স্টাফ করেসপন্ডেন্ট || আপডেট: ০৭:১৮ অপরাহ্ন, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
পবিত্র মক্কায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদেশী আবুল কাশেম ছুফি’র স্মরণে রিয়াদে ২০ সেপ্টেম্বর রাতে শিফা আল-জাজিরা পলিক্লিনিক অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আঞ্জুমানে খোদ্দেমুল মুসলেমীন, রিয়াদ কেন্দ্রীয় পরিষদের উদ্যোগে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
দোয়া ও মোনাজাতের এক পর্যায়ে মরহুমের ভাই বখতিয়ার আক্ষেপ করে বলেন, “এত কিছুর পরও হজ্ব মিশন এবং জেদ্দা কনস্যুলেটের কাউকেই জানাজা, দাফন ক্রিয়ায় দেখা যায়নি! ইরান, আফগানিস্তান, ইন্ডিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া আর ফিলিপাইন হজ্ব মিশন যেখানে সার্বক্ষণিক তৎপর, সেখানে আমাদের আমলারা আমাদেরই কষ্ট সাধ্য কাজের ক্রেডিট নিয়ে চেয়ারে বসে টিভি চ্যানেল মাতিয়ে রাখেন! শুধু এটুকুই বিনীত অনুরোধ, সৌদি সরকার ঘোষিত ক্ষতিপূরণের টাকাটা যেন আমার ভাবী আর এতিম তিন সন্তানের কাছে ঠিক মতো পৌঁছায়!
গত শুক্রবার ১১ সেপ্টেম্বর’ ২০১৫ পবিত্র মক্কা আল মুকাররমায় সংগঠিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একশ বারজন নিহত হাজীর মধ্যে বাংলাদেশী চট্রগ্রামের চন্দনাইশ থানাধীন শাহছুফি বাড়ীর বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং চট্রগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় পার্টির নেতা আবুল কাশেম ছুফিকে ১৫ সেপ্টেম্বর`২০১৫ মঙ্গলবার মক্কা হেরাম শরীফে নামাজে জানাজা শেষে আল মুহাইছিন কবরস্থানে সমাধিস্ত করা হয়। উনি চট্রগ্রামের কর্ণফুলী এলাকায় থাকতেন।
আমাদের প্রতিবেদকের কথা হয়, মক্কা শরীফ থেকে ফিরে আসা মরহুমের ভাই বখতিয়ার মোহাম্মদ টিটু ‘র সংঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁদের পুরো পরিবার, আত্মীয়-স্বজনদের হাসি-কান্নার মায়াজালে একই সূতোয় গেঁথে রাখা প্রাণপ্রিয় বড় ভাইয়ের সাথে ঘটনার দিন জুমা`র নামাজের আগে শেষ বার কথা হয়। এরপর রাত আটটার দিকে অনেকের মোবাইল থেকেই ফোন আসতে দেখে এক পর্যায়ে তিনি ছোট ভাই ফোরকানের কল রিসিভ করে জানেন, বড় ভাই নিখোঁজ এবং মক্কায় দুর্ঘটনার কথা! বাড়িতে সান্ত্বনা দিয়ে পাগল প্রায় বখতিয়ার ওই অবস্হায়ই ডিউটি থেকে বেরিয়ে মক্কা-জেদ্দায় অবস্তানরত সবার মোবাইল নং. সংগ্রহ করে করনীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন ও নেন। হজ্ব কাফেলার কর্তা হাজী মনির, পাড়াত ভাই আহমদ শফি, হাজী আইয়ুব সব হাসপাতালে আহতদের মাঝে ভাইকে খুজেঁ না পাওয়ায় রিয়াদ দূতাবাসে যোগাযোগ করে জেদ্দা কনস্যুলেটের জনাব মাহমুদ সাহেবের মারফত পাওয়া মক্কা হজ্ব মিশনে বারবার ফোন ব্যর্থ হলে শনিবার দুপুর নাগাদ মক্কা হজ্ব মিশন বরাবর তিনি অনুরোধ করে একটি ফ্যাক্স করেন। জবাবে হজ্ব মিশনের জনাব জাহাঙ্গীর ও আলতাফ সাহেবের মাধ্যমে রাত দশটা নাগাদ মক্কায় নিহতের চাচা শশুর, বখতিয়ার এর তালঈ আবু সাঈদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ হয়। সবার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং সব আশার উপসংহারে শনিবার রাত এগারোটার পর নিশ্চিত হয় আবুল কাশেম ছুফি`র মৃত্যু সংবাদ ।
হজ্বের দিন পর্যন্ত হাজী ব্যতীত মক্কায় প্রবেশ সংরক্ষিত, এমনকি ভিসা বাতিলের সম্ভাবনা থাকা স্বত্বেও বখতিয়ার মোহাম্মদ ভাইকে শেষ বার বিদায় দিতে মক্কায় প্রবেশ করেন। আরো অনেক আত্মীয়-স্বজন জেদ্দায় অবস্থান করেও রিস্ক নিয়ে মক্কায় ঢোকেন নি। তিনি বলেন, “কারও বাহবা পাবার জন্য কিংবা ক্রেডিট নেওয়ার জন্য নয়; ভাইয়ার প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসায় আমাকে টেনে নিয়ে গেছে মক্কায়।” পরম মমতায় ভাইয়াকে শেষ গোসল দিয়ে নিজ হাতে কবরে শুইয়ে রিয়াদ ফেরত বখতিয়ারকে খুবই অগোছালো লাগছিল।
১৮ই সেপ্টেম্বর, শুক্রবার চন্দনাইশ সমিতি, মক্কার উদ্যোগে মরহুমের জন্য দোয়া মাহফিল ও ফাতেহা অনুষ্ঠিত হয়।
ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করে সৌদি এবং বাংলাদেশী কর্তৃপক্ষের সাথে পুরো লেনদেনের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব পরিবারের পক্ষে মক্কায়, হাউজ অফ ডোনান্ডস এর ম্যানেজার মরহুমের চাচা শশুরের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে।
বখতিয়ার বলেন, পুরো বিষয়টা মনিটরিং এবং প্রসেসিং এ যেন কোন টাল-বাহানার আশ্রয় নেয়া না হয়! সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যেন এ বিষয়ে সজাগ থাকে তার অনুরোধ করছি।
চাঁদপুর টাইমস : প্রতিনিধি/ এমআরআর/২০১৫