চাঁদপুর মতলব উত্তর উপজেলার চরাঞ্চলের অর্ধ লাখ মানুষ বিপন্ন জীবন যাপন করছে। উপজেলার এ চরাঞ্চলের মানুষগুলো তাদের প্রাপ্য মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। নির্বাচন আসলে আনেকেই তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষে কাজ করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেও পাশ করার পর তাদের আর খোঁজ রাখেনা। ফলে বাড়েনি তাদের জীবন যাত্রার মান।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৬০ বছর যাবত মেঘনা নদীর পূর্ব পাড় মেঘনার কড়াল গ্রাসে লন্ডভন্ড করলেও এর পশ্চিম তীরে জেগে উঠেছে বিস্তীর্ণ জনপথ।উপজেলার এখলাছপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বোরচর, চরকাশিম, চরজিংকিং, চরএলেন, খুনেরচর। মোহনপুর ইউনিয়নের বাহেরচর, চরওয়েষ্টার, বাহাদুরপুর। জহিরাবাদ ইউনিয়নের নাওভাঙ্গা, জয়পুর, চরউমেদ, কাঁচিকাটা এসব চরাঞ্চলগুলোতে অর্ধ লক্ষাধিক লোকের বসবাস।
এসব চরাঞ্চলগুলোতে ক্রমশই নদী সিকস্তিরা বাচার তাগিদে ও সহজলভ্য জীবন যাপনের জন্যে বন,ছন, বাশ,মুলি, খড়-কুটা, নল ও ধনচে দিয়ে ঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করে। চরবাসীরা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্তভাবে নিজ নিজ সুবিধামত বাচার তাগিদে যেখানে যেমন সেখানে তেমন বসতবাড়ি তুলে জীবিকা নির্বাহ করছে। অধিবাসিদের প্রায়ই ৯৫% ভূমিহীন ও নদী সিকস্তি। কৃষি ও মৎস্য শিকারই তাদের প্রদান পেশা। বিভিন্ন প্রকার রবি শস্য ও উৎপন্ন হয় প্রচুর এ চরাঞ্চলে।
এছাড়াও গবাদী পশু পালন করেও জীবিকা নির্বাহ করে থাকে অনেকে। তরি তরকারির মধ্যে লাউ,সীম,করলা প্রভৃতি। এছাড়া ধান,পাট ও মরিচের চাষাবাদ হয় প্রচুর। সুষ্ঠ যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে তারা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়না। হাতে গোনা ৪-৫টি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এরা পূর্ব পাড়ে আসা যাওয়া করে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও বিশুদ্ধ পানির অভাবের ভিতর চলছে এদের জীবন।
স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের প্রত্যাশা ওদের কেবলই স্বপ্ন। বাস্তবে কল্পনার আবেগ মাত্র। যাও একটি নিম্ন মাধ্যমিক হাইস্কুল রয়েছে তাও আবার অর্থ অভাবের কারণে, শিক্ষকেরা বেতন না পাওয়ায় তাও বন্ধের উপক্রম। যা এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি।
৩টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলগুলোতে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ২টি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও কোন হাইস্কুল নেই। তবে বর্তমানে সবগুলো স্কুলই এখন সরকারি। শিক্ষার শ্রেষ্ঠ পরিবেশ, অভিভাবকদের সচেতনতাবোধের অভাব ও শিক্ষকদের গড় হাজিরা মনোভাবের কারণে চরবাসী ছেলে মেয়েদের প্রাথমিক শিক্ষা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বাল্য বিবাহের শিকার হচ্ছে ৮০% লোক। চরাঞ্চলের দুটি বাজারে ১টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও ৫-৭ টি ঔষধের দোকান।
এরাই চরবাসীর স্বাস্থ্য সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতি বছরই ভূমিহীন পরিবারগুলো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও মহামারী প্রভৃতিতে চরের মানুষগুলো সর্বদাই দিশেহারা। বর্ষায় চরবাসীর বাড়ী ঘর ডুবে যায়। শীতকালে তারা প্রচন্ড শীতের দাপটে অতিষ্ট হয়ে যায়।
আবার গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপে এদের জীবন ওষ্ঠাগত। ফলে প্রতিটি বছরই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে হয়। উন্নয়নের কাঙ্খিত ছোয়া কবে এই বিচ্ছিন্ন জনপথে বসবাসকারীদের ভাগ্যে নাগালে এসে পৌছবে তা বলা খুবই কঠিন।
বিশিষ্ট সমাজ সেবক আলহাজ্ব মোঃ সেলিম বাদশা জানান, নির্বাচন আসলেই আমাদের এই চরাঞ্চলে ভোটের জন্য এসে নানান আশার বাণী শোনান। কিন্তু নির্বাচনের পর আমাদের আর কেউ খবর রাখে না। আমরা শুধু ভোটের সমই তাদের দেখি। মৌসুমী পাখির মতো।ক্ষমতার জন্য আমরা ব্যবহার হই ঠিকই কিন্তু আমাদের দিকে খেয়াল নেই কারও।
প্রতিবেদক:খান মোহাম্মদ কামাল