গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আতিকের পরিবার ও হাইমচরের রুহুল কুদ্দুছের পরিবারে এখন সুখের কান্না। রায়ের পর আশপাশের লোকজন ভিড় জমাচ্ছেন তাদের বাড়িতে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় নিহত হয় চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার আওয়ামী লীগ কর্মী আতিক উল্যাহ সরকার। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
আতিকের স্ত্রী লাইলী বেগম বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিচারের রায়ে আমরা বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি খুশি। কেন না, শেখ হাসিনা আমাদের আর্থিক সহযোগিতা করে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকার সুযোগ করে দিয়েছেন। তার সরকারের আমলেই ঘাতকদের শাস্তির রায়ের মাধ্যমে আমাদের চোখের পানি মুছে দিয়েছে। রায় শুনে আমাদের পরিবারের চোখে মানুষ যে পানি দেখেছে তা আনন্দের কান্না। দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা যেন শেখের বেটিকে অনেক দিন বাঁচাইয়া রাখেন। কান্না করতে করতে এমনটাই জানালেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আতিকের স্ত্রী লাইলী বেগম।’
অপরদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার সেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নিহত কুদ্দুছের পরিবার ঢাকায় থাকায় তার ভাই হুমায়ুন পাটওয়ারি রায়ে তার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘দেরিতে হলেও এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমার মা এ রায় দেখে যেতে পারলে আরও ভালো লাগতো। তার খুব ইচ্ছে ছিল রায় শুনে মৃত্যুবরণ করার।’
প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের মহাসমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মতিঝিল থানায় করা হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবনের আদেশ দেয়া হয়েছে।
বুধবার(১০ অক্টোবর) সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে অবস্থিত ঢাকার ১নং অস্থায়ী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নুর উদ্দিন এ রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১৯ আসামি হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম, আবদুস সালাম পিন্টু, মাওলানা মো. তাজউদ্দীন, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ, রফিকুল ইসলাম, উজ্জ্বল ওরফে রতন ও হানিফ।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফের আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে হাফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), মো. ইকবাল (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
এ সংক্রান্ত আগের প্রতিবেদন- কেমন আছেন গ্রেনেড হামলায় নিহত চাঁদপুরের দু’যুবকের পরিবার?
বার্তা কক্ষ
১০ অক্টোবর, ২০১৮