চাঁদপুরের মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলায় এ বছর পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। ক’দিন মতলবের দু’ উপজেলার চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে,এ বছর সঠিক সময়ে বর্ষা ও যথাসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পাটের ফলন অন্য ক’বছর থেকে অনেক ভালো হয়েছে।
প্রতি বছরেই পাট নিয়ে কৃষকরা স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখেন। গতবারও ভালো দাম পেয়েছেন। এবারো দামের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলেন তারা। কিন্তু বাম্পার ফলনের এ সুবিধা ভোগ করতে পারছে না কৃষকরা। ফলন ভালো হলে কী হবে দাম কমে যাওয়ায় কৃষকের মুখে খুশির হাসি নেই।
অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম নেমে এসেছে প্রায় অর্ধেক। মতলব উত্তরের সবচেয়ে বেশি পাটের আবাদ হয় চরকাশিম বোরেচর,বাহের চর ও চরউমেদসহ চরাঞ্চলে।
মতলবের চরাঞ্চলে বেশির ভাগ জমি দু’ফসলি। চৈত্রের প্রথম দিকে পাটের বীজ বোনা শুরু হয়,কাটা শুরু হয় আষাঢ়ের শেষ দিকে। খালে বিলে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে পাট পঁচাতে সুবিধা হয়। মাঠে মাঠে পাট কাটা,জাগ দেয়া,পানিতে ডোবানো,আঁশ ছাড়ানো,রোদে শুকানো আর বাজারে নেয়া এসব নিয়ে প্রায় দু’মাস ব্যস্ত থাকেন কৃষকেরা। আবার পাট কেটেই বৃষ্টির পানিতে শুরু হয় আগাম আমন ধান রোপণের তোড়জোড়।
মতলব উত্তর উপজেলার বোরোচর,খুনেরচর,এখলাছপুর,চরওয়েস্টার,বাহেরচর,মহিষমারীসহ অন্তত ১০টি গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গেলো বছর বগি ও তোষা পাট প্রতি মণ ছিল ২ হাজার ৩শ’টাকা থেকে ২ হাজার ৪শ’ টাকা। কিন্তু এবার তা’নেমে এসেছে ১ হাজার ২শ’থেকে ১ হাজার ৩শ’ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী বিল্লাল হোসেন বলেন,‘গেলো বছরের তুলনায় এবার পাটের দাম অর্ধেক।’ আমরা পাট ক্রয় ও বিক্রয় করেছি যে দামে এবার তা’অর্ধেকে নেমে এসেছে। তিনি আরও বলেন,‘ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের অনেক পাটকল বন্ধ এবং বিদেশে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এবার পাটের চাহিদা অনেক কম।’
মতলব উত্তর ও দক্ষিণ উপজেলা মেঘনা,ধনাগোদা,গোমতী নদী দ্বারা বেষ্টিত। বর্ষাকালে চরাঞ্চলগুলোয় প্রচুর পলি মাটি থাকায় পাটের ফলন সব সময় ভালো হয়। এক সময় নারায়ণগঞ্জের পাটকলগুলোর অধিকাংশ পাটের যোগান ছিল এ এলাকার পাট।
বর্তমানে সঠিক মূল্য না থাকায় অনেক কৃষক পাট চাষ ছেড়ে দিয়েছে। গেলো বছর পাটের দাম ভালো যাওয়ায় এ বছর পাটের চাষ বেশি হয়েছে। কিন্তু দর পড়ে যাওয়ায় কৃষকরা পাট নিয়ে উদ্বিগ্ন।
এদিকে প্রতিদনই প্রচুর বৃষ্টিপাত ও চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় পাট তোলা ও পাটখড়ি শুকানো কঠিন হয়ে পড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্তে¦ও মতলবের দু’ উপজেলার কৃষকরা এখন পাট ঘরে তুলতে ব্যস্ত।
মতলব উত্তরের চরকাশিম বোরচর গ্রামের আ.রশিদ বাদশা,আব্দুল আলী বাদশা,মো.জাকির হোসেন ও মনির হোসেনসহ বেশ ক’জন পাটচাষী জানালেন, ‘পাটই তাদের সব। বংশ পরম্পরায় পাট চাষ করছেন তারা। পাট ছাড়া এ মৌসুমে অন্য ফসল তেমন হয় না। পুরো বর্ষায় পাট নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটান তারা ।
ক’বছর ধরে পাট পঁচানোর পানির জন্যে কৃষককে পাট নিয়ে দৌঁড়াতে হয়েছে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায়। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। এবার অবস্থা ভিন্ন। মৌসুমের শুরুতেই প্রচুর বৃষ্টি । পাট কেটে ক্ষেতের কাছেই জাগ দেয়া যাচ্ছে।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার বদরদিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রব বলেন,‘এ বছর পাটের ফলন ভালো হয়েছে। সারা দিন একজন বদলাকে ৪শ’ টাকা দিতে হয়। এ মৌসুমে আমি ৪ গোন্ডা (৫০ শতক) জমিতে পাট চাষ করেছি। পাট চাষ থেকে শুরু করে পাট ঘরে তোলা পর্যন্ত যে খরচ হয়েছে পাট বিক্রি করে তা’তোলা সম্ভব নাও হতে পারে।’
মতলব উত্তর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.সালাউদ্দিন জানান,‘এ উপজেলায় চরাঞ্চল ও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের ভেতরে এ মৌসুমে ১শ’৬০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে।’
মতলব দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.তাজুল ইসলাম জানান,‘এবার এ উপজেলায় তোষা, মেসতা ও দেশি জাতের ৫শ’১০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এর মধ্যে তোষা জাতের পাট বেশি। বর্তমানে পাট কাটা শুরু হয়েছে। পাটের ফলন ভালো হয়েছে।’
প্রতিবেদক:খান মোহাম্মদ কামাল
আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৭:১০ পিএম,১০আগস্ট ২০১৭,বৃহস্পতিবার
এজি