পূর্ণিমার প্রভাব কেটে গেলেও দক্ষিণা বাতাসে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে পদ্মা-মেঘনা। যার ফলে বিপদসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জোয়ারে উত্তাল মেঘনা নদীর পানি তীব্র গতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাঁদপুরের মতলব উত্তরে বন্যা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি ঘটে রাস্তা ঘাট প্লাবিত হয়েছে। হাঁটু সমান পানিতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা।
৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার দুপুরের পর থেকেই জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পায়। বিকেল গড়াতেই উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভাধীন মেঘনা তীরবর্তী শিকিরচর গ্রামে একটি জরাজীর্ণ ব্রিজসহ নদীঘেষা সড়ক রক্ষা দেয়ালটির নানান জায়গায় ফাঁটল দেখা দেয়।
সড়ক ভাঙন রোধে তাৎক্ষণিকভাবে বাশ দিয়ে দেয়ালটি অস্থায়ীভাবে টানা দিয়ে রাখে স্থানীয়রা। বর্তমানে গ্রাম বিলীন হওয়ার আশংকায় মারাতœক আতংকে রয়েছেন এলাকাবাসী।
মারাত্বক ঝুঁকিতে রয়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামের ৪নং শিকিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও। জণৈক অভিবাবক বলেন, ‘ এই স্কুলটা যদি ভাইঙ্গা যায়, তাইলে আমগো পোলাপাইনেগো কই পড়ামু। পোলাপাইন লইয়া কই যামু? ভয় লাগে, যদি ওয়াল ভাইঙ্গা যায় তয় স্কুলডাও ভাইঙ্গা যাইবো।’
ঝুঁকিতে রয়েছে ব্যীজে সংলগ্ন পার্শ্ববর্তী এলাকা বাহাদুরপুরের বিদ্যুৎ সংযোগের খুঁটিগুলোও। স্থানীয়রা জানান, যেভাবে স্রোতের গতি বাঁড়ছে সেখানে ভয়টা থেকে যায়। এই খুঁটিগুলো যেকোনো সময়ে হেলে পানিতে পড়তে পারে, তখন বিদ্যুুৎপৃষ্ট হয়ে দূর্ঘটনার ঘটার আশংকা রয়েছে।
সড়কের পাশে গড়ে ওঠা দোকানগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন দোকানদাররাও।
গ্রাম্য্য চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান বাবু আক্ষেপের সাথে জানান,‘করোনা ভাইরাসের কারণে চাকুরী হারালাম। গ্রামের মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তাা করে এই ফার্মেসীটা খুলেছিলাম। বন্যায় আমার ফার্মেসীটাও কেড়ে নিলো। বন্যার পানিতে অনেক ঔষুধের ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, মতলব উত্তরে স্থাপিত দেশের দ্বিতয়ি বৃহত্তম সেচ প্রকল্প উপজেলার মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের নানান জায়গায় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এতে করে পৌরসভার সড়কের নানান জায়গা ধেঁবে গেছে।
এমন খবর পেয়ে বাধ ভাঁঙন রোধে ছুটে আসেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সমাজসেবক আরিফ উল্ল্যাহ সরকার, শফিকুল ইসলাম, উপজেলা মুক্ত স্কাউটের ইউনিট লিডার আবুল কালাম আজাদসহ স্থানীয় জনহৈতশী ব্যক্তিবর্গ।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জামানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
পরে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন আসেন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ,মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প পানিব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ কুদ্দুস । শিঘ্রই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, বন্যার শঙ্কা থাকলেও মেঘনার পানি জোয়ারে বাড়ে এবং ভাটায় নেমে যায়। তাই এখানে বন্যার পানি স্থিতিশীল থাকছে না। ভাঙ্গন মোকাবেলায় সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া আছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড।
প্রতিবেদক:কামাল হোসেন খান, ৬ আগস্ট ২০২০