চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার ধনারপাড় এলাকার কোরবানির পশুর হাটের। এভাবে অবাধে ঘুরে বেড়ানোর কারণে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও অনেক স্থানে কোরবানির গরু-ছাগলের হাট বসেছে। এ রকম একটি হাটে শতাধিক গরু আনা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব গরুর চারপাশে কয়েক শ ক্রেতা-বিক্রেতার জটলা। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। কেউই সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। ক্রেতাদের সঙ্গে বেশ কিছুসংখ্যক শিশুরও দেখা মেলে। এ চিত্র আজ শনিবার
ওই হাটের অন্যতম উদ্যোক্তা ধনারপাড় এলাকার মো. আলী বলেন, প্রতিবছর মতলব দক্ষিণ উপজেলার ধনারপাড় এলাকার বালুর মাঠে তিন দিনব্যাপী কোরবানির পশুর হাট বসানো হয়। এবারও মতলব পৌরসভা থেকে ইজারা নিয়ে তিন দিনের জন্য হাটটি বসেছে। সোমবার সন্ধ্যায় হাট শেষ হয়ে যাবে।
গত ঈদুল আজহায় ওই হাটে তিন শতাধিক গরু-ছাগল বিক্রি হয়। করোনার কারণে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আজ বেলা ২টা পর্যন্ত হাটে মাত্র ১৫টি গরু বিক্রি হয়।
আজ শনিবার বেলা দেড়টায় ওই হাট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের শতাধিক গরু বিক্রির জন্য সাজিয়েছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা কোনো সামাজিক দূরত্ব না মেনেই গায়ের সঙ্গে গা লাগিয়ে দরাদরি করছেন। অধিকাংশ ক্রেতা-বিক্রেতারই মুখে মাস্ক নেই। বেশ কিছু ক্রেতার সঙ্গে এসেছে তাঁদের শিশুসন্তানেরাও। এসব শিশুর মুখেও মাস্ক নেই। কয়েকজন ক্রেতাকে হাত ধরাধরি করেও ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে।
এক পর্যায়ে কথা হয় মতলব দক্ষিণের ধনারপাড় এলাকার দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, কোরবানির জন্য তাঁরা সাতজন মিলে একটি বড় গরু কিনতে এ হাটে এসেছেন। এখনো গরু কিনতে পারেননি। তাঁদের সামর্থ্যের চেয়ে গরুর দাম বেশি। আজ কিনতে না পারলে আবার কাল রোববার হাটে আসবেন।
মতলব দক্ষিণ উপজেলার ঘিলাতলী এলাকার আবদুল আউয়াল তাঁর দুটি অল্প বয়সী ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে হাটে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘গরু কিনার লইগা হেই সকালে এনো আইছি। একটার দরদাম করছি। দাম ৭০ হাজার টেয়া। তয় দামটা কিছুডা বেশিই মনে অইল।’
ছেলেদের কেন নিয়ে এসেছেন, করোনাকে ভয় পান না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এমনিতেই গরু দেহনের লইগা এনো আইছে। হাট দেহনের ওগো খুব শখ।’
ওই হাটের গরু বিক্রেতা উপজেলার নওগাঁও এলাকার মো. নাসির হোসেন বলেন, আজ হাটে বিক্রির জন্য ১০টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে দুটি গরু বিক্রি হয়েছে। বেশির ভাগ ক্রেতাই দর–কষাকষি করে চলে যান। করোনার কারণে এবার হাটে ক্রেতার সংখ্যাও কম। পরে ক্রেতার সংখ্যা বাড়তে পারে।
হাটের পরিস্থিতি ভয়াবহ উল্লেখ করে উপজেলার কলাদী এলাকার মো. ওয়াদুদ প্রধান বলেন, ‘কোরবানির গরু কিনতে ওই হাটে গেছিলাম। দেহি, হেনো শারীরিক দূরত্বের বালাই নাই। ক্রেতা-বিক্রেতারা গা–ঘেঁষাঘেঁষি কইরা দাঁড়াইয়া আছে। অনেকের মুখেই মাস্ক নাই। কেউ কেউ মাস্ক পরলেও ঝুলাইয়া রাখছে। জটলা কইরা মানুষ গরুর দরদাম করতাছে। করোনার সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তাছে। হেগো দেইখা মনে অইছে, করোনা হেগো কিছুই করতে পারব না। কিসের স্বাস্থ্যবিধি মানা, কিসের কী। লগে (সঙ্গে) শিশুদেরও লইয়া আইছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব গোলাম কাউসার বলেন, কোরবানির পশুর হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে তদারকি জোরদার করা হবে।
করেসপন্ডেট,২৫ জুলাই ২০২০
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur