁষাঘেঁষি করে পণ্যসামগ্রী কিনছেন তাঁরা। হাঁচি-কাশি দিচ্ছেন রাখঢাক ছাড়াই। করোনার ভয় কারও মধ্যেই নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসনের তৎপরতাও চোখে পড়েনি।

আগে হাটবাজারে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের তদারকি থাকলেও দু-তিন মাস ধরে সেই তৎপরতা নেই। এতে লোকজন লাগামহীন হয়ে পড়ছেন। করোনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না অনেকেই।

কথা হয় উপজেলার ঢাকিরগাঁও এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটবাজারে অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতাই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। সব কটি বাজারেই মানুষের ভিড় ও জটলা। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে জিনিসপত্র কিনছেন বা দর-কষাকষি করছেন লোকজন। ৩০-৪০ শতাংশ ক্রেতার মুখেই মাস্ক নেই। হাত–ধরাধরি করেও কেনাকাটা করছেন অনেকে। আগে হাটবাজারে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের তদারকি থাকলেও দু-তিন মাস ধরে সেই তৎপরতা নেই। এতে লোকজন লাগামহীন হয়ে পড়ছেন। করোনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না অনেকেই। এতে এ এলাকায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে।

উপজেলার কলাদী এলাকার প্রাথমিক শিক্ষক মো. আক্তার হোসেন বলেন, করোনাকালের শুরুতে লোকজনের মধ্যে যে করোনাভীতি ছিল, এখন তা নেই। সম্প্রতি হাটবাজারে গিয়ে লোকজনের চলাফেরার যে চিত্র পাওয়া যাচ্ছে, তাতে মনে হয়, দেশ থেকে করোনা একবারেই চলে গেছে। করোনা যেন কারও কাছেই কোনো ব্যাপার না। কিছু লোক মাস্ক পরলেও শারীরিক দূরত্ব মানছেন না প্রায় ৯৫ শতাংশ মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে তদারকি বা নির্দেশনাও নেই কারও। করোনা মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টরা যেন ঝিমিয়ে পড়েছেন। উপসর্গ নিয়ে এমনকি করোনায় আক্রান্ত হয়েও অনেকে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। নমুনা পরীক্ষা না করিয়ে অসুস্থতা চেপে যাচ্ছেন কেউ কেউ। এতে সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো দরকার।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রাজিব কিশোর বণিক বলেন, হাটবাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ তদারকি চালাচ্ছে। তবু তাদের নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না লোকজন। ফলে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ছে। তদারকি কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে।

তিনি জানান, মতলব দক্ষিণ উপজেলায় শনিবার পর্যন্ত নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ৬৩০টি। করোনায় সংক্রমিত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১৯৮ জন। তাঁদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১৬৫ জন।

করেসপন্ডেট,৩১ আগস্ট ২০২০