চাঁদপুর মতলব দক্ষিণে উপজেলার দক্ষিণ নওগাঁও গ্রামে স্বামীর অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে রাবেয়া আক্তার স্বপ্না নামে দুই সন্তানের জননী আত্মহত্যা করেছেন। রাবেয়া আক্তার স্বপ্না দক্ষিণ নওগাঁও গ্রামের রশিদ শেখ বাড়ীর জাহাঙ্গীর শেখের স্ত্রী। বাপের বাড়ী একই উপজেলার দেলদিয়া গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, জাহাঙ্গীর শেখের এক ছেলে এক মেয়ে। মেয়ে কুলছুমা আক্তার নওগাঁও রাশেদীয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণীতে এবং ছেলে ওমর একই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে।
১০ ফেব্রুয়ারি সকালে কুলছুমাকে তার জেঠা এনামুল হক নিয়ে যায় তাদের জমিনে কাজ করানোর জন্যে। ফিরে আসে দুপুরে। কুলছুমার বাবা জাহাঙ্গীর জানতে পারে তার মেয়ে মাদ্রাসায় না গিয়ে তার জেঠার সাথে জমিনে কাজ করতে গেছে। দুপুর আনুমানিক দেড়টায় জাহাঙ্গীর বাড়ীতে এসে তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাস করে কুলছুমা মাদ্রাসায় গিয়েছিল কিনা,প্রতিউত্তরে জানায় মাদ্রাসায় গিয়েছিলো।
এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তর্কবির্তক হয় এবং জাহাঙ্গীর তার স্ত্রীকে মারধর করে। কিছুক্ষণ পর রাবেয়া আক্তার স্বপ্না রাগে ক্ষোভে ঘরে থাকা কীটনাশক ঔষধ সেবন করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তার আর্তচিৎকার শোনে স্বামী জাহাঙ্গীর ও মেয়ে কুলছুমা তাকে নিয়ে প্রথমে মতলব ও পরে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা বেগতিক হওয়ায় আজ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে।
মেয়ে কুলছুমা আক্তার জানায়, চাঁদপুর থেকে এ্যাম্বুল্যান্সে করে ঢাকা নেয়ার পথে মতলব সেতু পার হওয়ার পর পথিমধ্যে তার মা মারা যায়। পরে লাশ তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল জানান, সংবাদ পেয়ে আমি মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশ কে জানাই এবং পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য চাঁদপুর মর্গে প্রেরণ করে।
এ দিকে রাবেয়া আক্তার স্বপ্না মারা যাওয়ার পর পর এ্যাম্বুল্যান্স থাকা তার স্বামী জাহাঙ্গীর বিকাশে টাকা উঠানোর কথা বলে পথিমধ্যেই পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ওই বাড়ীর সকল লোকজন ঘরের দরজা বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান।
রাবেয়ার মা সালেহা বলেন, ১৭ বছর পূর্বে ১ লাখ টাকা যৌতুক দিয়ে তার মেয়েকে জাহাঙ্গীরের নিকট বিবাহ দেন। বিয়ের ৮ দিনের মধ্যে তাদের দাম্পত্য জীবনে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। ১৭ বছরে প্রায় ২৫ বার তাদের মিমাংশার জন্য পারিবারিকভাবে সালিশ হয়।
বাড়ির আশেপাশের লোকজন জানায়, জাহাঙ্গীর প্রায়ই তার স্ত্রীকে ছোটখাট বিষয় নিয়ে মারধর করতো। কেউ এগিয়ে আসলে তাদেরকে গালমন্দ করত। স্বামীর দীর্ঘদিনের অন্যায় অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে রাগ ও ক্ষোভে সে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই ফরিদ বলেন,‘এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়না তদন্তের রির্পোট আসলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তবে রাবেয়ার স্বামী ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে।’
স্টাফ করেসপন্ডেট
১১ ফেব্রুয়ারি,২০১৯