‘করোনা পজিটিভ হওয়ায় খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, এখানেই। পরে ধীরে ধীরে মনে সাহস সঞ্চয় করলাম। হাসপাতালে করোনার সঙ্গে ১২ দিন লড়াই করে সুস্থ হয়েছি। নমুনা পরীক্ষায় পরপর দুবার করোনা নেগেটিভ আসার পর ঢাকার বাসায় আছি। সেখানে থাকতে হবে আরও কিছুদিন। পুনরায় যোগ দেব কর্মস্থলে। নতুন করে মনপ্রাণ সঁপে দেব চিকিৎসাসেবায়, মানবসেবায়।’
কথাগুলো করোনাজয়ী এক তরুণ চিকিৎসকের (৩০)। তিনি চাঁদপুরের মতলব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত। বাড়ি চাঁদপুরেরই একটি উপজেলায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একাধিক নার্স-কর্মচারী বলেন, ওই চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত করোনার উপসর্গ ছিল এমন রোগীদের নিরলসভাবে চিকিৎসা ও সেবা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সাহস ও আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি রোগীদের চিকিৎসা, পরামর্শ ও নমুনা সংগ্রহের দিকনির্দেশনা প্রদানের কাজটি অনেকটা একাই করে গেছেন।
ওই চিকিৎসক বলেন, করোনার উপসর্গ নিয়ে ৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জফেরত এক তরুণ (৩২) এবং ৮ এপ্রিল অপর এক তরুণ (২৬) তাঁর কার্যালয়ে যান। তিনি প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ওই দুই তরুণের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। ১১ এপ্রিল সেখানকার পাঠানো প্রতিবেদনে তাঁদের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। ১২ এপ্রিল তাঁরও করোনা শনাক্ত হয়।
তরুণ চিকিৎসক বলেন, ‘১২ এপ্রিল থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালের একটি আইসোলেশন কক্ষে আমাকে রাখা হয়। প্রথমে খুব ভয় পেয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, এখানেই সব শেষ। পরে মনে সাহস জোগাই। সিদ্ধান্ত নিই, যে করেই হোক করোনাকে জয় করে পুনরায় কাজে ফিরতে হবে, মানুষকে সেবা দিতে হবে। এ জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে ওষুধপথ্য ঠিকমতো খেতে থাকি। দিনে তিনবার করে চিকিৎসকেরা দেখভাল করতেন। শরীরে জ্বর, সর্দি-কাশি বা করোনার তেমন কোনো উপসর্গ ছিল না। তবে শরীর খুব দুর্বল লাগত।’
ওই চিকিৎসক আরও বলেন, ‘হাসপাতালের দিনগুলো খুব কষ্টে কেটেছে। পরিবারের সদস্যদের খুব অনুভব করেছি। বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। মা ও বোনদের কথা বারবার মনে পড়ত। অন্যান্য আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের দেখাও মেলেনি। অনেকটা বন্দীজীবন কাটিয়েছি সেখানে। বাইরের আলো চোখে পড়ত না তেমন। অপেক্ষার যন্ত্রণায় ছটফট করতাম। কবে সুস্থ হয়ে কাজে ফিরব, কবে স্বজন ও সহকর্মীদের সঙ্গে আবার দেখা হবে, নাকি এগুলোর কিছুই হবে না—এসব চিন্তায় রাতে ঘুমাতে পারতাম না। হাসপাতালের ১২টি দিন কেটেছে দুশ্চিন্তায়। গত শুক্রবার পরপর দুবার নমুনা পরীক্ষায় আমার করোনা নেগেটিভ আসে। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ঢাকার ভাড়া বাসায় চলে যাই। সেখানে মা ও বোনদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর মনে হলো নতুন জীবন পেয়েছি। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুসারে সেখানে আরও কিছুদিন থাকতে হবে আমাকে।’
কাজে ফিরে পুনরায় পুরোদমে চিকিৎসাসেবায় নিজেকে সঁপে দেওয়ার প্রত্যয় জানিয়ে ওই চিকিৎসক বলেন, ‘করোনার কাছে আমরা হেরে যাব না। শেষতক মানুষেরই জয় হবে। তবে ভয় না পেয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যসচেতন হতে হবে। নিরাপদ শারীরিক দূরত্ব মেনে, সাবধানে চলতে হবে।’
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur