মতলব উত্তর

মতলবের বেলতলীতে শুরু হচ্ছে ল্যাংটার মেলা

চাঁদপুর টাইমস’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। 

কামাল হোসেন খান, মতলব (উত্তর) প্রতিনিধি :

প্রতি বছরের ন্যায়ে মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) ১৭চৈত্র থেকে পরবর্তী ৭দিন ব্যাপী থেকে শুরু হচ্ছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্যাপুর ইউনিয়নের বদরপুরের বেলতলীতে সপ্তাহব্যাপী শাহ সোলেমান লেংটা পাগলের মেলা।

ল্যাংটা পাগলের মেলায় এসে সোলেমান শাহ ল্যাংটার অনুকরণ করছে তার ভক্তরা। সোমবার থেকে শুরু হয়ে আগামী সোমবার পর্যন্ত এ মেলা চলবে। এবার পালিত হচ্ছে শাহ সোলেমান লেংটার ৯৬তম ওরশ শরীফ। শাহ সোলেমান লেংটার ওফাত দিবস উপলক্ষে গত ৯৫টি বছর যাবত উদযাপিত হয়ে আসছে সাত দিনব্যাপী মেলা।

স্থানীয়দের মতে, বেলতলীর বদরপুর গ্রামে সোলেমান শাহ নামে এক ফকিরের মাজার আছে। এই মাজারই ল্যাংটা ফকিরের মাজার হিসেবে পরিচিত। কথিত আছে, সোলেমান শাহ জীবদ্দশায় একটুকরো কাপড় দিয়ে লজ্জাস্থান ডেকে রাখতো বলে, তাকে লেংটা পাগল ডাকতো সবাই। প্রতি বছর এ অসংখ্য ভক্তরাই লেংটার মেলার আয়োজন করে।

প্রতি বছর ৩১ মার্চ শুরু হয় এ মেলা, শেষ হয় ৬ এপ্রিল। নামে ‘লেংটা’ হলেও আদতে এখানে আসা পাগলেরা কেউই লেংটা নন। তবে তারা ভাবের পাগল। শাহ সোলেমান শাহ্র জন্মস্থান কুমিল্লা জেলার বর্তমান মেঘনা থানার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন মতলবের বদরপুরের এ বেলতলীর তার বোনের বাড়ীতে। সেখানে থেকে নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলী গ্রামে তিনি বিয়ে করেন। অনেকেই দাবি করেন তার বংশধর এখনও আছে। সোলেমান শাহ কাউকে মুরিদ করেননি। তবে মতলব তথা দেশের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি ও অগণিত ভক্ত।

প্রতিবছর অগণিত ভক্ত এ ল্যাংটা মেলার আয়োজন করে থাকে। বাংলা ১৩২৫ সালের ১৭ চৈত্র সোলেমান শাহ বেলতর্লী বদরপুর তার বোনের বাড়ীতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ১৮ চৈত্র তাকে বদপুরের এই বেলতলীতে (যেখানে মাজার) দাফন করা হয় বলে মাজার পরিচালনায় দায়িত্বে থাকা খাদেম মোঃ দেলোয়ার হোসেন মোল্লা জানান।

তারপর ভক্তরা তার বোনের বাড়িতে মাজার প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যায় সপ্তাহব্যাপী লেংটা পাগলের মেলা। যদিও তার মৃত্যু তারিখের দু’একদিন আগে পরে এখানেই ৭ দিন ব্যাপী ওরশ হতো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লঞ্চ, ট্রলার, বাস, মিনি বাস, ট্রাক, মেক্সী, প্রাইভেটকার যোগে ওরশে আসে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ। তাঁরা নিয়ে আসেন গরু, মহিষ, ছাগল, মোরগ, ডিম, ডাল, চাউল, নগদ অর্থসহ বিভিন্ন মানতি জিনিসপত্র। ল্যাংটার মেলায় একদিকে আনন্দের হিল্লোল অন্যদিকে বসে গাঁজার রমরমা আসর।

অনুসন্ধানী চোখে তাকালেই দেখা যায়, দলে দলে ভাগ হয়ে গাঁজা টানছে পাগলের ক্ষুদ ক্ষদ্র্র দল। তবে এ ব্যাপারে প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করে।

রোববার থেকেই ল্যাংটার ভক্ত আশেকানরা আস্তানা নিয়ে বসে গেছে। ল্যাংটা পাগলের মেলায় যেন গাঁজার স্বর্গরাজ্যে (অভয়াশ্রমে) পরিণত হয়েছে। শুরু হয়ে গেছে গাঁজা খাওয়া ও বেচাকেনার ধুম। ছোট ছোট তাবু তৈরি করে পুটলি করে কিশোর, যুবক থেকে শুরু করে বৃদ্ধা পর্যন্ত সবাই এসব গাঁজার আসরে মিলিত হচ্ছে। আবার কোথাও পুতুল নাচসহ পুরো মেলায় হরেকরকম দোকানপাট।

চলছে মেলার প্রবেশ পথের বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজিও। আর এই মেলাকে ঘিরে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা পকেটমার, ছিনতাই, মলমপার্টি, হিজরা, প্রতারকদের তৎপরতা বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তরা লেংটা বাবার দরবারে পূণ্য, রোগমুক্তিসহ বিভিন্ন কামনা-বাসনা নিয়ে আসেন। এছাড়াও ঢোল-কারার মাধ্যমে বাবার উদ্দেশ্যে ধর্মীয় গান ও মজমা বসায় পূণ্যের আশায়। মাজার কমিটি প্রতিবছর ভাল অংকের টাকাও উপার্জন করে থাকে। আর এ মাজারে দেওয়া মানতি টাকা যায় কয়েকজনের পকেটে। এ টাকা নিয়ে চলে মারামারি। দোকান বসে প্রায় ৫ সহস্রাধিক। মেলা চলাকালীন ছোট দোকানে ভাড়া দিচ্ছে ১ সপ্তাহের জন্য ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। মিষ্টির দোকান ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা, খেলনার দোকান ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এমনিভাবে অসংখ্য টাকা উঠছে মেলা উপলক্ষে। আর মেলাতে যদি পুতুল নাচ ও সার্কাস বসানো হয়, তাহলে মানুষের সমাগম হয় প্রচুর। তবে গত ৭-৮ বছরে এ মেলায় কোনে লটারী, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য সো দেখানো নাম করে চলছে এবার বাণিজ্য। যা অন্য বছরগুলিতে হয়নি। এদিকে সপ্তাহ ব্যাপী শাহ সোলেমান শাহ্ লেংটার মেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি মেডিকেল টিমও মোতায়েন করা হয়েছে।

এছাড়া কতেক ভক্ত রয়েছেন তারা ল্যাংটা বাবার মাজার জেয়ারত করছেন এবং জিকির আসকার করে ঢোল বাদ্য, বাজনা বাজিয়ে মাজার ত্যাগ করছেন। কারণ তাদের মতে, ল্যাংটা ফকির ছিলেন একজন ভালো লোক। মেলাকে ঘিরে সোমবার থেকেই অসংখ্য পাগল ও ভক্তবৃন্দদের ভিড়ে মুখরিত হয়ে উঠেছে মতলবের বেলতলী। সোমবার মেলার চতুরদিকে ঘুরে এসব চিত্র দেখা যাচ্ছে। মাজারের পবিত্রতা রক্ষার্থে প্রশাসনের কড়া নজরদারি রয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।

লেংটার মেলায় প্রতিদিন লক্ষাধিক লোকের ভীর ও দূর-দুরান্ত থেকে আসা অসংখ্য লোকের তত্ত্বাবধান করতে সমস্যা হয় কি না প্রসংগে মেলার প্রধান তত্ত্বাবধানকারী সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম দিকে কিছুটা সমস্যা হলেও দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে এখন আর কোন সমস্যা মনে করি না। তাছাড়া স্থানীয় লোকজন একাজে অনেক সহযোগিতা করে থাকেন।

মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, মেলা চলাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি যাতে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক থাকে তার জন্য ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে গোয়েন্দা, ডিবি,এসবি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এদিকে সোমবার মতলব উত্তর উপজেলা চেয়ারম্যান কল্যাণ সমিতির সভাপতি স্বর্ণপদক প্রাপ্ত মোহনপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল হক চৌধুরী বাবুল, মতলব উত্তর থানার অফিসার ইনচার্জ সৈয়দ মাহবুবুর ররহমান লেংটার মাজার এলাকা ও মেলা পরিদর্শন করেছেন এবং মাজার কমিটি ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের সাথে বৈঠক করেছেন।

চাঁদপুর মতলবের ল্যাংটার মাজারে নারীপুরুষের অবাধ মেলামেশার গোপন ভিডিও ফাঁস (ভিডিওসহ বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন)

এসময় তিনি মেলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি যাতে সুষ্ঠ ও স্বাভাবিক থাকে সেজন্য তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। এসময় মাজার কমিটির সভাপতি আঃ রশিদ সরকার, সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন আ’লীগ নেতা মোঃ আক্তার হোসাইন সরকার, মেলার প্রধান তত্ত্বাবধানকারী সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ল্যাংটা বাবার মাজার এর খাদেম লাল মিয়া মোল্লা, মতলব উত্তর থানার এসআই মোঃ শাহজাহান, এসআই মোঃ আবু হানিফ, আ’লীগ নেতা গোলাম মর্তুজা মেম্বার, সমাজ সেবক মোতালেব সিকদার, গণি মিয়াজী, সাদুল্যাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মোঃ আক্তার ঢালী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বদরপুরের ল্যাংটার মেলার ভিডিও চিত্র-1

বদরপুরের ল্যাংটার মেলার ভিডিও চিত্র-2

চাঁদপুর টাইমস : এম আর আর / দে হো /কা হো খা /2015

Share