চাঁদপুর পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার বলেন, চাঁদপুরের ইলিশ উৎসব কখনোই বন্ধ হতে দেয়া যাবে না। এ উৎসব যুগযুগ ধরে চলতে থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। চাঁদপুরে একটি অনুষ্ঠান যদি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, সেটি হলো ইলিশ উৎসব। আমি এই উৎসবকে অনেক বেশী গুরুত্বের সাথে দেখি।’
বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুরু হওয়া চতুরঙ্গ সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে সপ্তাহব্যাপি ইলিশ উৎসবের সমাপনি দিন বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমি চাঁদপুরে এসে যখন ইলিশের আকাল দেখলাম তখন খুব কষ্ট পেয়েছি। এতো স্বাধের একটি মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে ভেবে খুব কষ্ট পেয়ে ছিলাম। কিন্তু এবার চাঁদপুরে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে দেখে আমি অনেক আনন্দিত। এজন্য যে সকল জেলে, জেলে নেতা, জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্থরের মানুষ সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
মা ইলিশ রক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আগামি মাস থেকে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিনের অভয় আশ্রম শুরু হবে। আমি অভয় আশ্রম চলাকালে গত বছরের মতো সকল জেলেসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করছি। চাঁদপুরকে একটি সুন্দর জেলা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদসহ সকল অপরাধের বিরুদ্ধে আমাদের সজাগ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।’
সমাপনী দিনেও প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গুনিজন সংবর্ধনা ও আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়।
বিকেল ৩টায় জাতীয় সংগীত, রেসিপি, আলোকচিত্র ও চিত্রাংকন প্রতিযোগিতার মধ্যদিয়ে সপ্তহব্যাপী উৎসবের সপানী শুরু হয়।
রেসিপি প্রতিযোগিতায় ১০ জন প্রতিযোগি অংশ নেয়। এরা হলে, ফাতেমা বেগম, সিনহা, পারভিন বেগম, রহিমা বেগম, নিশু, ডলি রক্ষি, আকাশ, রোমানা, সুচিত্র দাস ও মুক্তা শেখ। আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে অংশ গ্রহণ করেন সাংবাদিক বাদল মজুমদার, মানিক দাস, মুহাম্মদ আলমগীর, এসএম সোহেল, আশিক বিন রহিম, শরীফুল ইসলাম, আলোকচিত্রী পলাশ মজুমদার ও তাওসিফ প্রমুখ।
বিকেল সাড়ে ৫টায় ইলিশ বিষয়ক গোল টেবিল আড্ডা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চতুরঙ্গের মহা-সচিব হারুন আল রশীদের সঞ্চালনয়া অংশ নেন ইনার হুইল ক্লাকের পেসিডেন্ট মাহমুদা খানম, মৎস্যজীবী নেতা মালেক দেওয়ান, তাছলিম বেপারী, শাহালম মল্লিক, সাংস্কৃতিক কর্মী অনিতা কর্মকার।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় মতলব উপজেলার নৃত্যাঞ্জলি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীকের পরিবেশনায় নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইলিশ বিষয়ক আলোচনা এবং গুণিজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাংবাদিক এ এইচ এম আহসান উল্লাহকে সংবর্ধনা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
প্রধান আলোচকের বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদক প্রাপ্ত নারী মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা দরুন নাহার চৌধুরী।
তিনি বলেন, ইলিশ আমাদের চাঁদপুর জেলার গর্ব। বিশ্বব্যাপী আমরা ইলিশের জন্য পরিচিতি লাভ করেছি। এই ইলিশ চাঁদপুরের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখে। তাই যে কোনো মূলেই হোক ইলিশ সম্পদকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, চতুরঙ্গ সাংকৃতিক সংগঠন উৎসবের মাধ্যমে ইলিশ রক্ষায় জনসজেতনা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে। আমি এই উৎসবকে জাতীয় উৎসব করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
ইলিশ উৎসবের আহ্বায়ক কাজী শাহাদাতের সভাপতিত্বে ও চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি বিএম হান্নানের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো মফিজুর রহমান, চতুরঙ্গের চেয়ারম্যান অ্যাড. বিনয়ভূষন মজুমদার, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদী।
উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন ইলিশ উৎসবের রূপকার হারুণ আল রশীদ।
সবশেষে রাত সাড়ে ৮টায় প্রাণ ফ্রুটিকস্ এর সৌজন্যে ঝমকালো সংগীতানুষ্ঠান ও রংধনুর নৃত্যানুষ্ঠান পরিবেশিত হয় ।
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ০৭:০০ এএম, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ