চাঁদপুর

মতলবে ওরশের নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য আর মাদকের মিলন মেলা!

চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর (বেলতলী) সোলেমান লেংটার মাজারে চলছে শততম ওরস। গত ৩১ মার্চ থেকে শুরু হওয়া সাতদিনের এই ওরশ শেষ হবে আগামী ৬ এপ্রিল। অশ্লীল নৃত্য, মাদকের রমরমা আসর, ধর্মীয় গান ও মজমায় চলছে লেংটা বাবার মেলা।

প্রতিদিন অশ্লীল নৃত্যের তালে তালে ছিটানো হচ্ছে টাকা। স্থানে স্থানে পাগলের ভক্তরা গাঁজার আসর বসিয়ে গাঁজা সেবন করছেন। মাদক সেবনে জোগ দিচ্ছেন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা যুববরা। তারা মনে করেন লেংটার মেলায় এসেছেন আর গাঁজা খাবেন না তা কি করে হয়? সব মিলিয়ে এ যেনো ওরসের নামে মাদকসেবীদের মহামিলন।

সোলেমান লেংটা উপমহাদেশের একজন খ্যাতিমান আউলিয়ার দাবিদার। বাংলা ১২৩০ সালে কুমিল্লা জেলার মেঘনা উপজেলার গোবিনাদপুর ইউনিয়নের আলীপুর নামক গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে শাহ্ সুফি সোলেমান লেংটা জন্ম গ্রহণ করেন। তার জীবনের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন মতলবের বিভিন্ন অঞ্চলে। সোলেমান লেংটার বোনের বাড়ি বদরপুরে মাজারটি অবস্থিত।

১৩২৫ বাংলা সনের ১৭ চৈত্র শাহ্ সুফি সোলেমান লেংটা তার বোনের বাড়ি বদরপুর গ্রামে মৃত্যুবরণ করলে সেখানে কবর দিয়ে মাজার স্থাপন করা হয়। প্রতি বছর চৈত্র মাসের ১৭ তারিখে তার মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৭ দিনব্যাপী ওরশ এবং মেলা বসে সেখানে। ৭ দিনের এ মেলায় আসা প্রতিটি দোকান থেকে দুই-দশ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। মাজারে মানত মানতে দেয়া হচ্ছে গরু, ছাগল, নগদ অর্থ, আগরবাতি ও মোমবাতি। প্রতিদিন উঠছে কোটি টাকা। সব মিলিয়ে এখানে বাণিজ্য হচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। এ টাকার কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না সরকার। অনেকেই আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন। টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সংঘর্ষ ও মামলা হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও এখানে চলছে মাদক বিক্রি, সেবন ও অশ্লীলতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মেলায় মাদকসেবীরা মাজারের পশ্চিম অঞ্চলের পুকুরের পাড় ও পুকুর সংলগ্ন কাঠের বাগান এলাকাসহ আশেপাশে প্রায় ৫ শতাধিক মাদক বিক্রি ও সেবনের আস্তানা গেরে বসেছে। সকল প্রকার মাদক দ্রব্যই পাওয়া যায় এ মেলায়। আর প্রতিদিন বিকেল থেকেই জমতে থাকে এইসব মাদকের দোকান। চলে সারারাত। মেলা প্রাঙ্গণ যেন নেশার স্বর্গরাজ্য ও নিরাপদ স্থান। দলে দলে আস্তানায় চলছে মাদক সেবন। মেলা প্রাঙ্গণের বাতাসে বইছে গাঁজার গন্ধ।

মতলব উত্তর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ারুল হক জানান, মেলায় লাখ লাখ লোকের সমাগম হয়। মেলায় সব ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তিনি মেলায় মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকার কথাও জানান।

Share