চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় নোয়াখালীর গৃহবধূ পলি আক্তারকে হত্যার ৫ দিনের মাথায় ক্লুলেস মামলার প্রধান আসামী হান্নান মুন্সী (৪৪) কে গ্রেফতার করেছে বাংলাদেশ পুলিশ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চট্টগ্রামের ইপিজেড ফ্র্রি পোট থানার মাইলের মাথা এলাকার ভাড়া বাসা থেকে গ্রেফতার করেছে চাঁদপুর পিবিআই।
৯ জুলাই রোববার দুপুরে চাঁদপুর পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছেন পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোস্তফা কামাল রাশেদ। গ্রেফতারকৃত মূল হোতা হান্নান মুন্সি (৪৪) কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার শ্রীকান্তনি গ্রামের আদম আলীর ছেলে।
পিবিআই জানায়, পলির শরীরে থাকা চিরকুটের সূত্রধরে হত্যাকাণ্ড জড়িত হান্নান মুন্সীকে শনিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়।
রোববার সকালে তার দেওয়া তথ্যমতে মোবাইল ফোন ও নিহতের জামা কাপড় উদ্ধার করা হয়। তারা দুজন পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলো। তবে হান্নান মুন্সী তার চাচাতো ভাইয়েদের সাথে সম্পত্তিগত বিরোধ থাকায় পলি আক্তারকে হত্যা করে তাদের আসামী বানাতে এই পরিকল্পনা করে। যা চিরকুটে লেখার সাথে প্রমানিত হয়।
গত ৫ জুলাই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বাগানবাড়ি ইউনিয়নের কালির বাজার রাস্তার পাশ থেকে ২৮ বছর বয়সী পলি আক্তারের মৃতদেহ উদ্ধার করে মতলব উত্তর পুলিশ। নিহত পলি আক্তার নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার শিবপুর জাগিদার বাড়ির তাজুল ইসলামের মেয়ে। ঘটনার পর তার বড় ভাই মোঃ ফরহাদ হোসেন সোহাগ (৩২) বাদী হয়ে মতলব উত্তর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মতলব উত্তর থানায় মামলা নং-৩ ধারা ৩০২ /৩৪। চাঁদপুর পিবিআই টিম ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে তদন্ত অব্যাহত রাখে।
ছায়া তদন্ত করে পিবিআই পুলিশ পরিদর্শক শামীম আহমেদের নেতৃত্বে পিবিআই অতিরিক্ত আইজিপি বনোজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর নেতৃত্বে পুলিশ সুপার চাঁদপুরের মোস্তফা কামাল রাশেদের দিকনির্দেশনায় ছায়া তদন্ত টিম তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যার ঘটনার মূলহোতা হান্নান মুন্সি কে সনাক্ত করে। হত্যাকাণ্ডের ৫ দিনের মাথায় ৯ জুলাই মূল আসামি দাউদকান্দির হান্নান মুন্সিকে চট্টগ্রাম থেকে আটক করেন। পিবিআই এর প্রাথমিক জিজ্ঞাসা বাদে খুনি হান্নান মুন্সী পলি হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছে।
পিবিআই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, পুলিশ পরিদর্শক মোঃ শামীম আহামেদ,মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রিয়াদ মঈনুদ্দীন, মোঃ আমির হোসেন,এএসআই শাহজালালসহ আরো অনেকেই উপস্থিথ ছিলেন।
পিবিআই আরো জানায়, ভিকটিম পলি আক্তারকে গত ১ জুলাই সে চট্রগ্রাম হতে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানার মোহাম্মদপুর গ্রামের তার এক পরিচিত জনৈক রুবেলের বাড়িতে তার স্ত্রী পরিচয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে এসে হান্নান তার কথিত স্ত্রী পলি আক্তারসহ একদিন একরাত অবস্থান করেন। এরপর পলি আক্তারকে রুবেলের বাড়িতে রেখে গত ২ জুলাই দিবাগত রাত অনুমান ২টার সময় পলি আক্তার রুবেলের বাড়ির টিউবওয়েলে গেলে আকস্মিক তার গর্ভপাত ঘটে।
পলি আক্তার রুবেলের স্ত্রীকেতার শারীরিক অবস্থার কথা জানান। রুবেলের স্ত্রী রুবেলকে বিষয়টি মোবাইলে অবগত করেন।এরপর রুবেল তার ওস্তাদ হান্নানকে বিষয়টি জানায়। হান্নান তাৎক্ষনিকভাবে ওইদিন রাতেই রুবেলের বাড়িতে এসে তার কথিত স্ত্রী পলিকে নিয়ে চলে যায়।
স্বীকারোক্তিতে হান্নান আরো জানায়, পরদিন গত ৩ জুলাই সারা দিন দাউদকান্দি ও আশপাশ এলাকায় গাড়ি চালিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাটায়। ওইদিন দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টার সময় কথিত স্ত্রী পলিকে সাথে নিয়ে হান্নান মতলব উত্তর থানাধীন একটি নির্জন স্থানে পলির পরিধেয় কাপড়েরর ব্যাগে রক্ষিত জামাকাপড় দিয়ে গাড়িতে বসা অবস্থায় তার নাকে মুখে চাপ দিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করে।
পরবর্তীতে মৃতদেহটি নিজ গাড়িতে করে ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে ফেলে রেখে হানান চলে যায়। আসামীর স্বীকারোক্তি মোতাবেক দেখানো ও তার শনাক্ত মতে ঘটনাস্থলের পাশে প্রজেক্টেও পুকুর হতে ভিকটিমের ব্যাগে রক্ষিত কাপড়-চোপড় উদ্ধারপূর্বক আলামত হিসেবে জব্দ করা হয়।
প্রতিবেদক: খান মোহাম্মদ কামাল, ১০ জুলাই ২০২৩